পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের ১ হাজার ৬৮১টি নির্বাচিত আলিয়া মাদরাসার অবকাঠামো উন্নয়নে বড় আকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এসব মাদরাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণ, আসবাবপত্র সরবরাহ, সেমিনার কক্ষ নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক টয়লেট নির্মাণ, সোলার প্যানেল স্থাপন এবং ৬ হাজার ৭১৪জন শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ পানি ও বিদ্যুত সুবিধা বাড়াতে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)’র সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় মাদরাসা উন্নয়ন প্রকল্পসহ মোট ১৮টি প্রকল্পে ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদিত হয়। দেশের সাধারণ শিক্ষায় অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে একক প্রকল্পে সম্ভবত এটিই বৃহত্তম বাজেট। একনেক সভায় প্রকল্প অনুমোদনের পর পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল মাদরাসা শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পসহ অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন। সারাদেশে প্রায় ২ হাজার মাদরাসার উন্নয়ন প্রকল্পে জাতীয় সংসদের প্রত্যেক সদস্যকে নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় ৬টি করে মাদরাসার তালিকা চাওয়া হয়েছে এবং তাদের পাঠানো তালিকা অনুসারেই এই প্রকল্প বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন করা হবে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রী জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকার বেশকিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। বহুযুগ ধরে দেশের আলেম সমাজের প্রাণের দাবী ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, জনবল কাঠামো ও বেতনবৈষম্য নিরসনে সরকারের উদ্যোগগুলো আলেম সমাজের প্রশংসা পেয়েছে। দেশের মাদরাসা শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন জমিয়াতুল মোর্দারেছীনের তরফ থেকে দ্বীনি শিক্ষার জন্য এসব ইতিবাচক প্রকল্প গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদও জানানো হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার অবকাঠামো উন্নয়নে ৬ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদনের জন্য আমরা আবারো প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। দেশের মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সকলে প্রত্যাশা করেন। তবে প্রকল্প গ্রহণ এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন এক কথা নয়। সরকারী প্রকল্প বাস্তবায়নে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা, ধীরগতি এবং মানহীনতার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাপক অপচয়, দুর্নীতি হয় এবং এসব প্রকল্পের সুফলও সময়মত পাওয়া যায়না। আলোচ্য ২ হাজার মাদরাসার অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্পটিও বেশ কয়েক বছর পর এখন আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। সরকারী প্রকল্প বাস্তবায়নে সচরাচর অনিয়ম, দুর্নীতি,সময়ক্ষেপণ ও লুটপাটের যে ঘটনা ঘটে থাকে, এ ক্ষেত্রে যেন তা না ঘটে সেটাই আমাদের সঙ্গত প্রত্যাশা।
মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে বড় আকারের বাজেট বরাদ্দ এখন সময়ের দাবী। এই প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৯১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বাজেট সরকারী তহবিল থেকে খরচ করা হবে বলে জানা যায়। পুরো বাজেট সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দের মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এই প্রকল্পের বরাদ্দ এবং বাস্তবায়নের সামগ্রিক সম্ভাবনা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সদিচ্ছা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতার উপর নির্ভর করবে। সরকারের মেয়াদের একেবারে শেষ সময়ে এসে নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের প্রকল্প অনুমোদিত হওয়ায় একে নির্বাচনী প্রকল্প হিসেবে মনে করতে পারেন অনেকে। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা এই যে, মাদরাসাগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন বাস্তব কারণেই অত্যন্ত জরুরি। তবে আরো আগে এই প্রকল্প নেয়া হলে বাস্তবায়ন এতদিনে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো। ২০২১ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনায় এই প্রকল্প হাতে নেয়াতে এই সরকারের বাকী মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শুরু করাও হয়তো কঠিন হয়ে পড়বে। তথাপি আমরা আশা করি, দেশের হাজার হাজার জরাজীর্ণ মাদরাসার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থছাড়সহ প্রাসঙ্গিক প্রক্রিয়াগুলো দ্রুত সম্পাদিত হয়ে বাস্তবায়ন পর্যায়ে যাবে। এই প্রকল্প যেন লোক দেখানো ফিতা কাটা বা ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে না পড়ে।বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের গতানুগতিক ধারাক্রম পরিহার করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারি সংস্থার পাশাপাশি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নজরদারী থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।