Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রেমে সাড়া না পেয়ে স্কুলছাত্রী হত্যা

হাটহাজারীতে বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ

চট্টগ্রাম ব্যুরো ও হাটহাজারী সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় বাড়ির মালিকের কন্যাকে তুলে নিয়ে হত্যার পর লাশ গুম করেছে ভাড়াটিয়ার পুত্র। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ঘটে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা। নিখোঁজ স্কুল ছাত্রীর গলিত লাশ পাওয়া গেছে ভাড়াটিয়ার ড্রয়িংরুমে। পৌরসভার ফটিকা গ্রামের শাহজালাল পাড়ার সালাম ম্যানশনের ৪ তলার সোফার নীচ থেকে রোববার রাতে পুলিশ তাসনিম সুলতানা তুহিনের (১৩) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। এ খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ভাড়াটে শাহজাহানের বখাটে পুত্র শাহনেওয়াজ মুন্নাকে (২৪)। প্রাথমিকভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে তুহিনকে বাসায় নিয়ে হত্যা করেছে ওই বখাটে। পরে লাশ বস্তায় ভরে লুকিয়ে রাখা হয় গুমের উদ্দেশে। গ্রেফতার হওয়ার পর খুনের দায় স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণনাও দিয়েছে এই আত্মস্বীকৃত খুনি। নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার তুহিন ওই ভবনের মালিক উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের নেয়ামত আলী সারাং বাড়ির আবু তৈয়বের কন্যা। হাটহাজারী গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। আবু তৈয়ব সস্ত্রীক পবিত্র হজ পালন শেষে সউদি আরবে অবস্থান করছেন। বুধবার তাদের দেশে ফেরার কথা। এদিকে স্কুলছাত্রী তুহিনের খুনির বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে হাটহাজারী। গতকাল (সোমবার) তার সহপাঠীরা বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। রোববার রাতে লাশ উদ্ধারের পর সড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম জানিয়েছেন, গ্রেফতার মুন্না খুনের দায় স্বীকার করেছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। যথাসময়ে মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচার হবে বলেও জানান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আকিব জাবেদ বাদী হয়ে মুন্না, তার মা নিগার সুলতানা এবং বাবা পল্লী চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহাজানকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মুন্নার বাবা শাহজাহান দীর্ঘদিন থেকে সালাম ম্যানশনে ভাড়া থাকেন। আবু তৈয়ব দম্পতি হজে যাওয়ার সময় তুহিনকে একই ভবনে তার নানার বাসায় রেখে যান। শুক্রবার প্রাইভেট পড়তে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় তুহিন। এরপর থানায় প্রাথমিক ডায়েরি করা হয়। তুহিনের স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মুন্নাকে কয়েক দফা থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে সে পুরো ঘটনা এড়িয়ে যায়।
গ্রেফতারের পর মুন্না জানায়, কৌশলে সে তুহিনকে তার বাসায় নিয়ে যায়। পুলিশ ধারণা করছে প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় ঝগড়ার এক পর্যায়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে লাশ বস্তাবন্দি করে ড্রয়িংরুমে সোফার নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। খুনের ঘটনার সময় মুন্নার বাবা মা বাসায় ছিলেন না। কিন্তু দু’দিন পর লাশের গন্ধ বের হলে তার মা বাবা ঘটনা জেনে যায়। এরপর তারা কৌশলে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। অন্যদিকে লাশ গুম করতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে মুন্না। একপর্যায়ে রোববার সন্ধ্যায় পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সে সবকিছু স্বীকার করে। পরে পুলিশ তাকে নিয়ে বাসায় অভিযান চালিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
স্থানীয়রা জানায়, মুন্না স্থানীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং সে ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদক সেবন ও ব্যবসা করে আসছিল। হাটহাজারী মডেল থানার ওসি বেলাল উদ্দীন জাহাংগীর বলেন, কি কারণে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সহপাঠীদের বিক্ষোভ : গতকাল সকালে চট্টগ্রাম রাঙামাটি সড়কে অবস্থান নিয়ে খুনিদের বিচার দাবিতে তুহিনের সহপাঠী ও সর্বস্তরের জনতা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। মিছিল চট্টগ্রাম রাঙামাটি সড়ক থেকে কাচারী সড়ক হয়ে উপজেলা প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি-খাগড়াছড়িসহ ২২টি রুটে ২ ঘণ্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। বাদ আছর নামাজে জানাজাশেষে উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নস্থ পারিবারিক করবস্থানে তুহিনের লাশ দাফন করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ