চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
তিন
কুরআন মাজিদে পদ ও সম্পদের দায়িত্ব অর্পণের মৌলিক নীতি বর্ণনা করা হয়েছে: নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আমানতকে তার উপযুক্ত ব্যক্তিদেও কাছে পৌছে দিতে হুকুম করছেন। কুরআনে মাজীদের আয়াতের আলোকে পদ ও দায়িত্ব গ্রহণের জন্য বুনিয়াদি শর্ত হলো যোগ্যতা। এই যোগ্যতার বিষয়টি হাদিসে শরীফে আলোচিত হয়েছে এই শব্দে: লোকদের জন্যে বিজ্ঞ প্রতিনিধি আবশ্যক। ‘ উরাফা’ শব্দটি ‘ আরীফ’এর বহুবচন।‘ধারীফ’ শব্দের ব্যাখ্যায় ইবনে মানযূর আফ্রিকী লিখেছেন:আরীফ ঐ ব্যক্তি গুপ্রশাসন সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে অবগতির কারণে প্রতিষ্ঠিত ও বরণীয়। সরকারি পদ ও সম্পদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা তখনই সম্ভব হবে, যখন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যোগ্যতা নিশ্চিত হবে। যাকে দায়িত্ব প্রদান করা হবে তার মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা পদ সম্পর্কে অবগতি ও পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তবেই সে এ পদ বা সম্পদেও দায়িত্ব যথাযথ সংরক্ষণও করতে পারবে। ইফসুফ আ. মিসরের বাদশাহর কাছে ঐ দেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্ব প্রত্যাশা করেন; তিনি বলেছিলেন: আমাকে এ দেশের ধনভান্ডার সমূহের দায়িত্বে নিযুক্ত করুন। নিশ্চয় আমি সংরক্ষক ও জ্ঞাত। তবে এ আয়াতের ইলম বা জ্ঞান দ্বারা সকল বিষয়ের উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য হলো ঐ পদ বা দায়িত্বের ইলম। ‘আস-সিয়াসাতুশ শারঈয়্যাহ’ নামক গ্রন্থে ইলম- এর পরিচয় এভাবে প্রদান করা হয়েছে-“ইলম শব্দের মর্ম ও অর্থ অনেক ব্যাপ্ত ও প্রশস্ত, প্রায়োগিক ও তাত্তি¡ক সকল বিষয় এই শব্দের অর্থের আওতাধীন। কিন্তু এখানে ইলম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এ পরিমাণ ইলম, যা সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা কাজের যাবতীয় তত্ত¡কে অন্তর্ভুক্ত করে”। ইলম বা যোগ্যতা যাচাইয়ের পরিমাপদন্ডও হলো, ইলম। যে কমিশন বা পরিষদ কোন ব্যক্তিকে কোন পদের জন্যে নির্ধারণ করে সে নির্বাচন কমিটির ইলমের বিষয়টি বিবেচনা করাও আবশ্যক।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে সম্প্রদায়ের কোন কাজের দায়িত্বে নিযুক্ত করলো এ অবস্থায় যে, সে জানে, মুসলিমদের মধ্যে এ ব্যক্তির চেয়ে অধিক ভালো কেউ আছে, যে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহ সম্পর্কে আরো বেশি জানে, তাহলে এই নির্বাচক ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূল এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে খেয়ানত করলো। উপরিউক্ত হাদিস থেকে দুটি বিষয় জানা গেলো, প্রথমত সরকারি পদ ও সম্পদের দায়িত্বের জন্যে ইলম থাকা আবশ্যক। দ্বিতীয়ত যে ব্যক্তিবর্গ বা পরিষদের কাউকে নিয়োগের ক্ষমতা অর্পণ করা হয় তাদের জন্যে অবশ্য কর্তব্য হলো, তারা যোগ্যতাকে মানদন্ড বানাবে। এ কারণে সার্ভিস কমিশনের জন্যে আবশ্যক হলো, ঘুষ, স্বজনপ্রীতি এবং সুপারিশ থেকে ঊর্ধ্বে উঠে ইলম সম্পন্ন ও পদের জন্যে উপযুক্ত ব্যক্তিকে নির্ধারণ করা।
সরকারি পদ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ সোপর্দ করার জন্যে জ্ঞানগত যোগ্যতার পাশাপাশি মানসিক ও শারীরিক যোগ্যতার পূর্ণমাত্রায় থাকা জরুরি। মানসিক ও শারীরিক যোগ্যতা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো,আকেল (পরিণত জ্ঞানবুদ্ধিও অধিকারী), প্রাপ্তবয়স্ক এবং তী মেধার অধিকারী হওয়া। কেননা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বে মানুষের বোধ অসম্পূর্ণ থাকে। আকল বা মানসিক যোগ্যতা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো অনুভূতিসম্পন্ন হওয়া, পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগতি, পর্যালোচনা শক্তি, দুর্যোগপূর্ণ সময়ের মোকাবেলা করার যোগ্যতার পদের অধিকারী হবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে কুরআনে এসেছে: আল্লাহ তোমাদের জন্য তাকে ( তালূত ) মনোনীত করেছেন আর তাকে জ্ঞানে ও দেহে প্রাচুর্যতা দান করেছেন।শারীরিত যোগ্যতার মধ্যে রয়েছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কর্মক্ষম হওয়া, দৃষ্টিশক্তি অর্থাৎ দেখার যোগ্যতা থাকা, পঙ্গু না হওয়া এবং সুস্থ হওয়া। যাতে দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিজ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোন প্রকার জটিলতার মুখোমুখি না হন। ইসলামী শিক্ষা আলোকে সরকারি যোগ্য কর্মীও জন্যে বিশ্বস্ত হওয়া আবশ্যক। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, শুআইব আ. এর মেয়ে যখন তার পিতার কাছে মূসা আ. কে মজদুর হিসেবে রাখার আবদার করেন, তখন কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, তার ( মূসা আ.) মাঝে মৌলিক দুই বৈশিষ্ট্য- শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত হওয়ার গুণ রয়েছে। আল্লাহ বলেন: সে দুই মেয়ের একজন তার পিতাকে বললেন, আব্বাজান! তাকে আপনি মজুর হিসেবে রেখে দিন, কারণ আপনার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি যে শক্তিশালী, আমানতদার।
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট হলো, কারো কাছে কোন পদ বা দায়িত্ব অর্পণ করতে হলে তার যোগ্যতার দিকে খেয়াল করা জরুরি। যোগ্যতার জন্যে শর্ত হলো, প্রথমত দেখতে হবে, সে শক্তিশালী কি না। অর্থাৎ তার বোধ ও দৈহিক অবস্থা এতটা মজবুত কিনা যে, সে নিজ কর্তব্য পালন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দাপ্তরিক কার্যক্রমকে বিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বিন্যস্তভাবে পরিচালনার দক্ষতা রাখে। দ্বিতীয়ত হলো, বিশ্বস্ত হওয়া। কুরআন মাজীদ অন্যত্র দায়িত্বের জন্যে বিশ্বস্ত হওয়াকে যোগ্যতার অংশ সাব্যস্ত করেছে।সুরা নিসায় বর্ণিত রয়েছে, আমানতকে তার যোগ্য ব্যক্তির কাছে সোর্পদ করো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।