পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইয়াবাসহ মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে রক্ষার জন্য কঠোর আইন করা হলেও নেশা দ্রব্য হিসেবে চিহিৃত এনার্জি ড্রিংকে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। নীরব নেশা হিসেবে এসব এনার্জি ড্রিংকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ আসক্ত হয়ে পড়ছে। পাড়া-মহল্লার যে কোনো দোকানে সহজে নেশা জাতীয় উপকরণযুক্ত এনার্জি ড্রিংক দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। হাত বাড়ালেই তা পাওয়া যাচ্ছে। বিএসটিআই এসব এনার্জি ড্রিংকের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও আমদানি নিষিদ্ধ করলেও উৎপাদন এবং বিপণন বন্ধ হচ্ছে না। অবাধে বিক্রি হচ্ছে। কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ করা হলেও বাস্তবে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার কোনো উদ্যোগ নেই। নিষেধাজ্ঞা কেউ মানছে না। বাজারভর্তি বিভিন্ন নামের এনার্জি ড্রিংক যে কিশোর ও তরুণ সমাজকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে, তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। এসব এনার্জি ড্রিকে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন, অ্যালকোহল রয়েছে বলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি এতে যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রার উপাদান সিলডেনাফিল সাইটেটেরও উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পরীক্ষা করে বাজারে চালু এনার্জি ড্রিংকগুলোর মধ্যে ১৮টিতে এই উপাদান এবং ১২টিতে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন ও ৪টিতে অ্যালকোহল পেয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব এনার্জি ড্রিংক পান করলে হৃদরোগ, কিডনী বিকল ও ডায়বেটিসসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়াবহ ঝুঁকি রয়েছে। তারা বলছেন, ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষার্থে সরকারের উচিত এখনই এসব এনার্জি ড্রিংক নিষিদ্ধকরণে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া।
বাজারে বিদ্যমান ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশ্রিত এনার্জি ড্রিংককে সাপ্লিমেন্টারি ফুড হিসেবে আখ্যায়িত করে বৈধতা নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে দেখা গেছে, এসব ড্রিংক উৎপাদনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে, সরাসরি মাদক বিক্রি না করে এর মাধ্যমে নীরবে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া। বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় এসব ড্রিংকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো টনক নড়েনি। ফলে এনার্জি ড্রিংকের নামে অসংখ্য অনুমোদনহীন কারখানা গড়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে র্যাব অভিযান চালিয়ে কিছু কারখানা বন্ধ করে দিলেও পরবর্তীতে তা পুনরায় চালু হয়েছে। শুরুতে পাঁচ-ছয়টি কোম্পানি এনার্জি ড্রিংক বিক্রি করলেও এর চাহিদার কারণে এখন শতাধিক কোম্পানি চালু হয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, দেশের নামকরা বড় বড় কোম্পানিও এনার্জি ড্রিংকের ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। তারা টেলিভিশনেও ব্যাপকহারে এসব ড্রিংকের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। বিজ্ঞাপন থেকেও সচেতন মানুষ বুঝতে পারে, এসব ড্রিংক আদতে নেশা জাতীয়। তারা এনার্জি ড্রিংকের আড়ালে অ্যালকোহল ও অন্যান্য বিষাক্ত কেমিক্যাল, যা নেশা সৃষ্টি করে, মিশ্রিত করে আকর্ষণীয় বোতলে বিপনন করছে। কিশোর ও তরুণ শ্রেণী আকৃষ্ট হয়ে এসব ড্রিংক পান করছে। অনেকে আকর্ষিত হয়ে কৌতুহলবশত এনার্জি ড্রিংক পান করতে গিয়ে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এসব বোতলের লেবেলে ভাল ভাল উপাদানের কথা লেখা থাকলেও, প্রকৃত অর্থে এর কিছুই তাতে নেই। আছে স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর উপাদান। যে কোনো সফট ড্রিংকে ক্যাফেইনের মাত্রা ২০০ পর্যন্ত থাকলেও পরীক্ষায় দেখা গেছে, অধিকাংশ এনার্জি ড্রিংকে এর মাত্রা ৭০০-এর কাছাকাছি। এর ফলে লিভারে চর্বি জমে, হার্টবিট দ্রæত বেড়ে যায়, হাই বøাড প্রেসারের সৃষ্টি হয়, ঘুমের ব্যাঘাতসৃষ্টিসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়। এনার্জি ড্রিংকের এসব ক্ষতিকর দিক অনেক আগে থেকে জানা থাকা সত্তে¡ও বিএসটিআই ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়। বিএসটিআই-এর আচরণে মনে হচ্ছে, কেবল নামকাওয়াস্তে এসব ক্ষতিকর এনার্জি ড্রিংক নিষিদ্ধ করে দায় সারছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের তরুণ সমাজকে সরাসরি মাদকাসক্ত করার পরিবর্তে সুকৌশলে এনার্জি ড্রিংক পান করিয়ে মাদকাসক্তির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তরল নেশায় তাদের আসক্ত করে ফেলা হচ্ছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এসব তরল নেশার ক্রেতার বেশিরভাগই কিশোর ও তরুণ শ্রেণী, যারা দেশের ভবিষ্যত। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, একশ্রেণীর ব্যবসায়ী নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মকে মাদকাসক্তির মাধ্যমে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, কোনো ধরনের এনার্জি ড্রিংকই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এগুলো এক ধরনের ¯েøা পয়জন বা ধীর গতির বিষ, যা ধীরে ধীরে মানুষের জীবনকে গ্রাস করে। তরুণ শ্রেণীর উদ্যম ও কর্মশক্তিকে ধ্বংস করে দেয়। আর যারা মধ্যবয়স্ক বা বয়স্ক তাদের মৃত্যু ত্বরান্বিত করে। আমরা মনে করি, দেশে সব ধরনের এনার্জি ড্রিংকের উৎপাদন স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া জরুরি। যে পানীয় নেশা ধরায়, তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়, তা কোনোভাবেই উৎপাদন করতে দেয়া যেতে পারে না। এ ব্যাপারে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব ড্রিংক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।