পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের আর্থিক পরিধি অনুসারে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি, যা দেশের প্রয়োজনে হয়নি। সংশ্লিষ্টদের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যেই হয়েছে। অনেক ব্যাংক নানা অনিয়ম ও অদক্ষতার কারণে দেউলিয়া হতে চলেছে। তাই অতিরিক্ত ও দুর্বল ব্যাংকগুলোকে প্রধান ব্যাংকগুলোর সাথে একীভূত করার জন্য অর্থনীতিবিদগণ অনেকদিন থেকেই বলছেন। কিন্তু তা করা হয়নি। এমনকি ব্যাংক পরিচালনার জন্য ‘গাইড লাইন’ তৈরি করার অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পালিত হয়নি। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটের মধ্যে আনার সরকারি নির্দেশও বাস্তবায়িত হয়নি। তেমনি ব্যাংকগুলোর দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বন্ধ করার জন্য বিশেষজ্ঞগণের ‘ব্যাংক কমিশন’ গঠন করার দাবিও পালিত হয়নি। উল্টো আইন করে একই পরিবারের অনেককে দীর্ঘদিন ব্যাংকের হর্তাকর্তা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ার পরও ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে এবং তা রাজনৈতিক আনুকূল্যে। দেশে যে হারে ব্যাংক গড়ে উঠেছে, সে হারে জনসম্পৃক্ততা বাড়েনি। বরং প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই এ ক্ষেত্রে পাশের দেশগুলোর মধ্যেও সর্বনিম্ন। স¤প্রতি বিআইবিএম আয়োজিত সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১.৬% মানুষ বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। যা মালয়েশিয়ায় ৩০.৮%, শ্রীলংকায় ৭.১%, ভুটানে ৬.৪%, ভারতে ৪% ও নেপালে ২.৪%। এছাড়া, বাংলাদেশে ব্যাংক হিসাবধারীর হারও আশেপাশের দেশগুলোর চেয়ে কম। এ ক্ষেত্রে শ্রীলংকার ৮২.৭%, মালয়েশিয়ায় ৮০.৭%, ভারতে অর্ধেকের বেশি আর বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে ৩১%। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ড রয়েছে মালয়েশিয়ায় ৪১.২%, ভারতে ২২.১%, শ্রীলংকায় ২৪.৯% ও ভুটানে ১৭.২% আর বাংলাদেশে ৫.২%। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্মস অ্যাডভাইজর বলেন, এসডিজি ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করে স্কুল ব্যাংকিং, কৃষকের জন্য ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব ও এজেন্ট ব্যাংকিং প্রবর্তন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা ব্যাংকিং খাতে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এমডি মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, প্রকৃত কৃষকরা যাতে ঋণ পান, সেদিকে কৃষি ব্যাংক সর্বোচ্চ নজরদারি করছে। প্রকৃত কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে পারলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অনেকাংশে বেড়ে যাবে। বিআইবিএম’র সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রতি পাঁচ কিলোমিটারে একটি ব্যাংকের শাখা খোলার সিদ্ধান্ত হলেও লাভজনক না হওয়ায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এজন্য ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও এজেন্ট ব্যাংকিং অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
মূলধন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে সর্বনিম্নে রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদন মতে, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণে ২০১৭ সালের অবস্থান হচ্ছে, ভারতে ১৩.৯%, শ্রীলঙ্কায় ১৫.২%, পাকিস্তানে ১৫.৮% আর বাংলাদেশে ১০.৮%। বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকিং খাতে মূলধন ঘাটতি সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতাই ফুটে ওঠে। এর ফলে শুধু ব্যাংকিং খাতে নয়, পুরো অর্থনীতিতেই বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা থাকে। বিদেশি বিনিয়োগেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে ঘাটতির মুখে পড়া ব্যাংকগুলোর সাথে বিদেশি ব্যাংকগুলো লেনদেন করতে আস্থার সঙ্কট দেখা দেয়। এতে পণ্য আমদানি-রফতানিতে গ্যারান্টি হিসেবে তাদের বাড়তি ফি দিতে হয়। ফলে ব্যবসায় ব্যয় বেড়ে যায়। তাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য রোডম্যাপ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৫ সালে। সে মতে, চলতি বছরের মধ্যে দেশের ব্যাংকিং খাতকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ১২.৫% হারে মূলধন সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। চার বছর মেয়াদের তিন বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। প্রধান কারণ, ঊর্ধ্বমুখী খেলাপি ঋণ। আর এ খেলাপি ঋণের আধিক্য সরকারি ব্যাংকগুলোতেই বেশি। তাই সরকারি ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। ফলে মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে। আর এর পুরো প্রভাব পড়েছে গোটা ব্যাংকিং খাতে। গত কয়েক বছর সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক, জনতা ব্যাংকের বিসমিল্লাহ গ্রুপ, এনন টেক্স, বেসিকসহ বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারি হয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে গেছে। এ দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দুর্নীতি ও লুটপাটের দায় জনগণের ঘাড়েও চাপানো হচ্ছে। গত তিন বছরে সরকারি ৬ ব্যাংকের ভর্তুকি দেয়া হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। তাই পরিস্থিতি উন্নতি করতে হলে ব্যাংকগুলোকে আরও সতর্কতার সাথে ঋণ বিতরণ করতে হবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। স্মরণীয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাস শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯,৩৪০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০.৪১%। জুন শেষে ৫৭টি ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। রাইট অফ করা ঋণ খেলাপি ঋণের সঙ্গে যোগ করলে মোট খেলাপি দাঁড়াবে এক লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০.১৩%। ওই সময় মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৩১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের চাপ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্বের অভাব ইত্যাদি কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। স্মরণীয়, অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছেন, গত জুন পর্যন্ত দেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৮ জন, অনাদায়ি অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩১হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা ও খেলাপি ঋণের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকের সংখ্যা ৮৮টি। উপরন্তু তিনি শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকাও উপস্থাপন করেছেন সংসদে। বিপুল অংকের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলকরণের পরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেশে সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এবং বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। যা’হোক, বিপুল মন্দ ঋণের কারণে ১৩টি ব্যাংকের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে, যা সরকার স্যালাইন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। তথাপিও বেশিদিন বাঁচবে কি-না সন্দেহ রয়েছে। বিপুল ঋণ গ্রহণের কারণেই সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে দ্রুত গতিতে অতি ধনী হয়েছে অনেকেই। তারা এ ক্ষেত্রেও বিশ্বে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে! এ ব্যাপারে গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ এক্সের ‘ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট ২০১৮’ মতে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ধনকুবেরদের সামগ্রিক সম্পদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৭.৩%। আর ধনীদের সম্পদ প্রবৃদ্ধির এ হারের সুবাদে ওয়েলথ এক্সের তৈরি তালিকায় শীর্ষ দশের প্রথম স্থানটিই বাংলাদেশের’। আর সেই কারণে এবং অন্য বিভিন্ন খাতে ব্যাপক অবৈধ উপার্জনের কারণে বাংলাদেশে আয়-বৈষম্য প্রচণ্ডভাবে বাড়ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল একটা ক্ষুদ্র ধনাঢ্য গোষ্ঠির কাছে গিয়ে জমছে। ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদনে তারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম। উল্লেখ্য যে, বলার অপেক্ষা রাখে না আমাদের দেশে যাদের হাতে সম্পদ আসে, সেটার পেছনে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের একটা বড় ভূমিকা থাকে। রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য যারা পায় বা যাদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার যোগাযোগ থাকে, তারাই সম্পদের মালিক হয়’।
ব্যাংকের মোট পরিচালন আয়ের ব্যয় বাংলাদেশে সর্বাধিক আর নিট মুনাফা সর্বনিম্ন। যেমন: ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত, এর পরিচালন আয়ের ব্যয় মাত্র ৩০.৬১%, বাকি ৬৯.৩৯% নিট মুনাফা, ব্যাংক অব চায়না, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যাংক বলে খ্যাত, এর পরিচালন আয়ের ব্যয় মাত্র ৩৪.১৬%, বাকী ৬৫.৮৪% নিট মুনাফা, এইচএসবিসি হোল্ডিংস এর পরিচালন আয়ের ব্যয় ৫১.২৭% বাকী ৪৮.৭৩% নিট মুনাফা, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিটি গ্রুপ এর পরিচালন আয়ের ব্যয় ৫৪.৯৫%, বাকী ৪৫.০৫% নিট মুনাফা, জেপি মর্গান চেজ অ্যান্ড কোং, যা বিশ্বের বৃহৎ ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম, এর পরিচালন আয়ের ব্যয় ৫৮.৬৩%, বাকী ৪১.৩৭% নিট মুনাফা, ব্যাঙ্কো সান্তান্দার পরিচালন আয়ের ব্যয় ৪০.৫৩%, বাকী ৫৯.৪৭% নিট মুনাফা, এগ্রিকালচারাল ব্যাংক অব চায়নার পরিচালন আয়ের ব্যয় ৩৮.৫৯%, বাকী ৬১.৪১% নিট মুনাফা ও ব্যাংক অব আমেরিকার পরিচালন আয়ের ব্যয় ৬৪.১৫%, বাকী ৩৫.৮৫% নিট মুনাফা। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র এর বিপরীত। এ দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত ইসলামী ব্যাংক লি: এর পরিচালন আয়ের ব্যয় ৮৬.৩৩%, বাকী ১৩.৬৭% নিট মুনাফা। এছাড়া, বেসরকারি অন্য ব্যাংকের আয় অনুপাতে ব্যয় আরও বেশি। তার চেয়েও বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয়! বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর পরিচালন আয়ের ৭৮.৫০% ব্যয় আর ২১.৫% নিট মুনাফা হয়েছে। অর্থাৎ পরিচালন ব্যয়ের ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘দ্য ব্যাংকার’ ম্যাগাজিনের তথ্য মতে, বিশ্বের ব্যাংকিং খাতের পরিচালন আয়ের গড় ব্যয় ৬৭.১১%, আর বাংলাদেশে ৭৮.৫০%। বাংলাদেশে ব্যাংকারদের উচ্চ বেতন-ভাতা, বোনাসসহ পরিচালন ব্যয়ের বাহুল্য, খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণের চাপ ও উচ্চ কর্পোরেট ট্যাক্সের কারণেই এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ হচ্ছে, ব্যাংকগুলোর আমানত আর ঋণের সুদের ব্যবধান বিশ্বে সর্বাধিক। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রায়ই বিপুল অর্থ বিভিন্ন ফান্ডে দান করে কৃতিত্ব অর্জন করে, যা নিয়মবহির্ভূত কাজ বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। কারণ, উক্ত অর্থের মালিক আমানতকারীরা। যাদের অনুমতি ছাড়াই দান করা হয়। এছাড়া, পুঁজির বেশিরভাগ জোগান দেয় সাধারণ মানুষ। কিন্তু তারা ঋণ তেমন পায় না। বেশিরভাগ ঋণ পায় ধনীরা। যাদের আমানতের পরিমাণ নগণ্য। উপরন্তু প্রদেয় ঋণের ক্ষেত্রে রয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা ও ব্যাপক দুর্নীতি হয়। ব্যাংকের সেবা প্রাপ্তিতেও ভোগান্তির অন্ত নেই। টাকা জমা রাখতে ও উঠাতে অনেক সময় লাগে। ক্ষেত্র বিশেষে এক বেলা শেষ হয়ে যায়। আর বিভিন্ন সঞ্চয় পত্রের ক্ষেত্রে প্রায় একদিন লেগে যায়। এ জন্য ব্যাংকের লোকদের অদক্ষতা, অবহেলা ইত্যাদি ছাড়াও সেকেলে পদ্ধতি দায়ী। যেমন: সঞ্চয় পত্রের ক্ষেত্রে একই ব্যক্তির একই তারিখে গচ্ছিত অর্থের অনেকগুলো চেক বই প্রদান করা হয়, যার প্রতিটিতেই কয়েকটি স্থানে কাজ করতে হয়। ফলে অনেক সময় লাগে। অথচ গচ্ছিত অর্থের বিপরীতে একটি চেক বই প্রদান করা হলে পেমেন্ট খুব দ্রুত হতে পারে। আরও দ্রুত হতে পারে, যিনি চেক গ্রহণ করবেন তিনিই টাকা প্রদান করে পরবর্তীতে অভ্যন্তরীণ কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থা করতে পারলে।
দেশের এসডিজি পূরণ এবং ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল ও ২০৪১ সালের মধ্যে ধনী দেশে পরিণত হওয়ার টার্গেট করা হয়েছে। কিন্তু এসবের জন্য প্রয়োজন সার্বিক উন্নতি, যা ব্যাংকের সাথে জনসম্পৃক্ততা বিশ্ব পর্যায়ের সমান করা ছাড়া সম্ভব নয়। এছাড়া, ব্যাংকের সব ধরনের নিয়ম-পদ্ধতিও বিশ্ব পর্যায়ের করা দরকার। ঋণ খেলাপী দেশের শান্তি ও উন্নতির চরম অন্তরায়। তাই এটাকে নির্মূল করা দরকার। সে লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ঋণ গ্রহণকারী ও প্রদানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এছাড়া, অতি দ্রুত ব্যাংক কমিশন গঠন করে কার্যকর করা দরকার। প্রধান আমানতকারীদের মধ্যে বেশিরভাগ ঋণ প্রদানে বাধ্য করারও ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।