পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আসামের এনআরসি তথা নাগরিকপঞ্জি ইস্যুটিকে এখন পশ্চিমবঙ্গে প্রয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। তাদের টার্গেটে রয়েছে কথিত ‘অনুপ্রবেশকারীরা’। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, তাদের প্রাথমিক টার্গেট হলো মুসলিম অনুপ্রবেশকারী। এরই মধ্যে বিজেপির শীর্ষ নেতারা ভারতে অবস্থানরত ‘অবৈধ বাংলাদেশী’দের বের করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তা করতে পশ্চিমবঙ্গসহ সারা ভারতে এনআরসি তালিকা করার দাবি জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে কব্জা করতে বিজেপি নিয়েছে নতুন কৌশল। এর মধ্যে রয়েছে গ্রামে গ্রামে গ্রুপ মিটিং, জেলা শহরগুলোতে সেমিনার, হ্যান্ডবিল বিতরণ, রাজ্যজুড়ে ছোট ছোট র্যালি এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বড় আকারে র্যালি। এসবের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বিজেপির এমন উদ্যোগ এমন এক সময়ে নেয়া হয়েছে যখন দলটির জাতীয় পর্যায়ের নেতারা প্রকাশ্যে ভারতে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশীদের বের করে দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। তাই বিজেপির এই উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রধান কার্যালয় ৬ মুরালিধর সেন লেন। সেখানকার সূত্রগুলো বলেছেন, বিজেপির একটি রিফিউজি সেল বা শরণার্থী সেল আছে। তারা প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যাওয়া অমুসলিম শরণার্থীদের বিষয়ে কাজ করে। ওই শরণার্থী সেল পশ্চিমবঙ্গে ২১ দিনের একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক শায়ন্তন বসু বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসির পক্ষে প্রচারণা চালাবো আমরা। এখানকার ৩৭টি সাংগঠনিক জেলায় আমরা এ লক্ষ্যে দায়িত্ব দিচ্ছি ২০ হাজার মানুষকে।
জুলাইয়ে আসামে এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হয়। ওই তালিকায় রাজ্যের ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষের ভিতর থেকে বাদ রাখা হয় ৪০ লাখকে। তারপর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বিতর্কে অখন্ড অংশ হয়ে উঠেছে অনুপ্রবেশ ইস্যু। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটাকে ‘বাঙালি বিরোধী উদ্যোগ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি এর কঠোর বিরোধিতার কথা বলেছেন। এ অবস্থানের কারণে মুসলিমদের কাছে তিনি প্রিয়। পশ্চিমবঙ্গে ভোটারদের শতকরা ২৮ ভাগই মুসলিম।
বিজেপির ভিতরের সূত্রগুলো বলেছেন, লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মমতার দুর্গে হানা দেয়ার জন্যই তারা মেরুকরণ করতে চান। এ জন্যই ফোকাস দেয়া হচ্ছে এনআরসির ওপর। দলের জাতীয় পর্যায়ের সেক্রেটারি রাহুল সিনহা বলেছেন, বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ পশ্চিমবঙ্গে একটি ইস্যু। আমরা জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করতে চাই যে, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির ক্ষতি করছেন মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা। তাদেরকে নির্বাচনে জেতার জন্য সমর্থন দিচ্ছেন মমতা। আমাদের এই যুক্তি অবশ্যই আমাদেরকে সহায়তা করবে। তার মতে, যেহেতু জাতীয় পর্যায়ের নেতারা এরই মধ্যে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে কথা বলেছেন, তাই এই ইস্যুটি তাদের পূর্ণশক্তি যোগাবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিজেপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতি অমিত শাহ। তিনি বলেন, ভারতে একজন সিঙ্গেল বাংলাদেশীকে ছেড়ে কথা বলবে না বিজেপি। আমরা তাদের সবাইকে বের করে দেব।
এর একদিন আগে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব একই ইস্যুতে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এনআরসির বাইরে যেসব মানুষের নাম থাকবে তাদেরকে বের করে দেয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি প্রণয়নের প্রচারণা চালানো হচ্ছে বিজেপির রিফিউজি সেলের অধীনে। তবে সূত্রগুলো বলেছেন, সংঘ পরিবারের বিভিন্ন শাখাকে ২১ দিনের কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়া হবে। সূত্রগুলো বলেছেন, গ্রাম পর্যায়ে গ্রুপ মিটিং করা হবে। আট পৃষ্ঠার একটি বই বিতরণ করা হবে অংশগ্রহণকারীদের কাছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, আমরা সব হিন্দু শরণার্থীদের, প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমবঙ্গে যারা অমুসলিম শরণার্থী, তাদেরকে নিশ্চয়তা দিতে চাই যে, নরেন্দ্র মোদি সরকার ২০১৫ সালে পাসপোর্ট ও ফরেনার্স অ্যাক্ট সংশোধন করেছে। পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন সংশোধন করা হবে। এর অর্থ হলো ওইসব অমুসলিম শরণার্থী কোনো সমস্যার সম্মুখিন হবেন না। আমাদের প্রাথমিক টার্গেট হলো মুসলিম অনুপ্রবেশকারী।
২০১৬ সালের ১৫ জুলাই লোকসভায় উত্থাপন করা হয় সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল। এর উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন করা। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে যেসব হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টান ভারতে অবৈধভাবে অভিবাসী হয়েছেন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া। আগে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য একটানা ১১ বছর ভারতে অবস্থান করতে হতো। এই সংশোধিত আইনে তা কমিয়ে ৬ বছর করা হয়েছে। লোকসভায় এই বিলটি নিয়ে আলোচনার পর তা আগস্টে পার্লামেন্টের জয়েন্ট সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
বিজেপির ভিতরকার একজন সূত্র বলেছেন, অক্টোবরের মধ্যে ওই কমিটি একটি রিপোর্ট দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। তারপর এই বিলটি পাস করানোর জন্য শীতকালীন একটি যৌথ পার্লামেন্টারি অধিবেশন আহŸানের পরিকল্পনা রয়েছে মোদি সরকারের। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।