মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী জোটের সমর্থনপুষ্ট মালদ্বিভিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এমডিপি) প্রার্থী ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ বিজয়ী হয়েছেন। এমডিপির প্রধান হচ্ছেন ভারতপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ। প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন পরাজয় মেনে নিয়েছেন। ভারত এ নির্বাচনী ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছে। খবর আল জাজিরা,বিবিসি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। সাড়ে তিন লাখ জনসংখ্যার দেশ মালদ্বীপে এবারের নির্বাচনটিকে গণতন্ত্রের ওপর গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছে। সোমবার সকালে মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফলে বলা হয় যে ইবরাহিম সলিহ ৫৮.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন পেয়েছেন ৪২ শতাংশ ভোট। তিনি প্রোগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপ (পিপিএম) দলের প্রধান।
এর আগে রাতের প্রথম দিকে নির্বাচনের ফলাফলে ব্যাপক বিজয়ের খবর আসার প্রেক্ষিতে সলিহর সমর্থকরা রাস্তায় আনন্দোৎসব শুরু করে। তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের সাথে সাক্ষাত করে তাকে পরাজয় মেনে নেয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, আমি প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাত করে তাকে জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি প্রেসিডেন্টকে বিরোধী দলের আটক সব নেতাকে মুক্তি দেয়ারও আহবান জানান। সলিহ রোববার মালেতে টেলিভিশন বক্তৃতায় জয়ের দাবি করেন। তিনি বলেন, আমরা এই নির্বাচনে সহজ জয় পেয়েছি। এখন আনন্দের সময়। এখন আশার সময়। এটি ইতিহাসের মুহ‚র্ত। আমরা ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপ‚র্ণ মালদ্বীপ গড়ে তুলব। আমি সকল মালদ্বীপবাসীর প্রেসিডেন্ট হব।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন সোমবার বলেন, রোববার মালদ্বীপের জনগণ তাদের রায় দিয়েছেন। আমি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিচ্ছি। আমি বিশ্বস্ততার সাথে জনগণের সেবা করেছি। আমি জনগণের সেবা করে যাব।
তিনি নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম সলিহকে অভিনন্দন জানান। ইয়ামিন বলেন, তিনি মালেতে প্রেসিডেন্ট অফিসে তার সাথে সাক্ষাত করেছেন।
তিনি বলেন, ১৭ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদকাল শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন।
খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় সকাল ৮ টার আগেই ভোট দেয়ার উদ্দেশ্যে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের লম্বা লাইন পড়ে। কোথাও কোথাও ভোটাররা ছয়ঘণ্টার বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন। কিছু কিছু দ্বীপে ভোটাররা সারারাত ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তাদেরই একজন ২০ বছর বয়সী আজকা আদিল প্রথমবারের মতো ভোট দিতে এসে নার্ভাস অনুভব করছিলেন। তারপরও তিনি আগে থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন, কারণ তার আশঙ্কা ছিল যে ভোট কারচুপি হতে পারে। ২০১২ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এটিই প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন।
এদিকে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা মোহম্মদ নাশিদ বলেন, এ নির্বাচন দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনবে। তিনি বলেন, ইয়ামিনের পরাজয় মেনে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
ভারত মহাসাগরীয় এ দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতারত চীন ও ভারত উভয়েই নির্বাচনের দিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি রেখেছে।
খবরে বলা হয়, নির্বাচন শুরুর পর শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়ের পর সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আরো তিন ঘন্টা ভোট গ্রহণের সময় বাড়ানো হয়। ব্যাপক সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিই এর কারণ। নির্বাচন কমিশন জানায় ৮৮ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে। মালদ্বীপের নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬২ হাজার।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের উপপ্রধান আহমেদ আকরাম বলেন, ভোটারদের বিপুল উপস্থিতির কারণে দেশের ভেতরে ও বাইরে সবগুলো ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সময় তিনঘণ্টা বৃদ্ধি করা হয়। কারণ, সব ভোটকেন্দ্রেই ভোটাররা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। ফলে সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ সমাপ্ত হয় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায়, যা প‚র্বে বিকেল ৪টায় শেষ হওয়ার কথা ছিল।
নির্বাচনের আগে ব্যাপক ভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে ইয়ামিন যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকবেন। উল্লেখ্য, এ নির্বাচনের প্রধান প্রার্থী আবদুল্ল্াহ ইয়ামিন ২০১৩ সালে বিতর্কিত এক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তার বিরুদ্ধে বিরোধী দলীয় সদস্যদের নির্বাসন, জেল দেয়া, আন্দোলন নিষিদ্ধ করা, পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া এবং পাঁচ বছরের মধ্যে দুইবার জরুরি অবস্থা জারির অভিযোগ রয়েছে।
আবদুল্লাহ ইয়ামিন মালদ্বীপে ৩০ বছর ক্ষমতায় থাকা সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল কাইয়ুমের সৎ ভাই। বিচার কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ মামুন বর্তমানে কারাগারে আছেন।
চীন থাকবে, ফিরবে ভারত
যুক্তরাজ্যের দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা সোমবার এক প্রতিবেদনে বলে, মালদ্বীপের নির্বাচনে চীনপন্থী প্রেসিডেন্ট যখন পরাজয়ের ধাক্কা সামলাচ্ছেন তখন ভারত মালদ্বীপে গণতন্ত্রের বিজয় উদযাপন করছে।
আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কাছে ভারত মহাসাগরের এ দ্বীপদেশটির বিপুল কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহর বিজয় চীনের উচ্চাকাক্সক্ষার ক্ষেত্রে এক আঘাত বলে প্রমাণিত হতে পারে।
ইতিমধ্যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র মালদ্বীপের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
নির্বাচনে সলিহর বিস্ময়কর বিজয় ঘটেছে এবং দেশটির উপর চীন ও ভারতের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতার প্রেক্ষিতে তা ব্যাপক গুরুত্ব বহন করছে।
প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। সে সাথে তার কর্তৃত্বপরায়ণ শাসন, ভিন্নমতের রাজনীতিকদের উপর দমন ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকে উপেক্ষা করার মধ্য দিয়ে তিনি ভারতের সমালোচনার শিকার হন।
৫৬ বছর বয়স্ক সলিহ কয়েক দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসনকালে গণতান্ত্রিক কর্মী একং পার্লামেন্টে সাবেক সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা ছিলেন। এমডিপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার ও নির্বাসনের প্রেক্ষিতে তিনি দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মনোনীত হন।
প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের সময় মালদ্বীপ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ভারত মালদ্বীপের অন্যতম আমদানি পণ্য সরবরাহকারী। গত ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তিদানের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন জরুরি অবস্থা জারি করার পর জল্পনাকল্পনা শুরু হয় যে ভারত তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মালদ্বীপে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে।
সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় যে মালদ্বীপের সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করতে ভারত সলিহর নয়া সরকারের সাথে কাজ করবে।
ইয়ামিন সরকার মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীতনার ব্যাপারে সমালোচনার শিকার হলেও দেশের বহু দ্বীপে পর্যটকদের পর্যটনের উপর নির্ভরশীল অর্থনীতিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এগিয়ে নিতে সফল হন। অর্থনীতিবদরা এর কৃতিত্ব দিয়েছেন চীনা বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নকে।
তবে শীর্ষস্থানীয় ভাষ্যকার ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার ক‚টনৈতিক সম্পাদক ইন্দ্রানী বাগচি বলেন, সলিহর নেতৃতে¦ চীনের সাথে মালদ্বীপের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে , অন্তত চীনা ঋণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন চাহিদার স্বার্থে যেক্ষেত্রে ভারত একেবারেই দুর্বল। তিনি বলেন, চীন মালদ্বীপ থেকে যাবে না, তবে ভারত খেলায় ফিরছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।