পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলারদের মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানীর বিধান রেখে দেশে প্রথমবারের মত স্বর্ণ নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ নামক বিলের খসড়া অনুমোদন লাভ করে। এই বিলের মধ্য দিয়ে দেশে স্বর্ণ বাণিজ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যায়। প্রকাশিত তথ্য অনুসারে দেশীয় বাজারে বছরে ১৮ থেকে ৩৮ টন স্বর্ণের চাহিদা থাকলেও স্বর্ণ আমদানীর নীতিমালা না থাকায় চাহিদার প্রায় পুরোটাই অবৈধ পন্থায় চোরাচালানের মাধ্যমে যোগান দেয়া হচ্ছে। চোরাচালানই স্বর্ণ আমদানীর একমাত্র পন্থা হওয়ায় দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে স্বর্ণ চোরাচালানের অন্যতম ট্রানজিট রুট।স্বর্ণ চোরাচালানের মধ্য দিয়ে বছরে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। চোরাচালন রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বছরে হাজার হাজার কেজি স্বর্ণ আটক হলেও স্বর্ণ আমদানীর বিকল্প বা বৈধ পন্থা না থাকায় এর চোরাচালান কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছেনা। দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা স্বর্ণ আমদানীর সুযোগ রেখে একটি স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়নের দাবী জানিয়ে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। এ কারণেই সরকারের এই স্বর্ণনীতিমালা বিল অনুমোদিত হওয়ায় সরকারকে অভিননন্দন জানিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা ।
স্বর্ণ নীতিমালা শুধুমাত্র স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়। অলঙ্কার ও সম্পদের উৎস হিসেবে র্স্বণের ব্যবহার আমাদের জাতীয় ও লোকজ সংস্কৃতির অংশ। ধনী-গরীব সব শ্রেণীর মানুষের বিয়ে সাদি ও পারিবারিক নানা উপলক্ষ্যে স্বর্ণ ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। এটা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। অবৈধ পথে আমদানি করা স্বর্ণের ব্যবসা ও কেনাবেচা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের জন্যই অনৈতিক ও অস্বস্তিকর বিষয়। অন্যদিকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার স্বর্ণ কেনা বেচা হলেও বৈধ পথে র্স্বন আমদানির সুযোগ বা ডকুমেন্টেশন না থাকায় সরকার এ খাতের রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। নতুন নীতিমালায় ডিলারদের মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় চোরাচালান কমে আসার পাশাপাশি বছরে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের খাত সৃষ্টি হবে। সেই সাথে আমদানীকৃত স্বর্ণের বার দেশীয় নিপুণ স্বর্ণশিল্পীদের হাতে মনোহর অলঙ্কার হিসেবে বিদেশে রফতানিরও সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন। অনুমোদিত নীতিমালায় স্বর্ণ আমদানির ডিলার নিয়োগ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি গাইডলাইন তৈরীর কথা বলা হয়েছে। বিদেশ থেকে ফেব্রিক আমদানি করে পোশাক তৈরী করে রফতানির অনুরূপ স্বর্ণ আমদানি ও অলঙ্কার রফতানি বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
দেশে কোনো স্বর্ণখনি নেই বা স্বর্ণ উৎপাদনের কোন আভ্যন্তরীণ খাতও নেই। অথচ স্বর্ণের কেনাবেচা ও ব্যবহার সার্বজনীন। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে স্বর্ণ আমদানি-রফতানি রাজস্ব আয়ের অন্যতম বড় উৎস হলেও আমাদের দেশে তা বৈধতা ও অস্বচ্ছতার সংকটে নিপতিত। এ অবস্থা স্বর্ণ চোরাচালান ও অবৈধ কেনাবেচাকেই অবধারিত করে তুলেছে। রাজস্ববিহীন ও অনিয়ন্ত্রিত স্বর্ণ ব্যবসা একদিকে বেশী লাভজনক অন্যদিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমদানি ও মানে নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে সাধারণ স্বর্ণ ক্রেতারা প্রতারিত হলেও আইনগত সুরক্ষা ও নিশ্চয়তা ছিলনা।স্বর্ণ নীতিমালা এভাবেই স্বর্ণব্যবসায়ী ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে। স্বর্ণ নীতিমালার লক্ষ্য হিসেবে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, স্বর্ণ আমদানি সহজ করা, এ খাতে জবাবদিহিতা আনা, স্বর্ণালঙ্কার রফতানি উৎসাহিত করা, স্বর্ণ খাতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তবে শুধুমাত্র নীতিমালা করলেই হবে না, তার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং উপযুক্ত নজরদারি নিশ্চিত করা জরুরী। বাণিজ্যিকভাবে স্বর্ণ আমদানীর পাশাপাশি প্রচলিত এভিয়েশন আইনে বিমানযাত্রীদের জন্য বিদেশ থেকে নির্দিষ্ট পরিমান স্বর্ণ বহণের সুযোগ রয়েছে। দেশে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা না থাকায় এ ক্ষেত্রেও ভুক্তভোগীদের নানা অস্বচ্ছতা ও হয়রানির শিকার হতে হয়। নতুন খসড়া নীতিমালা চুড়ান্ত অনুমোদনের আগে এর একটি সামগ্রিক মূল্যায়ণ আবশ্যক। স্বর্ণ আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সিং ও তদারকিতে স্বচ্ছতা রক্ষা করতে হবে। র্স্বণ আমদানি খাত যেন মানি লন্ডারিংয়ের খাতে পরিনত না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। স্বর্ণ নীতিমালায় ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহল যাতে প্রত্যাশিত সুফল পেতে পারে সে লক্ষ্যে নীতিমালাটিকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার আওতায় আনতে হবে। এর মধ্য দিয়ে নীতিমালাটির সর্বোচ্চ কার্যকারিতা নিশ্চিত হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।