মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মিয়ানমার ও চীন তাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সুসংহত করছে। বস্তুত বেইজিং দ্রুততার সাথে মিয়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হয়ে ওঠেছে। তবে এই জোরালো সম্পর্ক সরকারের অনেককে নার্ভাস করে ফেলছে।
এমনকি স্টেট কাউন্সিলর, দেশটির বেসামরিক নেতা আঙ সান সু চি চীনের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। চীনের আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের আশঙ্কা প্রশমিত করতে চান তিনি।
তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার গতি প্রায় অপরিবর্তনীয়। আর গত সপ্তাহান্তে মিয়ানমারে চীনা সম্পৃক্ততা আরেক দফা বেড়েছে বেইজিংয়ের প্রস্তাবিত চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর (সিএমইসি) সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের মধ্য দিয়ে। এতে দুই দেশ অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো বাড়ানো ও পরস্পরের কানেকটিভিটি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রী ড. থান মিয়ন্ত সম্প্রতি বলেছেন, পাশ্চাত্য বিনিয়োগের অনুপস্থিতিতে চীনই আমাদের একমাত্র বিকল্প।তবে করিডোরের সাথে মেগা প্রকল্পগুলো জড়িত থাকায় আমাদের সতর্কতার সাথে এগুতে হবে।
কৌশলগত পরিকল্পনাটি পাইপলাইনে ছিল বেশ কিছু দিন। গত বছর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং ইয়ির সফরের সময় সিএমইসির প্রস্তাবটি দেয়া হয়েছিল। প্রস্তাবটির কেন্দ্রে রয়েছে ১,৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ করিডোর। এটি চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইয়ানান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ের সাথে মিয়ানমারের প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক এলাকা যথা মান্দালয়, ইয়াঙ্গুন ও পশ্চিমে কিয়াকফিউ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে সংযুক্ত করবে।
তবে এটি আসলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ। এটি এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের অন্তত ৭০টি দেশকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনার মহাপরিকল্পনার অংশ।
সু চি গত বছর বেইজিংয়ে বিআরআই সম্মেলনে যোগ দিয়ে এ ব্যাপারে তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ওইসময় বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি হয়েছিল। তবে সরকার তা প্রকাশ করেনি।
রাখাইনে মানবাধিকার ভয়াবহভাবে লঙ্ঘনের জন্য পাশ্চাত্য এখন মিয়ানমারের ওপর ক্রুদ্ধ। কিন্তু চীন ছাড়া কেবল জাপান আর আসিয়ানের কয়েকটি দেশ মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছে। ফলে চীনের দিকে হাত বাড়ানো ছাড়া মিয়ানমারে কাছে আর কোনো বিকল্পই নেই।
মিয়ানমারের বিনিয়োগ ও কোম্পানি প্রশাসনের (ডিআইসিএ) মহাপরিচালক আং নাইং ওও এ ব্যাপারে বলেন, পরিকল্পিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলো থেকে মিয়ানমার ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। এটি উভয় দেশের জন্য উইন-উইন অবস্থা। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ চুক্তি হতে পারে চলতি বছরের শেষ দিকে। তখন মিয়ানমার আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশে পরিণত হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ চীনের সাথে মিয়ানমারকে সংযুক্ত করা হলে মিয়ানমারে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।
সিএমসিই একটি ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা। এতে পরিবহন ও বন্দরসহ বেশ কয়েকটি অবকাঠামো স্কিম রয়েছে। তাছাড়া অর্থনৈতিক জোন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনাও রয়েছে।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়ার্কিং গ্রুপ পর্যায়ে যে ১৫ দফা খসড়া সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে, তাতে অবকাঠামো, নির্মাণ, শিল্প, কৃষি, সীমান্ত অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোন, পরিবহন, অর্থ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পর্যটন, টেলিযোগাযোগ, প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়াদি রয়েছে। মন্ত্রিসভা মে মাসে প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারকে সম্মতি দেয়। চীনা প্রস্তাবে মিয়ানমারের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও খুশি। তাদের মতে, মিয়ানমার চীনের বিআরআই থেকে সরে থাকতে পারে না।
বেইজিং ও নেপিতাও উভয়েই সিএমইসি ও কিয়াকফিউ চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নে আগ্রহী। মিয়ামারে চীনা প্রেসিডেন্ট শির সফরের সময়ই চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী নভেম্বরে হতে পারে ওই সফর। তবে তা পিছিয়েও যেতে পারে।
তবে বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার গুরুত্ব মিয়ানমার উপলব্ধি করতে পারলেও এবং চীনের অর্থনৈতিক সমর্থনের প্রতি কৃতজ্ঞ, তারপরও দেশটির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। মিয়ানমারের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ অস্ট্রেলিয়ার সিন টার্নেল এশিয়া ফোকাসকে বলেন, একটি দেশের ওপর যাতে মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক অত্যধিক নির্ভরশীল না হয়ে পড়ে, তা উপলব্ধি করে মিয়ানমার। সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।