Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘অ্যাপ’ভিত্তিক পরিবহনেও ঝুঁকি

| প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবুও প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। লোকাল বাস, সিএনজি অটোরিক্সা, টেক্সিক্যাবসহ গণপরিবহনের প্রতিটি সেক্টরেই বল্গাহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা ধরনের ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে নগরবাসি। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের হাত ধরে সারাবিশ্বেই যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটে চলেছে। অ্যাপভিত্তিক ব্যবসায় বাণিজ্য এবং রাইড শেয়ারিং তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তৃতির সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি বিভাগীয় শহরে ইতিমধ্যে অ্যাপ ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পাঠাও এবং উবার জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু গণপরিবহনের বেপরোয়া চালকদের মত এসব অ্যাপ ভিত্তিক নেটওয়ার্কেও কিছু বেপরোয়া, অদক্ষ ও অপরাধ প্রবণ বাইকার ও গাড়ী চালক ঢুকে পড়েছে। এদের কারণে পাঠাও এবং উবার-এর মত গণপরিবহন নেটওয়ার্কিং এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বেপরোয়া ও অদক্ষ বাইক চালনার শিকার হয়ে গত রবিবার রাজধানীর মতিঝিলে এক পাঠাও চালক রিপন শিকদার এবং আরোহী জানে আলমের মৃত্যু হয়েছে। ব্যস্ত রাস্তায় একটি লরি পাঠাও বাইককে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাঠাও চালক ও আরোহীদের মধ্যে মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ও দুর্ঘটনা ঘটছে বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা যায়।
দেশের গণপরিবহণ ব্যবস্থা কথিত পরিবহন মাফিয়া চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। টেক্সিক্যাব ও সিএনজি অটোরিক্সাও বেপরোয়া, মতলববাজ মালিক-চালকদের কারণে সাধারণ যাত্রিদের আস্থাহীনতার সংকটে পড়েছে। এহেন বাস্তবতায় অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা দ্রুত যাত্রিদের আস্থা অর্জনের সম্ভাবনা ছিল। ঢাকায় প্রথমে স্যাম বাইক রাইড শেয়ার, অত:পর পাঠাও এবং উবার জনপ্রিয়তা অর্জনের পর এখন প্রায় ১০টি অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা কোম্পানী চালু রয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া পাঠাও বাইক চালকদের নানা ধরনের অনিয়ম, অদক্ষতা এবং নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিকারহীনতার কারণে এই খাতও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাঠাও বাইকারদের বেপরোয়া বাইক চালনার শিকার হয়ে মত্যু ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন অনেক মানুষ। এক শ্রেনীর পাঠাও চালকের বেপরোয়া, অদক্ষ ও আনাড়ি বাইক চালনার পাশাপাশি অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারনা, লাম্পট্য ও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন পাঠাও অ্যাপ ব্যবহারকারীরা। চট্টগ্রামের এক নারী চিকিৎসক আরোহীকে পাঠাও বাইক চালক শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তার ভ্যানিটি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বলে জানা যায়।
দেশের গণপরিবহন সেক্টরে একটি আমূল পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছে মানুষ। আশা করা হচ্ছিল পাঠাও ও উবারের মত অ্যাপভিত্তিক সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে পথ প্রদর্শকের ভ’মিকা পালন করতে পারে। এখন দেখা যাচ্ছে দেশের গণপরিবহনের বেপরোয়া ও অদক্ষ চালকরাও এখন অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেক্টরে ঢুকে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে উবার, পাঠাও সহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে বাইক, গাড়ী ও চালক রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে আরো সতকর্তা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সেবা সংস্থার অ্যাপ বা সফ্টওয়ার নেটওয়ার্কের উপর ছেড়ে দিলেই হবেনা। রেজিস্ট্রিকৃত সেবা সংস্থার আনফিট গাড়ী, অপেশাদার ও অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগেরও প্রয়োজনীয় নজরদারি থাকতে হবে। বিশ্বের কোথাও গণপরিবহণ ও টেক্সিক্যাব চালকদের এমন স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ যেন বিরল ব্যতিক্রম। এখানে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার একশ্রেনীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে একটি মাফিয়াচক্রে পরিনত হয়েছে। দেশের মানুষকে এই চক্রের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে হলে গণপরিবহণের বিকল্প উদ্যোগগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। পাঠাও উবারসহ অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পরিবহন খাত ভালো দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। কিছু সংখ্যক অদক্ষ ও অপরাধপ্রবণ চালকের কারণে এ খাত আস্থাহীনতার সঙ্কটে পড়লে এর সম্ভাবনা নস্যাৎ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও নজরদারী প্রয়োজন। আর কোন পাঠাও চালকের বেপরোয়া বাইক চালনার শিকার হয়ে যেন কোন আরোহী হতাহতের ঘটনা না ঘটে সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলের বিশেষ সতকর্তা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবহন


আরও
আরও পড়ুন