Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারাদেশেই সতর্ক পুলিশ-র‌্যাব

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:১৯ এএম, ১০ অক্টোবর, ২০১৮

২১ আগস্ট নৃশংস গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে লক্ষ্যে সারাদেশেই সর্তক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ-র‌্যাব। রায়কে ঘীরে আজ বুধবার শুধু রাজধানীতেই মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ-র‌্যাবের চার হাজার সদস্য। আদালত এলাকা ঘিরে থাকছে পৃথক নিরাপত্তাবলয়। কারা কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ আসামি আনা-নেয়া ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। খবর সংশ্লিস্ট্র সূত্রের।
আইন-শৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগার এবং কাশিমপুর ১ ও ২ নং কারাগারে রাখা হয়েছে। এ তিন কারাগারের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে গতকাল থেকে। রায়ের দিন তাদের বহনকারী প্রিজন ভ্যানের সামনে পেছনেও থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে আরো জানা গেছে, রায় ঘোষণার দিন আসামি ও ঢাকাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে আদালতের চারপাশের সড়কে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভোররাত থেকেই পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের বিশেষ আদালতকে ঘীরে তল্লাশি ও চেকপোস্ট বাসানো হয়েছে। এ ছাড়াও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে। রাজধানীজুড়ে থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়ে কোনো ধরনের নৈরাজ্য সহ্য করা হবে না। যেকোনো ধরনের নৈরাজ্য মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গতকাল রাজারবাগ পুলিশ লাইনে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এ রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাজনিত কোনো হুমকি নেই এবং নিরাপত্তা বিঘ্ন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা আদালতের একটা স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ।
পুলিশ সতর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের নজরদারি রয়েছে। এ রায়কে কেন্দ্র করে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল সহিংসতার চেষ্টা করলে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। কোনো ধরনের অপতৎপরতা বরদাসত করা হবে না। নগরবাসীর জান-মালের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ প্রস্তুত।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন কোনো অবনতি না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। এরই মধ্যে দেশের সব ব্যাটালিয়নকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনের গোয়েন্দা তথ্যে ২১আগস্টের রায় ঘিরে বড় ধরনের কোনো নাশকতা কেউ ঘটাতে পারে, এমন তথ্য পুলিশের কাছে নেই। তবে তাৎক্ষণিকভাবে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে, সে দিকেও সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর যাতে কোনো হামলা না হতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদরদফতর থেকে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মোঃ সোহেল রানা বলেন, রায় ঘোষণার দিন কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলার কোনো থ্রেট নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ও চেকপোস্ট থাকবে।
পুলিশ সদরদফতর সূত্রে জানা গেছে, নানা বিবেচনায় ২১ আগস্টের রায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বর্বরোচিত এ হামলা নিয়ে সাজানো হয় ‘জজ মিয়া’ কাহিনী। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মামলার পুনর্তদন্ত শুরু হয়। এ সময় বেরিয়ে আসতে থাকে অনেক অজানা তথ্য। এ দেশের ইতিহাসে অন্য কোনো মামলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার এতসংখ্যক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আসামি হয়েছে- এমন ঘটনাও নজিরবিহীন।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই মামলার সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ের নেতারা জড়িত সে কারণে নয়াপল্টনসহ বিএনপি অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকায় বিশেষ নজরদারি থাকবে। রায়ের পর কেউ যাতে সড়কে নেমে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে না পারে, নাশকতা করতে না পারে সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ। নাশকতা হতে পারে এমন সম্ভাব্য স্পটগুলোতে আগে থেকেই পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
উল্লেখ, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নৃশংস গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলার রায় আজ বুধবার ঘোষণা করা হবে। এর মাধ্যমে অবসান ঘটবে ১৪ বছরের অপেক্ষার প্রহর। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচার শাহেদ নূর উদ্দিন রায়ের জন্য ১০ অক্টোবর ধার্য করেন। ওই হামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুতর আহত হন। মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভি রহমানসহ নিহত হন ২৪ জন। আহত হন আরো কয়েকশ নেতাকর্মী। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার অধিকতর তদন্ত শেষে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হুজি নেতা মুফতি হান্নান, সাবেক মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুঃফুজ্জামান বাবরসহ ৪৯জনকে আসামি করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ