Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেষ মুহূর্তে আন্দোলন চায় না আওয়ামী লীগ

একদিকে বিরোধীদের সমাবেশে ছাড় অন্যদিকে ধরপাকড়

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

নির্বাচনের আগে কোন ধরণের রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক আন্দোলন চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সে অনুযায়ী কৌশল হাতে নিয়েছে তারা। একদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে মাঠে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া, আরেকদিকে নেতাকর্মীদের ধরপাকড় অব্যাহত রাখা। ভয়-ভীতি দেখানো হবে যেন সুস্থিরভাবে তারা গুছিয়ে কিছু করতে না পারে। তবে রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালন করেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হবে না। আর তফসিল ঘোষণার পর আন্দোলন সামাল দিতে নির্বাচনকালীন সরকারের পরিধি ছোট না-ও করা হতে পারে।
দলটি মনে করে, আন্দোলন হলে তা দমনের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে করে সহিংসতা হতে পারে। নির্বাচনের আগে যে কোন সহিংসতা ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। ষড়যন্ত্রকারীরা অথবা বিদেশী শক্তিগুলো নির্বাচনের ব্যাপারে নাক গলাবে। ক্ষমতার শেষ দিকে এ ধরণের সমস্যা হলে আগামী নির্বাচনে সহজে জয় পাওয়া যাবে না। এবং অরাজক পরিস্থিতির মাধ্যমে দেশে এক-এগারো মত ভিন্ন কিছু হতে পারে। সে সুযোগ ক্ষমতাসীনরা দিতে চায়।
সেজন্য নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মত অরাজনৈতিক দাবি নিয়েও আন্দোলন হলে তা সুন্দরভাবে মোকাবেলা করা এবং সহজে সমাধান করা হবে। এজন্য কোনভাবেই সংঘর্ষ বা সহিংসতা কিংবা পুলিশ দিয়ে দমন নিপিড়নের পন্থায় যাবে না আওয়ামী লীগ। যাতে করে ভোটের মাঠে কোন প্রভাব না পড়ে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং অন্য কেউ যেন কর্মসূচী দিয়ে মাঠে অবস্থান নিতে না পারে তাই নিয়মিত কর্মসূচীর মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় রাখা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে। দলের ইশতেহার, প্রার্থী বাছাই ও প্রচারণার সকল কাজও শেষের দিকে। শেষ মুহুর্তে কোন ঝামেলা চায় না ক্ষমতাসীনরা। আর কিছুদিন পর নির্বাচনের তফসিল। বিরোধীরা চাচ্ছে এ সময় যে কোন ধরণের সংকট তৈরী করতে। কিন্তু তাদের হাতে আন্দোলনের কোন ইস্যু তুলে দেয়া হবে না। আর বিরোধী দল দুর্বল করতে নিয়মিত কর্মসূচী গ্রহণের মাধ্যমে দলের কর্মীদের মাঠে রাখা হবে।
দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপি, ড. কামাল ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া চেষ্টা করছে নির্বাচন বানচাল করতে। তফসিল ঘোষণার পর তারা নির্বাচনকালীন সরকারের দুর্বলা কাজে লাগিয়ে আন্দোলন করার কৌশল হাতে নিয়েছে। কিন্তু তাদেরকে সে ধরণের সুযোগ দেয়া হবে না।
সূত্র বলছে, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে মাঠ পর্যায়ে সমাবেশ করতে কোন বাধা দেয়া হবে না। কিন্তু তারা যেন কোন কর্মসূচী সফল করতে না পারে সেজন্য নেতাকর্মীদের ধরপাকড় চালানো হবে। দলের নেতাদের বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হবে। ব্যক্তি ধরে তাদের সমালোচনা করা হবে এবং তা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে ইমেজ নষ্ট করার জন্য। তফসিল ঘোষণার পর বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়ের হলে তা সমালোচনার মুখে পড়বে তাই তফসিলের আগেই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দেয়া হয়েছে। যাতে করে তফসিলের পর তাদের গ্রেফতার অব্যাহত রেখে চাপে রাখা যায়।
দলের বিশেষ সূত্রে জানা যায়, কোন আন্দোলন হলে দলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। অনেক বড় বড় নেতা, মন্ত্রী চুপছে যান। নিরাপদ সড়কের দাবিতে হওয়া আন্দোলনের সময় নেতাদের মধ্যে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নেতাদের উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছেন না। সেজন্য এবার নির্বাচনকালীন সরকারের পরিধিতে বড় কোন পরিবর্তন আসবে না। সকল কিছু নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এছাড়া দলটি মনে করছে, তফসিলের পর আন্দোলন হলে এবং তা দমন করতে গেলে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হবে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। এবার নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোন সমস্যা হোক তা চায় না ক্ষমতাসীনরা। তাই আন্দোলন না করলে নির্বাচনী প্রস্তুতি ও অন্য সকল কাজের জন্য বিরোধীদের যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। দলের বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বিরোধী দলের প্রভাবশালী নেতাদের ব্যক্তিগতভাবে কিছু সুবিধা দেয়া হবে যেন তারা নির্বাচনমুখি হয়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় ঐক্যের সভা-সমাবেশ করতে কোন ধরণের বাধা দেয়া হবে না। তাদের কর্মসূচীর কোন পাল্টা কর্মসূচীও গ্রহণ করবে না আওয়ামী লীগ। তাদের কর্মসূচী পালনে বাধা না দিতেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।
দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কর্ণেল (অব.) ফারুক খান ইনকিলাবকে বলেন, নতুন জোট নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এটা রাজনীতির জন্য ভাল। কিন্তু নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে তা খারাপ। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেউ কোন ষড়যন্ত্র করে সফল হবে না।
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিরোধী সকল দলকেই সভা-সমাবেশ করার বিষয়ে কোন বাধা না দিতে পুলিশ এবং দলের কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীও আওয়ামী লীগ দেবে না। আমরা কোন সহিংসতা চাই না। তবে কেউ সহিংসতা করলে ছাড় দেয়া হবে না।



 

Show all comments
  • ইয়াসমিন ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:২৫ এএম says : 1
    যা হবার এই শেষ মুহূর্তেই হবে
    Total Reply(0) Reply
  • তমা ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:২৫ এএম says : 0
    তাদের চাওয়া না চাওয়ায় কি যায় আসে ?
    Total Reply(1) Reply
    • রানা ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:৩৯ এএম says : 4
      সবাই সহজেই সবকিছু পেতে চায়, ঝামেলা কেউই চায় না।
  • Alamin Sheikh ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৪৭ পিএম says : 1
    এবার আন্দোলন হবে,,জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য,,দেশ আওয়ামীলীগকে ইজারা দেওয়া হয় নাই,, দেশের মালিক জনগণ,,
    Total Reply(0) Reply
  • Md Jahidul Islam ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৪৮ পিএম says : 1
    আন্দোলন চায় না তো নিরপেক্ষ নির্বাচন দিক
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi Jamal ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৪৯ পিএম says : 0
    তাহলে কি চায় .................
    Total Reply(0) Reply
  • ১৪ অক্টোবর, ২০১৮, ৬:২১ পিএম says : 3
    কিছুই করতে পারবে না বি এন পি জোট. শেষ মুহুতে বি এন পি কয়েক টুকরো হবে নিশ্চিত.
    Total Reply(0) Reply
  • ১৪ অক্টোবর, ২০১৮, ৬:২৮ পিএম says : 2
    নিবাচন যে ভাবে হোক না কেন বি এন পি জোট চরম ভাবে পরাজিত হবে.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ