Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

শেষ

ইসলামী রাষ্ট্র ও অন্যান্য শাসনব্যবস্থার মৌলিক পার্থক্য এটাই যে, ইসলামী রাষ্ট্রে পদস্ত ব্যক্তিবর্গ বিশ্বস্ত, সংরক্ষণকারী ও বন্টনকারী হিসেবে পালন করেন, পক্ষান্তেরে সাধারণত অন্যান্য রাষ্ট্রব্যবস্থায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ সরকারী উপকরণ ও সম্পদকে ব্যক্তিগত বস্তুর ন্যায় নিজ স্বর্থে ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব একটা কুণ্ঠাবোধ করেন না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রাষ্ট্রীয় সম্প ও উপকরণের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজ কর্মপদ্ধতি এভাবে বর্ণনা করেছেন: আমি না তোমাদেরকে কোন কিছু দেয়ার ক্ষমতা রাখি, আর না তোমাদেরকে কোন কিছু থেকে বঞ্চিত করতে পারি। আমি তো ড্রাফে খাযানার দায়িত্বশীল। যেখানে সম্পদ খরচের হুকুম হয় আমি সেখানে সম্পদ খরচ করি।
ইসলামী শিক্ষার আলোকে কারো পক্ষে একজন সৎ ও আদর্শ সরকারি কর্মকর্তা বা দায়িত্বশীল হওয়া তখনই সম্ভব, যখন সে নিজ কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করার মাধ্যমে নিজ মাসহারা ও পারিশ্রমিককে হালাল মনে করবেন।অনেকে সময় এমন দেখা যায় যে, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীগণ নানা বাহানায় কর্তব্য পালনে অবহেলা করে বা কাজটি অস্পূর্ণ করে ফেলে রাখে। এদেরকে যে বেতন বা বিনিময় দেয়া হয় তা গ্রহণে এরা অপরাধী। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় শ্রমদান ও পারিশ্রমিককে হালাল মনে করে গ্রহণ করার বিষয়ে অনেক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রত্যেককে শ্রমদান ও পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করার শিক্ষা দিতেন। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় কর্মক্ষম লোকদের কাজকর্ম না করে অলস বসে থাকা বা অন্যায়ভাবে রিযিকের অন্বেষণ করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। উমর (রাঃ) বলেন ঃ তোমাদের কেই যেন রিযিক অন্বেষণ থেকে বসে পড়ে এ দু’আ না করে যে, আয় আল্লাহ! আমাকে রিযিক দান করুন। তোমাদের তো জানা আছে, আসমান স্বর্ণ- রুপা বর্ষণ করে না, বরং আল্লাহ মানুষদেরকে পরস্পরের মাধ্যমে রিযিক প্রদান করেন। মাসহারা এবং কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান প্রসঙ্গে কুরআনে কারীমের নির্দেশনা হচ্ছে; মানুষ তাই পায়, যা সে করে। উপার্জনকে হালাল মনে করে গ্রহণ করাও সরকারি কর্মকর্তাদের কর্তব্য।
উপরোক্ত আলোচনায় পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ইসলামী শিক্ষার আলোকে সরকারি পদ ও সম্পদের উদ্দেশ্যই হলো জনগণের সেবা করা। সরকারি পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে হলে তার মধ্যে আবশ্যক কিছু গুণাবলি বিদ্যমান থাকতে হবে। যেমন জ্ঞান, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা ইত্যাদি। ইসলাম সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে ঘুষ ও উপঢৌকন গ্রহণ, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অপকর্ম থেকে নিষেধ করেছে। ইসলাম এ শিক্ষাও দিয়েছে যে, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সবসময় দেশের ও রাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে হবে এবং সরকারি সম্পদকে নিজ মালিকানাধীন সম্পদের ন্যায় মনে করা ও নিজ প্রয়োজনে ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। অতএব রাষ্ট্রীয় পদ ও জাতীয় সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কর্তব্য হলো, তারা সুন্নাহ থেকে সরকারি চাকুরির নীতি মালা অনুধাবন করবেন এবং সে অনুসারে আমল করবেন, বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায়কে ইসলামী আদর্শের আলোকে গড়ে তুলবেন, তবেই রাষ্ট্রব্যবস্থায় যে অনিয়ম, সুপারিশ, ঘুষ গ্রহণ ও অবৈধ পন্থায় সম্পদের পাহাড় গড়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে তার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ