পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে দায়িত্বহীনতা এবং অসচেতনতার এক নিকৃষ্ট নজির সৃষ্টি হলো রাজধানীর উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায়। মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে তিতাসের গ্যাসের মূল লাইন কেটে ফেলার মাধ্যমে এই নজির সৃষ্টি করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গ্যাস লাইন কেটে যাওয়ার সময় বিকট শব্দের সৃষ্টি হয়। এতে আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এবং মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মূল লাইন কেটে যাওয়ায় সেখান থেকে জোর গতিতে গ্যাস বের হতে থাকে। যদি আগুন লেগে যেত, তাহলে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ঘটনা ঘটার অনেক পরে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস এসে পৌঁছায়। এত বড় ঘটনা ঘটলেও তিতাসের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মী বা কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গ্যাস লাইন কেটে অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। আল্লাহ্ বাঁচিয়েছেন বলে রক্ষা পাওয়া গেছে। বলা বাহুল্য, এ ঘটনা ঘটার পেছনে যে মেট্রোরেল নির্মাণ কাজে জড়িত প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও উদাসীনতা রয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইটালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের সঙ্গে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের জন্য সরকারের চুক্তি হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেলসহ সড়ক নির্মাণের সময় কাজে অবহেলাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
দেশে অগ্রাধিকারভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সরকার অনেক আগেই নিয়েছে। তবে এসব প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে বলে বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণ এসব অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পের অন্যতম। এর কাজও ধীর গতিতে চলছে। দেশের উন্নয়নমূলক কাজ একটি রুটিন কাজ। এসব উন্নয়নমূলক কাজে অধিকতর অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প থাকে। প্রকল্পগুলো দ্রæত বাস্তবায়নের জন্য স্বাভাবিকভাবেই দক্ষ ও যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়। দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম হচ্ছে। এমন অনেক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয় যাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা দেখেছি, ফ্লাইওভার নির্মাণের ক্ষেত্রে এমন প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল যাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ছিল খুবই সীমিত। এ কারণে ফ্লাইওভার ধসে পড়া থেকে শুরু করে অনেক নির্মাণ শ্রমিকে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে। সকলেরই ধারণা, মেট্রোরেল নির্মাণের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে দক্ষ ও যোগ্য প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে। গ্যাসের মূল পাইপ লাইন কেটে ফেলার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো, এ ধারণা সঠিক নয়। যে প্রতিষ্ঠান এ কাজে নিয়োজিত এখন দেখা যাচ্ছে তার কাজে ত্রুটি রয়েছে। তা নাহলে গ্যাসের মূল পাইপ কেটে ফেলার মতো এত বড় ঘটনা ঘটবে কেন? যেসব প্রতিষ্ঠান এসব কাজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ তারা মাটি খোঁড়ার আগে থেকেই জেনে নেয়, সেখানে কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কী ধরনের লাইন রয়েছে। এটি জেনে নেয়া খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। তাছাড়া আগে থেকে তৈরি করা নকশা এবং জরিপ থাকাও সাধারণ বিষয়। গ্যাসের মূল লাইন যে কাটা পড়ল, তাতে যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতি এবং অদক্ষতা রয়েছে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। গ্যাসের লাইন কেটে যাওয়ায় আশপাশে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন আতঙ্ক বিরাজ করছে, তেমনি ঐ এলাকার বাসিন্দারা গ্যাসের অভাবে রান্না-বান্নার কাজ করতে পারছে না। তিতাসের এক ডিউটি অপারেটর বলেছেন, এত বড় ঘটনা হঠাৎ করে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। এটি মেরামত করতে অনেক সময় লাগবে। এর অর্থ হচ্ছে, ঐ এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ সহসা কমার সম্ভাবনা নেই। এতে সেখানের অনেক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, যাচ্ছেতাইভাবে কাজ করলে এমন ঘটনা ঘটে। এমনিতেই মেট্রোরেল নির্মাণ কাজের ধীর গতির কারণে যানজট সৃষ্টি হওয়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। তার উপর যদি কাজের অদক্ষতার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে তারা কোথায় যাবে?
উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ধীর হওয়া এবং যথাসময়ে শেষ না হওয়া আমাদের দেশে এক অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষও বোঝে, উন্নয়ন প্রকল্প মানে একে পুঁজি করে এর সাথে জড়িত একশ্রেণীর মানুষের উন্নয়ন হওয়া। কমিশন বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা ধরনের দুর্নীতি প্র্রকল্পের সাথে জড়িয়ে পড়ে। যে বাজেট ও সময় বরাদ্দ করা হয়, তা আরও বাড়ানো হয়। এর কারণই হচ্ছে, এর সাথে কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির বিষয়টি জড়িয়ে থাকে। তার উপর রয়েছে, কাজের গাফিলতি এবং অদক্ষতা। এর সর্বশেষ নজির হচ্ছে, মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে গ্যাসের মূল পাইপ লাইন কেটে ফেলা। আমরা মনে করি, উত্তরায় গ্যাস লাইন কেটে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে, তা অদক্ষ ও অযোগ্য লোক নিয়োগ দেয়ার কারণেই ঘটেছে। এক্ষেত্রে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এর সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং অধিকতর সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। কারণ মেট্রোরেলের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণের সাথে অদক্ষ ও অযোগ্য লোক জড়িয়ে থাকবে, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।