Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশান্ত মহাসাগরে ‘নরখাদকে’র ডেরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৫ পিএম

'জস' ছবির সেই ভয়ঙ্কর নরখাদক হাঙরেরই স্বজাতি! তবে সংখ্যায় কয়েকশো! সম্প্রতি আমেরিকার উপকূলে সেই গ্রেট হোয়াইট শার্কের দলের লুকনো ডেরার সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ক্যালিফোর্নিয়ার মেক্সিকো বাজা উপদ্বীপ এবং হাইয়াই দ্বীপপুঞ্জের মধ্যবর্তী প্রশান্ত মহাসাগরের ওই এলাকাটি 'ব্ল্যাঙ্ক ব্যারেন' নামে চিহ্নিত। জীব-বৈচিত্রের মাপকাঠিতে ওই অঞ্চলটি এতদিন পর্যন্ত আদৌ 'গুরুত্বপূর্ণ' হিসেবে পরিচিত ছিল না।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং 'মন্টেরে বে অ্যাকোয়ারিয়ম'-এর যৌথ গবেষকদলের পর্যবেক্ষণ, প্রতি বছর শীতের আগে ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশো গ্রেট হোয়াইট শার্ক 'ব্ল্যাঙ্ক ব্যারেন' অঞ্চলে পাড়ি দেয়। থাকে, বসন্তের শেষ পর্যন্ত। কিন্তু সাগর দানবদের এমন দলবদ্ধ পরিযাণের কারণ কী?
প্রাণী গবেষকদের প্রাথমিক ব্যাখ্যা, খাদ্যের সন্ধানেই এমনটা করে ওয়েস্ট বে'র হাঙরকুল। ঘটনাচক্রে, বছরের ওই সময়টাতেই প্রশান্ত মহাসাগরের ওই 'রিক্ত-বন্ধ্যা' অঞ্চলে উষ্ণ স্রোতের কারণে মাছ এবং স্কুইডের আধিক্য দেখা যায়। এলাকাটিকে তাই 'হোয়াইট শার্ক কাফে' নামে চিহ্নিত করেছে যৌথ গবেষকদল।
প্রসঙ্গত, চিংড়ি জাতীয় প্রাণী ক্রিলের প্রজনন ক্ষেত্র দক্ষিণ গোলার্ধে এমন ভাবেই দলবদ্ধ পরিযাণ করে নীল তিমিরা। কখনও সখনও নরমাংসে 'স্বাদ বদল' করলেও গ্রেট হোয়াইটদের মূল খাদ্য, ছোট-বড় মাছ এবং অক্টোপাস-স্কুইড জাতীয় বৃহৎ অমেরুদণ্ডীরা।
গবেষকেরা দেখেছেন, 'ব্ল্যাঙ্ক ব্যারেনে' খাদ্যের সন্ধানে প্রায় ৩,০০০ গভীরে চলে যায় গ্রেট হোয়াইটরা। এতদিন সমুদ্রগর্ভের এত গভীরে এই হাঙরের উপস্থিতির কথা এর আগে তাঁদের ধারণায় ছিল না!
মন্টেরে বে অ্যাকোয়ারিয়ম'-এর বিজ্ঞানী সালভাদর জর্জেনসন জানিয়েছেন, পরিযায়ী হাঙরগুলির মূল আস্তানাটি 'ব্ল্যাঙ্ক ব্যারেন' এলাকায় গভীরতম অংশের সামান্য উপরে। তবে সমুদ্রগর্ভের ওই 'মিড ওয়াটারে'ও সূর্যের আলোর 'প্রবেশ নিষেধ'! সালভাদর বলেন, 'গ্রেট হোয়াইট হাঙরদের জন্যই ওই প্রত্যন্ত অঞ্চলের জীব-বৈচিত্রগত গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা অনেক নতুন তথ্য জানতে পেরেছি! তবে মিডল ওয়াটারের গোপন জীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই এখনও আমাদের অজানা।' তিনি জানান, হাওয়াই উপকূলের প্রায় ১,২০০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থিত ওই অঞ্চলের ১৬০ মাইল ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার ক্ষেত্র জুড়ে সমুদ্রগর্ভে নতুন করে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছেন তাঁরা।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রায় দেড় দশক আগে প্রাণীবিজ্ঞানী বারবারা ব্লক প্রথম মন্টেরে বে'তে হাঙর সমীক্ষার কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন, অগস্ট থেকে ডিসেম্বরের গোড়া পর্যন্ত গ্রেট হোয়াইটরা সেখানকার 'লাল ত্রিকোণ' অঞ্চলে ঘোরাফেরা করলেও তারপর হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। 'স্ট্যানফোর্ড মেরিন স্টেশন'-এর গবেষক বারবারা এর পরে ৩৬টি গ্রেট হোয়াইট হাঙর ধরে তাদের পাখনায় স্যাটেলাইট-ট্যাগ লাগিয়ে নজরদারি শুরু করেন। কয়েক বছর ধরে উপগ্রহ মারফত ওই হাঙরগুলির গতিবিধি পর্যবেক্ষণের পরে তাদের শীতের বিচরণক্ষেত্রের সন্ধান মেলে। বারবারা বলেন, 'ব্রিটেনের প্রায় দ্বিগুণ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ওই সমুদ্রে সমীক্ষা চালানোর জন্য সেখানে স্থায়ী একটি পর্যবেক্ষণ ক্ষেত্র বানানোর প্রয়োজন ছিল। আমরা তাই ফ্যালকোর নামে একটি জাহাজে মাসকয়েক ধরে ওখানে ঘাঁটি গেড়েছিলাম।' তিনি জানান, দু'দশক আগে 'ব্ল্যাঙ্ক ব্যারেন' সমুদ্রতলে সোনার সন্ধানে সমীক্ষার কাজ হয়েছিল। সে সংক্রান্ত তথ্য হাঙর গবেষকদের কাজে লেগেছিল। সূত্রঃ ডেউলি ফ্রিম্যান।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ