Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য চুরি

| প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্পর্শকাতর তথ্য চুরি করে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। গতকাল প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগের পরিচালক পরিচয় দিয়ে জনৈক নাসির আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে দেশের সব তফশিলি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পরিচয় ও নাম ঠিকানা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো যাচাই ব্যতিরেকে প্রতারক চক্রের ই-মেইলে তাদের চাহিদা অনুসারে তথ্যাবলী পাঠিয়ে দেয়ার পর জানা যায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয় থেকে এ ধরনের কোন তথ্য চাওয়া হয়নি এবং নাসির আহমেদ নামে সেখানে কোনো পরিচালক বা কর্মকর্তা নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১১ কোটি ডলারের রিজার্ভ চুরির প্রায় তিনবছর পরও সেই ঘটনার সব রহস্য উৎঘাটন করতে পারেনি সরকার। শ্রীলঙ্কা থেকে মাত্র ২ কোটি ডলার ফেরত আসলেও ফিলিপাইনে বেহাত হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফ্ট কোড হ্যাক করে শত মিলিয়ন ডলার চুরির চাঞ্চল্যকর ঘটনা বিশ্বের কাছে এবং দেশের মানুষের কাছে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি যে নিরাপত্তাহীনতা ও আস্থাহীনতার সংকট সৃষ্টি করেছিল, তা থেকে উত্তরণে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা না গেলেও তথ্য চুরির ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্পর্শকাতর তথ্য সংরক্ষণ তথা গোপণীয় তথ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে গুরুতর ফোঁকড় ধরা পড়ল।
বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। ব্যবসায়-বাণিজ্য, ব্যাংকিং লেনদেন এবং সামাজিক আদান-প্রদান ক্রমবর্ধমান হারে তথ্যপ্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। আমাদের সরকার একদিকে তথ্য অধিকার, আইসিটি ও ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে নতুন নতুন নানাবিধ কঠোর আইন তৈরী করে গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মত প্রকাশ ও তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারকে ক্রমে জটিল করে তুললেও ব্যাংকিং খাতের তথ্যব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের এসব আইন তেমন কোন কাজে আসছেনা। ডিজিটালাইজেশন শুরুর আগে থেকেই এনালগ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা গায়েব করা হয়েছে। ডিজিটাল যুগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফ্ট কোড হ্যাক করে একসাথে প্রায় হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাওয়ার পর সেই টাকা উদ্ধারের নামে দেশে-বিদেশি তদন্ত মিশনের পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করার পরও কোন ইতিবাচক ফল দেখা যায়নি। রির্জাভ চুরির অভিজ্ঞতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সতর্কতা বা দক্ষতাবৃদ্ধিতে তেমন কোনো ফল দিয়েছে বলেও মনে হয়না। তা না হলে কেউ একজন ভ‚য়া পরিচয় ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তফশিলি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডিদের তথ্য হাতিয়ে নিতে পারত না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের ভূয়া পরিচয় ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তথ্য চুরির পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী পররাষ্ট্র সচিবের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকে অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। পররাষ্ট্র সচিবের পাঠানো চিঠির আগেই এ ধরনের ঘটনার একটি নির্ভরযোগ্য তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাঠানোর আগে গত এক মাসেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ইতিপূর্বে রিজার্ভ চুরির ঘটনা বিদেশী গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার আগ পর্যন্ত তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে প্রায় ৩ সপ্তাহ স্থিত থাকার পর চুরি হওয়া টাকা ক্যাসিনোতে খরচ হয়েছিল। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়া হলে এই টাকা ফেরত পাওয়া হয়তো সম্ভব ছিল। কি কারণে, কার স্বার্থে কাদের অবহেলায় তাৎক্ষণিক এবং গত দুই বছরেও রির্জাভ চুরির টাকা ফেরত ও দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না, এ বিষয়টি এখনো বেশ অস্বচ্ছ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বচ্ছতা, নজরদারিসহ আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নের সক্ষমতার উপর দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের অনেক কিছু নির্ভর করে। দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের হাল হকিকত নতুন করে বর্ণনার প্রয়োজন নাই। তারই বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রফতানি বাণিজ্যে। অনিয়ন্ত্রিত লুটপাটের মধ্য দিয়ে প্রায় সবগুলো সরকারী ব্যাংক দেউলিয়া হতে বসেছে। জনগনের রাজস্বের টাকায় এসব ব্যাংক বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে সরকার। সেই সাথে দেশ থেকে প্রতিমাসে হাজার হাজার কোটি পাচার হয়ে যাওয়ার পেছনেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট তফশিলি ব্যাংকগুলোর দায়-দায়িত্ব রয়েছে। বিনিয়োগ ও ব্যবসায় বান্ধব পরিবেশ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে বড় বড় ঋণ জালিয়াতি, রিজার্ভ চুরি ও তথ্য চুরির মত ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রকৃত দোষী ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলে ব্যাংকিং সেক্টরে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং লুটপাট বন্ধ করা সম্ভব নয়।



 

Show all comments
  • Nannu chowhan ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:২৫ পিএম says : 0
    If foreign national is employed our Bangladesh Bank(central bank) it will be alwayes sabotage & our finencial system at great risk...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ ব্যাংক

২৫ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন