পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাকালে ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৫০ লাখ পরিবারকে মাসিক আড়াই হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা মঞ্জুর করেন। এজন্য দেশব্যাপী দরিদ্র পরিবারের তালিকা প্রণয়নের জন্য সচিব পর্যায়ের ৬৪ জনের নেতৃত্বে জালা সমন্বয় কমিটিা গঠন ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়। দেখা গেছে, অর্থ বিতরণের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়ম হয়। এই অনিয়মের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, কাউন্সিলররা জড়িয়ে পড়েন। তাদের অনেকে একাধিক মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিস্তারিত প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শতাধিক জনপ্রতিনিধিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাময়িক বরখাস্ত করে। এর মধ্যে অন্তত ৩০ জন উচ্চ আদালতে রিট করে স্বপদে ফিরে আসেন। গতকাল বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের জরিপ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত টাকা আদায় করেন। এছাড়া মেবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট কমিশন ফি বাবদ ৬৮.২০ শতাংশ কেটে রাখে। এর ফলে তালিকাভুক্ত পরিবারগুলো সরকার নির্ধারিত আড়াই হাজার টাকার পরিবর্তে দুই হাজার টাকারও কম টাকা পাচ্ছে। অন্যদিকে অনিয়মের সাথে যুক্তরা বরাদ্দকৃত অর্থের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জরিপে উল্লেখ করা হয়, ৫৬ শতাংশ পরিবার সহায়তা পেতে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হচ্ছে। এছাড়া এখনো ৬৯ শতাংশ পরিবার এ অর্থ পাওয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
যেকোনো সরকারি ত্রাণ ও অর্থ থেকে শুরু করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তায় বিভিন্ন কার্যক্রমে বিতরণের সাথে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি নতুন নয়। ওএমএস, কাবিখা’র মতো পুরনো সহায়তামূলক কার্যক্রমের দুর্নীতির বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। এর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়নি। এসব কার্যক্রম অনেকটা ‘মুখ চিনে, লোক দেখে’ পরিচালিত হচ্ছে। বিতরণকারীদের আত্মীয়-স্বজন বা দলীয় লোকজনই অগ্রাধিকার পাচ্ছে। কর্মসূচির সাথে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন জড়িত থাকায় তাদের দলীয় লোকজনই বেশি উপকৃত হচ্ছে। অন্যদলের লোকজন বাইরে থেকে যাচ্ছে। অথচ সরকারি এসব সহায়তামূলক কার্যক্রম দলমত নির্বিশেষে সকলের জন্যই প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে দরিদ্র ও প্রান্তিক লোকজন কোনো রকমে খেয়েপরে বাঁচতে পারে। দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বানরের পিঠা ভাগের মতো ঘটনা ঘটছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়, ক্ষদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ কৃষি খাতে যে ১ লাখ ১১৩ কোটি টাকার প্রণোদনামূলক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তাতেও অর্থ ছাড়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বড় বড় শিল্পকারখানার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের বেশিরভাগ ছাড় হলেও ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পসহ কৃষি খাতের অর্থ ছাড়ের বিষয়টি বহুদূর পিছিয়ে রয়েছে। যে ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায় এসব অর্থ ছাড়ের দায়িত্ব তার একটি শ্রেণী বড় বড় শিল্পকারখানার বড় অংকের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে আগ্রহী বেশি। তাতে তাদের কমিশনের ভাগটিও বেশ বড় হয়ে থাকে। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কৃষি খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত নানা অজুহাত তুলে তা ছাড়ে বিলম্ব করা হচ্ছে। এর রহস্য বুঝতে অসুবিধা হয় না। অন্যদিকে ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে ১২০০ কোটি টাকার নগদ যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তার লোভ সমলানোও বিতরণ সংশ্লিষ্ট লোকজনের পক্ষে অসম্ভব। কারণ হচ্ছে, এ অর্থ একেবারে নগদে হাতেনাতে পাওয়া যায়। ফলে যেসব পরিবার এ অর্থ পাবে বা পাচ্ছে, তাদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া সম্ভব এবং তা নেয়া হচ্ছে। এ ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত জনবান্ধব কর্মসূচিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা হয়েছে। বেছে বেছে দলীয় লোকজনদের সহায়তা দেয়ার মধ্য দিয়ে কর্মসূচিটিকে দলীয়করণ করা হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী এর অর্থ দলমত নির্বিশেষে কষ্টে পড়া পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্যই বরাদ্দ করেছেন।
যেকোনো জনকল্যাণকর সরকারি সহায়তামূলক কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি দুর্নীতিমুক্ত করতে না পারা অত্যন্ত দুঃখজনক। সহায়তামূলক কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেই তা দলীয়করণসহ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এর সাথে জড়িতরা সহায়তা পায়ার যোগ্য লোকজনের সাথে অমানবিক আচরণ করে চলেছে। করোনাকালে সরকারের তরফ থেকে প্রণোদনামূলক প্যাকেজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তা দেশের ভাবমর্যাদার জন্যও হানিকর। এ সময়ে বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা যেসব সহায়তামূলক অর্থ বরাদ্দ করা হবে, তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দাতা সংস্থাগুলো অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা থেকে যদি পিছিয়ে যায়, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তারা চাইবে, তাদের বরাদ্দকৃত অর্থ বিতরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। তা নিশ্চিত করা না হলে সহায়তামূলক কার্যক্রম স্থগিত বা বন্ধ করে দিতে পারে, যা দেশের এই সংকটকালকে আরো কঠিন করে তুলবে এবং তুলতে পারে। আমরা মনে করি, করোনাকালে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সরকারের নেয়া বিভিন্ন সহায়তামূলক কর্মসূচি সফল করতে সব ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতির সাথে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণের অর্থ জনগণের কল্যাণে বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বরদাস্ত করা যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।