Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:১২ এএম

দুই

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে সব বিষয় ও সমস্যার সমাধানে তিনি ছিলেন মূল কেন্দ্র। তিনি মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের যে রুপরেখা পেশ করেন, তাতে বর্তমানের মত নিয়মতান্ত্রিক অফিস, দারোয়ান ও রাষ্ট্রীয় আইন ছিলো না। বরং তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক নীতিমালা প্রদান করেন। তিনি শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক, শাসক ও জনগণের অধিকার, মুসলিম ও অমুসলিমদের অধিকার নির্ধারণ করেন। যদিও বাহ্যত মদীনা রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ছিলো অতি সাধারণ, তথাপি গভীরভাবে মনোযোগ দিলে বুঝা যায়, এ রাষ্ট্রের মৌলিক তিনটি গুরুত্বর্পূণ শাখা ছিলো- ১. নির্বাহী ২. আইন প্রণয়ন ৩.বিচার বিভাগ। এই তিনটি শাখা মদীনা রাষ্ট্রে কার্যকরভাবে সক্রিয় ছিলো; যদিও তার কাঠামো বর্তমান সময়ের মত ছিল না। যেহেতু তখন সব সিদ্ধান্তের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন আল্লাহ এবং তার রাসূলুল্লাহ (সাঃ), তাই নির্বাহী পরিষদের স্বরুপ তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর খেলাফত ব্যবস্থার আকারে বিদ্যমান ছিল। খলীফার এ সম্মানিত পদ আল্লাহ তাআলা তার নবীকে দান করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় বিষয়দি পরিচালনার জন্যে তিনি একেক জনকে একেক পদ দিয়েছিলেন।নির্বাহী পরিষদের গুরুত্বর্পূণ দায়িত্বগুলো ছিল, গভর্নর, সেনাপতি, কাতিববৃন্দ ও সেক্রেটারি। ‘সারায়া’(যুদ্ধ) পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ৭৪ জন ব্যক্তি। যেমন তিনি হামযা বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) কে সীফুল বাহর (সমুদ্র উপকুলের) যুদ্ধে আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। মুআয বিন জাবাল (রাঃ) কে ইয়ামানের গর্ভনর নিযুক্ত করেছিলেন।নির্বাহী পরিষদের দায়িত্বের মধ্যে আরো ছিল অঞ্চলভিত্তিক শাসক রাষ্ট্রদূত। যেমন ইমাম বুখারী তার সহীহ-তে এই শিরোনামে অধ্যায় রচনা করেছেন ঃ নবী (সাঃ) একের পর এক শাসক ও দূত পাঠাতেন।নির্বাহী বিভাগের অধীনে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক বিভাগ হলেঅ বায়তুল মাল। বায়তুলমালে যাকাত সংগ্রহকারী, উৎপন্ন ফসলের যাকাতের পরিমাণ নির্ণায়ক ও কর্মকর্তা ইত্যাদি পদ ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদিকে যেমন দ্বীনের প্রতি আহ্বানকারী ছিলেন, আবার রাষ্ট্রপ্রধানও ছিলেন। তিনি ইসলামের দাওয়াত ও ব্যবস্থাপনাগত বিষয় পরিচালনার জন্যে চিঠি ও দোভাষী পাঠাতেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী (সাঃ) দিহয়া কালবী(রাঃ) কে চিঠিসহ বুসরার শাসকের কাছে পাঠিয়েছেন যেন তিনি তা রোমের সম্রাট কায়সারের কাছে পৌছান। এছাড়াও নির্বাহী পরিষদে আরও কিছু পদ ছিল। যেমন যুদ্ধলব্ধ ও প্রোথিত সম্পদে রাষ্টের প্রাপ্য একপঞ্চমাংশ সম্পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, টহল বাহিনী, অস্ত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত, স্থানীয় ব্যবস্থাপক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন এবং হজ্জের দায়িত্বে নিযুক্ত কর্মকর্তা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে আইন প্রণয়ন বিভগের কার্যকর ছিল।সে সময়ে অধিকাংশ বিষয়ের সমাধান অহীর মাধ্যমে হত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নবী করীম (সাঃ) মজলিসে শুরা আহŸান করে পরামর্শ করার মাধ্যমেও ফয়সালা দিতেন। যেমন বদর যুদ্ধে বন্দীদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করেন।
উক্ত পরামর্শ সভার কিছু সাহাবী উপদেষ্টা এবং মন্ত্রীর পদে উত্তীর্ণ ছিলেন। আইন প্রণয়ন বিভাগের অধীন দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে সেক্রেটারী বা কাতিবের পদ। নুকূশ পত্রিকার রাসূল সংখ্যায় কাতিবীনদের সংখ্যা ৪৩ জন পর্যন্ত গুনা করা হয়েছে। কাতেববৃন্দ (লেখক) পুরো মানবজাতির জধবন- বিধান পবিত্র কুরআন অবতীর্ণের সাথে সাথেই লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। আর কিছু সাহাবী রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর চুক্তিনামা ও চিঠিপত্র লেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। মদীনা রাষ্ট্রের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো বিচার বিভাগ। সাধারণভাবে এটা প্রসিদ্ধ যে, বিচার বিভাগ উমার (রাঃ) এর যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সীরাতে নববী অধ্যয়নকারীগণ খুব ভালো ভাবেই অবগত আছেন যে, এই পদও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তবে পার্থক্য এই যে, উমার (রাঃ) বিচারবিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পরিপূর্ণ পৃথক করে স্বতন্ত্র একটি বিভাগে পরিণত করেন; পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে এ দুটি মিলে একটি বিভাগ ছিল। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুআয (রাঃ) কে ইয়ামানের বিচারক ও শাসক উভয় পদের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। সীরাত থেকে আরও জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই বিচারক পদে কাউকে নির্বাচন করার র্শত ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তথাপি এটা স্বীকৃত বিষয় যে, তার মাধ্যমে কোন এলাকায় যিনি নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পেতেন, তিনি একাধারে নির্বাহী কর্মকর্তা, বিচারক ও গভর্ণর হিসেবে কর্তব্য সমাধা করতেন।
প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্য সীমান্ত সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, নির্বাহ এবং রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নিজস্ব অর্থবিভাগ থাকা আবশ্যক। রাসূলূল্লাহ (সাঃ) এর যুগে সম্পদের একত্রকরণ,সংরক্ষণ, বন্টন ও এতদসংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্যে বায়তুল মাল নামে পৃথক বিভাগ ছিল। তার মক্কী জীবনে স্বতন্ত্র ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিল না। এ কারণে সে সময় উক্ত বিভাগের উপকরণ ছিল সীমিত। তবে মাদানী জীবনে মদীনা রাষ্ট্রের জন্যে সরকারি সম্পদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত ছিল। মদীনা রাষ্ট্রে সম্পদ আয়ের সবচেয়ে বড় খাত ছিল যাকাত ও সাদাকা। সাদাকা উসূল করা ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। সাদাকার অধীনে স্বর্ণ, রুপা, নগদ অর্থ. ব্যবসার পণ্য, উশর, গবাদিপশুর যাকাত, গুপ্তধন ইত্যাদি সম্পদের যাকাত একত্রিত করা হত। বিভিন্ন কর্মকর্তা সাদাকা উসূল করতেন। যাকাত তো একটি ফরয বিধান। সে সময়কালে ব্যক্তি উদ্যোগে যাকাত পাওয়ার হকদারদের মধ্যে যাকাত বন্টন করা হত না, বরং সরকারি উদ্যোগে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে যাকাত আদায় করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করা হত। এ থেকে প্রমাণিত হয়, সরকারি সম্পদের সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, নির্বাহ করা ও বন্টন করার কাজও ইসলামী রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
আল্লামা শিবলী নোমানী জিয্য়া ও খারাজ সম্পর্কে লিখেছেন, অমুসলিম প্রজাদের কাছ থেকে তাদের নিরাপত্তা প্রদান ও দায়গ্রহণের বিনিময় জিয্য়া গ্রহণ করা হয়।এর কোন পরিমাণ নির্ধারিত ছিল না। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তার সময় প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সক্ষম ব্যক্তির ওপর বছরে এক দীনার করে জিয্য়া ধার্য করেছিলেন। শিশু ও নারী এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ‘ইলীয়া’ থেকে প্রাপ্ত জিয্য়ার পরিমাণ ছিল ৩০০ দীনার। সে সময় জিয্য়ার সবচেয়ে বড় পরিমাণ উসূল হত বাহরাইন থেকে। অমুসলিম কৃষকদের মালিকানা অধিকারের বিপরীতে তাদের সাথে আপোসে সন্ধির ভিত্তিতে উৎপন্ন ফসলের যে পরিমাণ ধার্য হত, তার নাম হলো খারাজ। খায়বার,ফাদাক, ওয়াদিল কুরা, তায়মা ইত্যাদি জায়গা থেকে খারাজ উসূল করা হত। জিয্য়া ও খারাজকে ‘ ফাই’ বলেও অভিহিত করা হত, যেহেতু ‘ফাই’ অর্থ বিনাযুদ্ধে লব্ধ সম্পদ, আর এ সম্পদগুলো তো বিনাযুদ্ধে লব্ধ হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে সম্পদেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল প্রোথিত সম্পদ ও গনীমত। আল্লামা কাসানী বলেন, ভূগর্ত থেকে যত সম্পদ বের হয় এগুলো দু‘প্রকার। একপ্রকার হলো যা মানুষ নিজে যমীন প্রোথিত করে। একে কান্য বলে। দ্বিতীয় প্রকার হলো খনি, যা সৃষ্টিগতভাবে যমীনের অভ্যন্তরে রাখা আছে। রিকায শব্দটি উভয় প্রকার সম্পদ বোঝানোর জন্যে ব্যবহৃত হয়। গনীমত হলো সে সম্পদ,যা যোদ্ধারা শত্রুপক্ষের ওপর কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে অর্জন করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->