মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আগামীকাল ভুটানে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে অংশ নিবেন জনগণ। ১৮ অক্টোবর চূড়ান্ত পর্বের নির্বাচনে কোন দুটি দল অংশ নেবে, প্রথম রাউÐে সেটাই নির্ধারিত হবে। সামাজিক মিডিয়ায় আলোচনা চলছে, ভুটানে আবারও নতুন অনভিজ্ঞ কোন সরকার ক্ষমতায় আসলে সেটা ভারতের স্বার্থের জন্য সুবিধা হবে।
২০১৩ সালের নির্বাচনের মাঝখানে কিছু ঘটনা ঘটেছিল, সে কারণেই এই আলোচনা শু হয়েছে এখন। ভারত সরকার সে সময় হঠাৎ করেই হিমালয় অঞ্চলের এই দেশ থেকে কেরোসিন এবং রান্নার গ্যাসের উপর দেয়া ভর্তুকি বন্ধ করে দিয়েছিল।
যদিও এক মাস পরেই ভর্তুকি আবার পুনর্বহাল করে ভারত, কিন্তু ভুটানের মানুষ এটাকে ভুটানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নতুনদিল্লীর সরাসরি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেছে। পর্যবেক্ষকরা বলেছেন যে, নতুনদিল্লী সে সময় নিশ্চিত করতে চেয়েছিল যাতে জিগমে থিনলের নেতৃত্বাধীন ড্রুক ফুয়েনসুম শোগপা ক্ষমতায় ফিরতে না পারে। ভর্তুকি বাতিল করায় ভুটানে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। কারণ রাতারাতি জ্বালানি ও রান্নার গ্যাসের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। বিরোধী দল সুযোগটা কাজে লাগিয়েছিল। তারা বলেছিল, ভুটান তার ঘনিষ্ঠতম মিত্রকে হারিয়েছে। ফলে বিরোধী দল বড় ব্যবধানে নির্বাচনে জিতে গিয়েছিল।
তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন
২০০৮ সালের বিশ্বের নবীনতম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করে ভুটান। দেশের চতুর্থ রাজা জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচূক দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা বদলে গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্র করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৬ সালে তিনি সিংহাসন ছেড়ে দেন এবং নিজের বড় ছেলেকে নতুন রাজা নিযুক্ত করেন। নতুন রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচূক ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই বছর ভুটানের জনগণ দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত করে।
এবার ভুটানের তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ভুটানের সংবিধান যে কোন সংখ্যক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে প্রাথমিক রাউÐে অংশ নেয়ার অধিকার দিয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত শীর্ষ দুটি দলই সাধারণ রাউÐের নির্বাচনে অংশ নেয়। এতে বিজয়ী দল সরকার গঠন করবে এবং পরাজিত দল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে।
প্রাথমিক রাউÐের নির্বাচনে অংশ নিতে চারটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন নিয়েছে। চারটি দল হলো পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি), ড্রুক ফুয়েনসুম শোগপা (ডিপিটি), ড্রুক নিয়ামরুপ শোগপা (ডিএনটি), এবং ভুটান কুয়েন-নিয়াম পার্টি (বিকেপি)। প্রথম (২০০৮) এবং দ্বিতীয় (২০১৩) উভয় নির্বাচনেই দেখা গেছে পিডিপি এবং ডিপিটি সাধারণ রাউÐে উতরে গেছে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে জিতেছে পিডিপি আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে সরকার গঠন করে ডিপিটি।
দল চারটি, প্রতিশ্রুতি একই রকম
২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী শেরিং টোবগে, যিনি আগের ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছিলেন – তিনি পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তরুণ গণতন্ত্রের যাত্রা অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। ২৬ আগস্টের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে তিনি ভুটানের নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, পিডিপি তৃণমূলের মানুষের ক্ষমতায়ন করেছে, তাদেরকে আরও বেশি কর্তৃত্ব, দায়বদ্ধতা এবং সম্পদ দিয়েছে।
সাবেক কৃষি ও বনমন্ত্রী পেমা গিয়ামশো ডিপিটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পেমা গিয়ামশো ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। অভিজ্ঞ উন্নয়ন কর্মী গিয়ামশো ২০২৫ সালের মধ্যে স্ব-নির্ভরতার ধারণা নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কাজটি কঠিন হলেও তিনি মনে করেন, তার দলের এই চ্যালেঞ্জ নেয়ার মতো অভিজ্ঞতা রয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ডিএনটি এবং বিকেপি নতুন দল। ডিএনটি ২০১৩ সালের প্রাথমিক রাউন্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলো। তার সাথে ছিল অধুনালুপ্ত দল ড্রুক চিরওয়াং শোগপা। তারা প্রতিযোগিতায় টেকেনি এবং দলের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টসহ বেশ কয়েকজন যোগ্য প্রার্থী পিডিপিতে যোগ দেয়। অনেক ভোটারই মনে করেন এই দলটি স্বাধীনভাবে কাজ করে না এবং তারা এই দলটিকে পিডিপির ‘বি’ দল হিসেবে গণ্য করে থাকে।
ড্রুক নিয়ামরুপ শোগপা দলের প্রেসিডেন্ট একজন মেডিকেল সার্জন। তিনি মনে করেন সামাজিক বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। তাই বিত্তবান ও অভাবীদের মধ্যে পার্থক্য দূর করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি”।
বিকেপির স্বাধীনচেতা নারী প্রেসিডেন্ট নেতেন জাংমো ভুটানের প্রথম এন্টি-করাপশান কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মনে করেন, তার দলের প্রধান লক্ষ্য হলো দুর্নীতিমুক্ত থাকা। প্রচারণার সময় যারা চাপাচাপি এবং হয়রানি করছে, তাদের রুখে দাঁড়ানোর জন্য ভোটারদেরকে সবসময় আহ্বান জানিয়ে আসছেন তিনি।
নতুনদিল্লী কি আবারও নাক গলাবে?
ভুটানের শিক্ষিত নাগরিকরা বিশ্বাস করেন যে, দেশের বহু বছর বয়স হয়েছে এবং স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই গ্রহণের এখন সময় এসেছে। এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই ভুটানের নতুন স্বপ্ন গড়ে উঠেছে। অনেক ভুটানিজ মনে করেন, ভারতের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার সাথে সাথে ভুটানকে তাদের পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। তাছাড়া নবায়নকৃত ইন্দো-ভুটান ফ্রেন্ডশিপ ট্রিটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। ২০১৩ সালের ভর্তুকি বাতিলের সিদ্ধান্ত ছিল তাই ভুটানকে ভারত কর্তৃক জিম্মি করার সমতুল্য।
ফলে এ বছর ব্যাপক ভারত-বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি হয়েছে। তাছাড়া এখনকাই এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বেশ কিছু ভারতীয় কূটনীতিক এবং সিনিয়র ব্যক্তিদের অযাচিত মন্তব্য এই ভারত-বিদ্বেষী মনোভাব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালের আগস্টে দোকলামে ভারত-চীন অচলাবস্থা চলাকালে, ভারতের একটি সংবাদপত্র সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শ্যাম সরণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, ভুটানের পররাষ্ট্র সম্পর্ক সম্প্রসারণের আকাঙ্ক্ষায় ভারত বাধা দিচ্ছে কি না। সরণের জবাব ভুটানের মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। তিনি বলেছিলেন, “এটা ভুটানকেই ঠিক করতে হবে যে, তারা কিভাবে স্বাচ্ছন্দ্য থাকবে, বাকি বিশ্বের সাথে কিভাবে সম্পর্কের প্রসার ঘটাবে। ভারত ভুটানের কাছে একটা বিষয়েই আশ্বাস চায়, সেটা হলো ভুটান যাতে এমন কোন পদক্ষেপ না নেয়, যেটা ভারতকে বিস্মিত করবে। এটাই একমাত্র চাওয়া”।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।