Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশ এখনও জঙ্গি হামলার ঝুঁকিতে : যুক্তরাষ্ট্র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৫ এএম

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত জঙ্গি হামলার সংখ্যা কমলেও ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস) এবং ‘আল কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের’ (একিউআইএস) মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর হামলার ঝুঁকি এখনও যায়নি।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের উল্লেখ করার পাশাপাশি প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হামলার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছে। গত বুধবার প্রকাশিত মার্কিন প্রতিবেদনে ২০১৭ সালে সংঘটিত তিনটি হামলার উল্লেখ রয়েছে, যেগুলোর ক্ষেত্রে আইএস দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল। এ সংখ্যা আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সালের চেয়ে কম। মার্কিন প্রতিবেদনের ভাষ্য, বাংলাদেশ সরকার হামলার জন্য স্থানীয় জঙ্গিদের দায়ী করলেও ২০১৫ সাল থেকে দেশটিতে সংঘটিত প্রায় ৪০টির মতো হামলার দায় স্বীকার করেছে একিউআইএস এবং আইএস। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের কোনও ঘোষিত কর্মকৌশল না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সঙ্গে দেশটির সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদেশি জঙ্গি সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট আইনের অভাব রয়েছে বাংলাদেশে। তবে সন্দেহভাজন বিদেশি জঙ্গি ও তাদের সহযোগীদের বিদ্যমান আইনের অন্যান্য ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে সীমান্ত ও বিদেশে যাওয়া-আসার পয়েন্টগুলোতে বাংলাদেশের কঠোর নজরদারি প্রচেষ্টার প্রশংসা করা হয়েছে। কিন্তু উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। প্রতিবেদনের ভাষ্য, বাংলাদেশ আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত তথ্য ইন্টারপোলের সঙ্গে আদান-প্রদান করেলেও দেশটি জঙ্গিদের কোনও নজরদারি তালিকা প্রস্তুত করেনি। তাছাড়া বাংলাদেশের ইন্টারঅ্যাক্টিভ অ্যাডভান্সড প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন সিস্টেম নেই।’
উৎকণ্ঠার অপর একটি বিষয় হিসেবে প্রতিবেদনে জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত অপরাধ প্রমাণে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, জঙ্গিদের আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার মতো জটিল অভিযোগের তদন্ত করা ও অভিযোগ প্রমাণ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা যথেষ্ট নয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জঙ্গিবাদবিষয়ক প্রতিবেদনটিতে আফগানিস্তানের বিষয়ে বলা হয়েছে, দেশটি এখনও আফগান তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের আগ্রাসী ও পরিকল্পিত হামলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসব হামলার অনেকগুলোই পাকিস্তানে থাকা জঙ্গিদের নিরাপদ ঘাঁটি থেকে পরিচালিত। ভারতও জঙ্গি হামলার শিকার হয়ে চলেছে। ভারতের প্রসঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ছাড়াও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সশস্ত্র মাওবাদী যোদ্ধাদের প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়েছে মার্কিন প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালানো জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনী অভিযান চালালেও লশকরে তাইয়্যেবা (এলইটি) এবং ‘জয়শে মোহাম্মদের’ (জেইএম) মতো মূলত দেশের বাইরে অপতৎপরতা চালানো জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিষয়ে পাকিস্তান যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি। ২০১৭ সালেও সংগঠনগুলো পাকিস্তানে বসে তহবিল ও সদস্য সংগ্রহ, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, সংগঠিত করা ও জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার মতো কাজ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের ক্ষেত্রে আইএস, আল কায়েদা ও অন্যান্য জঙ্গিদের দমনে সফলতা অনেক বেশি উল্লেখ করে মার্কিন প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০১৭ সালে এসে জঙ্গিবাদ ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদনের ভাষ্য, ‘তারা ক্রমেই অনেক বেশি বিক্ষিপ্ত ও গুপ্ত ধরনের হয়ে উঠেছে। তারা এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের দূরবর্তী অনুসারীকেও হামলার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারছে। এতে প্রচলিত সামরিক পদক্ষেপের দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটা আর অতটা কার্যকর হচ্ছে না। তাছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা জঙ্গিদের কারণে ক্রমেই এসব জঙ্গি সংগঠনগুলো অভিজ্ঞ ও দক্ষ হয়ে উঠেছে, যাদের পারস্পারিক যোগাযোগ অনেক গভীর।’
প্রতিবেদনে জঙ্গিবাদে সহায়তাকারী দেশগুলোর মধ্যে ইরানকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অনেকগুলো সংঘাতে প্ররোচনা দেওয়া, বৈধ সরকারকে উপেক্ষা করা এবং আফগানিস্তান, বাহরাইন, ইরাক, লেবানন ও ইয়েমেনে মার্কিন স্বার্থকে ক্ষুণœ করার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে ইরানকে। প্রতিবেদনের ভাষ্য, ‘ইরান ও হেজবুল্লাহ সিরিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে শক্তিশালী ও যুদ্ধে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে, যে অভিজ্ঞতা ও শক্তি তারা বিশ্বের অন্যান্য স্থানে ব্যবহার করতে চায়।’
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জঙ্গিবাদ বিষয়ক এই বার্ষিক প্রতিবেদন মার্কিন কংগ্রেসে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে এসব তথ্য বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় নীতি প্রস্তুতে সহায়ক হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ