চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
গোটা দুনিয়ায় চলছে আধুনিকতার জাগরণ। শত উৎপিড়নের মাঝেও ইসলামের বর্ণিল ক্যাম্পাসে চলছে মুসলিমদের ইতিবাচক সমাচার কনসার্ট। এ যেন এক আলোকিত বিশ্বের হাতছানি! অন্য দিকে একটু সুখের পরশ গ্রহণে কোনো আদর্শ বা শিষ্টাচার ছাড়াই দুনিয়ার চাকচিক্যকে মানুষ এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছে যেন দুনিয়ায় মানুষের পরকালের পাথেয়! পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘প্রত্যেক মানুষ (সৃষ্টিজীবকে) মৃত্যুর স্বাধ গ্রহণ করতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মে ঘোষিত সত্যটির সামনে মস্তক অবনত করেও কেউ শেষ রক্ষা পাবে না। ছাড় পাবে না এ চিরসত্যটির কাছে।
রাসূলের জীবনী তালাশ করলে যে সত্য উদ্ঘাটিত হয় তার বর্ণনা প্রতিফলন ঘটায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠার। উম্মতের সাফল্যময় জীবনের অংশে মিলিত হয় মুক্তির সোনালী অধ্যায়। যুগে যুগে সে সব পেক্ষাপট ও স্থান অলংকিত করে ন্যায়-নিষ্ঠা ও নীতি-নৈতিকতার প্রতীক আদর্শের ঝাণ্ডধারী রাসূলের অনুসারীরা। হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে, ‘আলেমগণ পয়গাম্বরগণের ওয়ারিস’। রাসুলের অনুগামীরা যা বলেন তা পয়গাম্বরের পবিত্র জবান নিঃসৃত বাণী চিরন্তণী। এ সোনালী বাণী যারা উচ্চারণ করে তার শীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে তারাই সফলতার স্বীকৃতিতে ভ‚ষিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাসূলের নীতি অনুসরণ আর তার দেখানো পথ মত ও সুন্নতকে এই নির্জীব ধরাপৃষ্ঠে জিন্দা ও সজীব করা অপরিহার্য। সাথে সাথে তার হেদায়েতী বার্তা মানুষের পৃথিবীতে বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া বাঞ্চনীয়।
আল্লাহওয়ালা হক্কানী আলেম বুজুর্গকে বা তাদের বাইরে কোনো সাধারণ ব্যক্তি অথবা জীব জন্তুকে ব্যতিরেকে কষ্ট বা ধোকা দেওয়া অথবা তার সঙ্গে প্রতারণা করা অনুচিত। এটা শরিয়ত অসমর্থিত গর্হিত কাজ।
দুনিয়ার ইতিহাসে যাদের নাম মানুষ ধিক্কারের সাথে স্মরণ করে তাদের মধ্যে ফেরআউন নমরূদ, হামান, আবু জেহেল, আবু লাহাব, উতবা, শাইবা অন্যতম। তারা তাদের যুগে নিজ গোত্রীয় নবীদের সাথে বেয়াদবীর কারণে মানুষের ময়দানে দুনিয়ার সর্ব নিকৃষ্ট কীট হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে। চৌদ্দ’শ বছর পূর্বে রাসূলের জামানা বা তারও আগে বেয়াদবীর বিষফল ছিল এমন ভয়াবহ, যাদের নাম পবিত্র কোরানের মাধ্যমে পরবর্তী উম্মতদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ পূর্ববর্তীরা পরবতীদের জন্য শিক্ষা, চাই তা আদর্শগত বা অন্যকোনো দিক থেকে হোক না কেন।
সত্যের ধ্বজাধারীরাই একসময় চেতনায় দুনিয়া কাঁপিয়েছিল। কিন্তু পবিত্র কোরআনে অভিশপ্তের চক্রে মানবতার অকল্যাণদর্শী সত্যবিরোধীদের নাম উল্লেখ থাকায় আজ মানুষ তাদের ব্যপারে সম্মক অবগত। আব্দুল কাদের জিলানী, বাইজিদ বোস্তামী, শায়খ আবু তাওয়ামাহ, শাহজালাল, শাহপরান, শাহ মাখদুমসহ নিজামুদ্দীন আউলিয়া, গাজী ইমামুদ্দীন বাঙ্গালীর মতো ব্যক্তিদের নাম এখনও মানুষ অত্যন্ত গর্বের সাথে উচ্চারণ করে, কিন্তু তাদের জামানার শাসকদের নাম আজ আর কারো জানা নেই। সম্প্রতি যারা মহাসত্যের বিপ্লবকে অবদমিত করার জন্য ইসলামের সিপাহ সালারদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে বেয়াদবী করে যাচ্ছে তারাও একদিন ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়ে ঘৃণ্য অধ্যায়ে রূপান্তরিত হবে। নাম নেয়ার মতো লোকবল জনবল জৌলুস বিলাশপুরীর কোনো মহলও বাকী থাকবে না। পবিত্র কোরানের তাফসীর গ্রন্থ জালালইন শরীফে বর্ণিত ‘বাআলাম বাউরা’ ছিল আল্লাহর ইবাদতকারীদের মধ্যে অন্যতম। যখন তিনি লালসার অক্টোপাসে আটকা পড়ে আল্লাহর পয়গাম্বর হযরত মুসা আ. এর বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে হাত উত্তলন করলেন তখন তার জিহŸা নাভি পর্যন্ত ঝুলিয়ে কায়েনাতের শিক্ষানুভুতির পর্দাকে আরও ফাঁক করে দিলেন। এটা নবীর বিরুদ্ধে বদদোয়া করার এক অপরিণাম দর্শী বিষফল।
এখন যারা নবীর ওয়ারিসদের দিকে অস্ত্র তাক করে, পাষাণ দিলে রাত গভীরে তাদের সীনা বুলেট মেরে জাঝরা করে দেয় এবং আলেমদের মানহানীসহ নিজেদের যাবতীয় নষ্ট এবং ভ্রষ্ট ধ্যান-ধারণা জাতি ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিকৃত চিন্তার অদৃশ্য সুঁই দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়. তাদের পরিণাম কতো ভয়ানক হবে সেটা বর্ণনা করা কঠিন। যুগে যুগে ভয়ানক আজাবের মাধ্যমে বেয়াদবদের আল্লাহ সাজা দিয়ে চিহ্নিত করে দিয়েছেন। নীল নদ আর দাঁড়িয়ে থাকা পিরামিডের রাজ্য মিশরের প্রাচীন জালেম শাসক খোদা দাবীদার সেই অভিশপ্ত ফেরাউন যুগে যুগে ধীকৃতির মাঝে পৃথিবীর জলন্ত নমুনা হয়ে থাকবে।
দুখের বিষয় হলো মানুষ এগুলো থেকে শিক্ষা নেয় না বলে অন্যায় অনাচার খুন রাহাজানীসহ পৃথিবীর যাবতীয় পাপাচার বন্ধ হয় না। যাদের দ্বারা অন্যের সম্পদ লুণ্ঠিত হয় তারা কখনও মানুষের নিরাপত্বার বেষ্টনি হতে পারে না। যাদের জবান থেকে আলেমওলামারা মুক্ত নয় তারা কখনও রাসুলের উম্মত দাবী করতে পারে না। যদি করেও থাকে তবে এটা চরম ধোকাবাজী ও উদ্দেশ্য প্রণদিত। স্বার্থের শিকার হয়ে আল্লাহর অবাধ্য হলে সে পয়সালা আল্লাহই করবেন। খোদাদ্রোহীদের টাকা খেয়ে কুখ্যাত তাসলিমা ও ফরিদারা যেমনি নিজ সম্পাদায়ে সাথে গাদ্দারী করার বিণিময়ে মাতৃভূমির মাটি তাদের গ্রহণ করেনি। এ জন্য ইতিহাসসিদ্ধ মানুষ সব সময় জয়ী থাকে। যে জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য তাদের কাছে মূল্যহীন বা তারা ইতিহাস ভুলে মূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চিটকে পড়ে কালের গর্বে, তাদের পতন অনিবার্য।
তাই ইতিহাসের পাঠ অধ্যায়নের পাশাপাশি সমাজ ও জাতির মাঝে তার প্রতিফলন ঘটানো সময়ের দাবী। মানুষের প্রতি মানুষের প্রেম ভালবাসা, সৃষ্টির প্রতি সৃষ্টির সম্মান প্রদর্শন ইসলামের অনুপম আদর্শ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।