২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
পানি না-থাকলে শরীরটাই থাকবে না! আমাদের কোষ-কলার কাজকর্ম সঠিকভাবে চালিয়ে যেতে পানি অপরিহার্য। শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে, রেচনক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে, সুষ্ঠভাবে পাচনক্রিয়া পরিচালনা করতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, অস্থিসন্ধির নমনীয়তা রক্ষা করতে ও সর্বোপরি মস্তিস্ক রক্ষা করার জন্য পানি অপরিহার্য। এছাড়া, বয়স ধরে রাখতে ও ত্বক টানটান রাখতে পানির ভূমিকা অনস্বীকার্য। এককথায় বলা যায়, পানি ছাড়া আমাদের দেহযন্ত্রটি অচল হয়ে পড়বে।
দৈনিক কতটা পানি প্রত্যেকের পান করা উচিত? সাধারণত দিনে প্রত্যেকের তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। অবশ্য কে কোন ধরনের জলবায়ুতে বাস করছেন, কেমন ধরনের কাজ করছেন তার ওপরে পানিপানের অভ্যাস ও পরিমাণ নির্ভর করে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে মানুষের ঘাম হয় বেশি। ফলে অনেকটা পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। অন্যদিকে, যাঁরা শীতপ্রধান দেশে বাস করেন, তাঁদের ঘাম হয় কম। তাঁদের পানি পানের পরিমাণ গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বসবাসকারী মানুষের চাইতে নিশ্চয় কম হবে। আবার কিছু মানুষ সারাদিন এসিতে থাকেন। শরীর থেকে ঘাম ঝরে না একবিন্দু। অথচ কিছু লোককে দিনভর রৌদ্রে ঘাম ঝরিয়ে কাজ করতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই শ্রেণির মানুষকে পানি একটু বেশিই পান করতে হবে।
তাপমাত্রা বেড়ে ৪৫ ডিগ্রি হয়ে গেলে দৈনিক ৬ থেকে ৭ লিটার পানি পান করুন। সম্প্রতি এই ধরনের একটা মেসেজ সোশ্যাল মিডিয়া এবং হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার হচ্ছে। এই তথ্য কতটা সঠিক? দৈনিক ৬ থেকে ৭ লিটার পানি পান করা কি আদৌ সম্ভব? বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক না-কেন, ঘাম খুব বেশি হলে বড়জোর চার লিটার পানিপান করা যেতে পারে। এর চাইতে বেশি পানি পানের কোনও বাস্তব কারণ নেই।
ছোটোরাও বাইরে ঘোরাঘুরি করে, ছোটাছুটি করে। গরমের দিনে তাদের কতটা পানি পান করা দরকার? ছোটো মানে কতটা ছোটো, সেটা দেখতে হবে। সাধারণভাবে স্কুলে যায় এমন বাচ্চাদের সম্পর্কে বলা যেতে পারে। স্কুলগোয়িং বাচ্চাদের অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেখান সেখান থেকে পানি না খায়। সেক্ষেত্রে পানিবাহিত নানা অসুখে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
বিশ্বের সমস্ত উন্নত দেশে সরকারেরই দায়িত্ব থাকে জনগণকে শুদ্ধ পানি সরবরাহ করার। এ দেশে বহু জায়গায় কোনও কোনও বাড়িতে পানি পৌঁছয় না! সেখানে শুদ্ধ পানি সরবরাহ করা তো আরও বড় চ্যালেঞ্জ। উন্নত দেশে শহরে যে সমস্ত উৎস থেকে পানি সরবরাহ হয়, সেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়। এমনকি, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন-এর বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী সেই পানির গুণমানের পরীক্ষা হয়। আমাদের দেশে সেরকম নজরদারির ব্যবস্থা কোথায়? ফলে এ দেশের মানুষের মধ্যে হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-ই, টাইফয়েড, কলেরা, ডায়ারিয়ার মতো পানিবাহিত রোগ হয়। নজরদারির কারণেই উন্নত দেশের মানুষের মধ্যে এই রোগগুলো কম দেখা যায় আর এ দেশে বেশি হয়।
খুব সহজে শুদ্ধ পানি পাওয়ার একটাই উপায় আছে। পানি ফুটিয়ে পান করা। রাতে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। এতে পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া মারা পড়বে। তারপর সারারাত একটা পাত্রে সেই পানি রেখে ঠান্ডা করতে হবে। এর ফলে পানিতে থাকা অজৈব পদার্থগুলো পানির নিচে থিতিয়ে পড়বে। সকালে পাত্রে রাখা পানির নিচের অংশটুকু রেখে বাকিটা ছেঁকে পান করলেই চলবে। এ ছাড়া, যাঁদের বাড়িতে ওয়াটার পিউরিফায়ার রাখার সামর্থ্য আছে, তাঁরা নিজের উদ্যোগে রিভার্স অসমোসিস প্রযুক্তিযুক্ত ওয়াটার পিউরিফায়ার রাখতে পারেন। তবে এই পদ্ধতি খরচসাপেক্ষ এবং অনেকটা পানি নষ্ট হয়। সাধারণ পিউরিফায়ারে নোংরা আটকানোর ক্ষমতা থাকলেও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু ধ্বংস ও প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা নেই।
অনেকের ধারণা, খাওয়ার আগে পানি পান করলে খাবার হজমে ভালো সাহায্য করে। সেরকম কোনও ব্যাপার নেই। অনেকে রোগা হওয়ার জন্য প্রতিবার খাওয়ার আগে অনেকটা পানি পান করেন। এর ফলে জিভ চাইলেও অতিরিক্ত খাবার খাওয়া যায় না তবে খাবার খাওয়ার অন্তত আধঘন্টা পর পানি পান করলে খাদ্য হজমে সুবিধা হয়।
কেউ কেউ বলেন, খাবার সময়ে পানি পান করলে নাকি খাদ্য ভালো হজম হয় না। এরকম নির্দিষ্ট কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। খাবার খাওয়ার সময় সামান্য পরিমাণে পানি পান করাই যায়। মুশকিল হল, অনেকেই সময়ের অভাবে তাড়াহুড়ো করে খান। পানি দিয়ে খাবার গিলে নেন। এমন অভ্যাস ভালো নয়। খাবার চিবিয়ে খেলে তবেই হজম দ্রুত হবে। কারণ খাওয়ার সময় মুখগহ্বরে থাকা নানা গ্রন্থি থেকে এনজাইম ক্ষরিত হয়ে খাবারে মেশে। এছাড়া, পাকস্থলীসহ পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অ্যাসিড, এনজাইম ক্ষতি হয়। খাবার খেতে খেতে প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে সেগুলোর কার্যকারিতা বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ফলে খেয়ে পানি খেতে নেই এমনটা অনেকে বলে থাকেন। তবে, আলাদা করে কোনও কারণ নেই। ফলও তো আসলে খাবার। খাবারের সঙ্গে হজমে সাহায্যকারী অ্যাসিড, এনজাইমগুলো মিশতে হবে। সে-কারণেই অনেকে ফল খাওয়ার পরেই পানি খেতে নিষেধ করেন। তবে সামান্য পানি পান করাই যায়। পানি খুব কম পান করলে যে কোনো কাজেই খুব দ্রুত ক্লান্তি আসবে, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দেবে। হজমে সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, দ্রুত জরা আসা, নার্ভের অসুখ, কিডনি, হার্টের সমস্যা-নানা ধরনের রোগ হতে পারে।
পানি কম খেলে যেমন বিপদ, তেমনি বেশি খাওয়াও ভালো নয়। অতিরিক্ত যে-কোনো কিছুই শরীরের পক্ষে খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনের বেশি পানি পান করলে হাইপোথার্মিয়া দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে, সোডিয়াম পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়, পেটের ও লিভারের সমস্যা দেখা দেয়, ব্রেনসহ সারা শরীরের কোষ ফুলে যায়। এছাড়া, হার্টে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, বেড়ে যায় কিডনির কাজ। দীর্ঘদিন এমন হতে থাকলে হার্ট ও কিডনির অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
হার্টের ও কিডনির সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে পানি পান করুন। বিশেষ করে কিডনির অসুখ থাকলে রোগীকে সারাদিনে হিসাব করেই পানি পান করতে হবে। কেউ ঠান্ডা পানি পান করতে ভালোবাসেন, কেউ আবার গরম পানি। চীন দেশে আগে লোকে উষ্ণ পানিই পান করত। আর উষ্ণ পানি পান করে তাঁদের জাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, এমন খবর এখনও পর্যন্ত নেই। তা বলে ফোসকা পড়া গরম পানি নিশ্চয় কেউ পান করেন না! আর ঠান্ডা পানির প্রসঙ্গে বলা যায়, বহু মানুষ ঠান্ডা পানি পান করতে পছন্দ করেন। আসলে কে, কেমন পানি পান করবে তা মানুষ এবং একটা জাতির অভ্যাসের উপর নির্ভর করে।
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।