পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি এবং ১১ দফা লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে বহুল আলোচিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্টসহ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যারা ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা ছাড়া বাকি সব দলই রয়েছে। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকারে গঠিত এই ঐক্যের ঘোষণা দেয়ার পরপরই বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন অভিনন্দন জানিয়েছেন। মানুষের মাঝেও দেখা দিয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। বিশেষ করে ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো প্রবীন রাজনীতিবিদ, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের মতো সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত এই ঐক্য নিয়ে আগ্রহ এখন সর্বমহলে।
তবে বিতর্কিত কথাবার্তা ও প্রস্তাব করে এই ঐক্যে আসতে না পেরে ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি. চৌধুরী। ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, বিএনপির স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ করে দেয়াসহ নানা অভিযোগ করছেন তিনি। এই নিয়ে একটি টেলিফোন আলাপও গত রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। গণমাধ্যমেও তা প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে তিনি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ঐক্যে বিকল্পধারাকে না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিকল্পধারাবিহীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের ঐক্য বলেও মন্তব্য করেন। একইদিনে তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে বিএনপিকে পরিবারতান্ত্রিক দল এবং বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে জামায়াতকে সাথে রাখার জন্য সমালোচনা করেন। তার এসব বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যমে পাঠকরা নানারকম মন্তব্য করতে থাকেন। প্রতিক্রিয়া দেখান বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতারাও। দলটির এমন বিতর্কিত অবস্থানের কারণে বিকল্পধারা ছেড়ে ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহ আহমেদ বাদল ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক জানে আলম হাওলাদারকে বহিষ্কার করেছে বিকল্পধারা।
ঐক্য প্রক্রিয়ার বিভিন্ন সভায় বিকল্পধারা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছিল বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু হলেও এখনো যে কেউ চাইলে এতে যুক্ত হতে পারে বলেও জানান তিনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, ‘বিকল্পধারা ও মাহি বি. চৌধুরী যে সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। তার প্রমাণ হচ্ছে তাদের ছাড়া জাতীয় ঐক্য গঠিত হওয়ায় তারা এখন বলছে সরকারি জোটে যেতে তাদের কোন অসুবিধা নেই। এ থেকেই বোঝা যায় তারা এতোদিন সরকারের এজেন্ট হিসেবে ঐক্য প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করেছে। ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রতিটি সভায় কোন না কোন অজুহাত তুলে এটিকে প্রলম্বিত করেছে। ঐক্য নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে মাহি বি. চৌধুরীর এমন কথার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারও যেমন বলছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ষড়যন্ত্র করছে বিকল্পধারাও একই কথা বলছে। সুতরাং সরকারের সুর ও মাহি সাহেবদের সুর একই। মূলত ঐক্যফ্রন্ট গঠনে বাধা দিতে তারা ষড়যন্ত্র করছিল। সেটি ব্যর্থ হওয়ায় তারা এখন সরকারের ভাষায় কথা বলছে। আসন ভাগাভাগির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মাহি বলে থাকেন কোন এক দল যেন ১৫১টি আসন না পায়। আমার কথা হচ্ছে জনগণ যদি বিএনপিকে ১৫১টির বেশি আসনে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে তাতে মাহির আপত্তি কিসে?’
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ঐক্য প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই জাতীয় ঐক্য যাতে গঠিত না হয় সেজন্য ষড়যন্ত্র করেছে বিকল্পধারা। ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রতিটি বৈঠকেই কোন না কোন ইস্যু তুলে, অজুহাত দেখিয়ে বিলম্বিত করেছে এই প্রক্রিয়াকে। দলটির একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, বিকল্পধারা বিশেষ করে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি. চৌধুরী সরকারের এজেন্ট হিসেবে ঐক্য প্রক্রিয়া যাতে সফল না হয় এজন্য কাজ করেছে। কিন্তু প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে এখন ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা বলছে।
নারায়ণগঞ্জ ২ আসনের বিএনপির এমপি প্রার্থী মাহমুদুর রহমান সুমন বলেন, ‘সরকারের এজেন্ট হিসেবে বিকল্পধারা ও বি. চৌধুরী জাতীয় ঐক্য যেন না হয় সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। কিন্তু তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায় এখন তারা উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। সুমন বলেন, ১৬ কোটি মানুষ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে গণতান্ত্রিকদলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর এই ঐক্য দুষ্টচক্রমুক্ত হওয়ায় সকলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন, খুশী হয়েছেন। আগামীতেও যেন কোন দুষ্টচক্র এর সাথে জড়িত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতেও তিনি ঐক্যের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।’
জামায়াত ইস্যু এবং আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিকল্পধারার বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, যে বি. চৌধুরী আজকে জামায়াতকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তিনি সেই জামায়াতের সাথেই সংসদে ছিলেন, মন্ত্রী সভায় ছিলেন, এমনকি জামায়াতের ভোটেই বি. চৌধুরী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এখন তারা সরকারকে খুশী করতে গিয়ে সরকারের সুরে/ভাষায় কথা বলছেন।
জামায়াতের আপত্তির বিষয়ে আহমেদ আজম খান বলেন, ‘১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি যখন সরকার গঠন করে তখন বি চৌধুরী বিএনপির উপনেতা ছিলেন। তখন কোন অভিযোগ ওঠেনি। ২০০১-০৬ যে ক্যাবিনেটে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখনও জামায়াত তার ক্যাবিনেটে ছিল। এমনকি মাহি নিজেও যখন এমপি ছিল তখনও জামায়াত ক্যাবিনেটে ছিল। তখন কোন আপত্তি করেনি। এখন সরকারের হয়ে তারা ঐক্য ঠেকাতে এসব কথা বলছে।’
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ‘বিকল্পধারা ও বি. চৌধুরীরা নিজেদেরকে মহামূল্যবান মনে করেছিল। কিন্তু মূল্য বাড়াতে গিয়ে তারা এখন মূল্যহীনে পরিণত হয়েছেন। তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, আল্লাহর রহমত যে এই ঐক্যে বিকল্পধার, মাহি বি. চৌধুরী নাই। তারা না থাকায় ঐক্যফ্রন্ট বেঁচে গেছে। তাদের চরিত্র কেমন এটি জনগণ খুব ভাল করেই জানে। বি. চৌধুরী যখন মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন জামায়াতের মন্ত্রী-এমপি ছিল। তখনতো তিনি এই বিষয়ে কিছু বলেননি। এমনকি জাময়াতের ভোটেও তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। আর এখন সরকারের সাথে আতাত করে সরকারের ভাষায় কথা বলছেন। আসলে তাদের কথাবার্তা ও আচরণ ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।’
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই আসান ভাগাভাগি নিয়ে নানা কথা প্রচারিত হতে থাকে গণমাধ্যমে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিএনপিকে ১৪৯টি আসন এবং বাকি ১৫১টি আসন অন্যদের দেয়ার জন্য চাপ দিতে তাকে বিকল্পধারা। নিজ দলের জন্য ১২০টি আসনও মাহি দাবি করেন বলে ঐক্য প্রক্রিয়ার বেশ কয়েকজন নেতা জানান। তাদের এই দাবির বিষয়ে এখন দলটির নেতাকর্মীরা বলেন, যে দলে তিনজন ছাড়া চারজন নেতা খুঁজে পাওয়া যায় না সেই দল ১০০-১২০টি আসন দাবি করে। তারা আরও বলেন, এখন তাদের সামনে সুযোগ আছে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার। সেটি করে দেখাক কতটিতে তারা জিততে পারে। বিএনপিকে ব্যক্তিতান্ত্রিক দল বলায় তৃণমূল বিএনপির নেতারা মাহি বি. চৌধুরীকে আয়নায় নিজের চেহারা দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, নিজের দলটি এক ব্যক্তির কিনা, কারা কারা আছে? মাহি কোন পজিশনে আছে? সেটা যেন মাহি একটু আয়নায় দেখেন।
নেত্রকোণা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আনোয়ারুল হক বলেন, ‘বদরুদ্দোজা চৌধুরী সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু তিনি বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেন। সরকারকে খুশী করতে জামায়াত বিরোধী কথা বলছেন। যে দলের ১০টি আসনে প্রার্থী দেয়ার ক্ষমতা নাই সেই দল বিএনপির মত একটি বড় দলের সাথে ১০০ আসন নিয়ে দরকষাকষি করে। এখন ৩০০ আসনেও প্রার্থী দেয়ার সুযোগ আছে কি করতে পারে দেখাক।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি সকলকে নিয়েই ঐক্য গড়ে তুলতে চেয়েছে। সব সময়ই আন্তরিক ছিল। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।