পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজারগুলোর মধ্যে এটি একটি। বায়রার হিসেবে, গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। নানা কারণে বাংলাদেশী শ্রমিকের কদর ও চাহিদা সেখানে রয়েছে। এই বিশাল শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নানা প্রতিক্রিয়ার শিকার হবে বাংলাদেশ। পুনরায় এ শ্রমবাজার উন্মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, জি-টু-জি পদ্ধতি, যাকে সংক্ষেপে এসপিপিএ বলা হয়, বন্ধ হলেও পুরনো পদ্ধতি বা ম্যান্যুয়াল সিস্টেমে শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় যেতে পারবে। কিন্তু আদৌ যেতে পারবে কি না সেটা নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় ধাক্কা। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা এতে অবনমিত হবে এবং বিশ্বজুড়েই শ্রমিক প্রেরণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মালয়েশিয়া এসপিপিএ বন্ধ করে দিয়েছে, যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। বিদ্যমান পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ার সাবেক সরকার বাংলাদেশের ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশী শ্রমিক আমদানি করতো। মহাথির মোহাম্মদের নতুন সরকার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখেছে, এক্ষেত্রে স্বচ্ছতার বিরাট ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়ে মহাথির মোহাম্মদ স্বয়ং যা বলেছেন তা সহজেই বোধগম্য। তিনি অনিয়ম, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার মূলোৎপাটন করে নিয়ম-নীতি ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে চান। ১০ এজেন্সির মনোপলি ভেঙে দিয়ে সব এজেন্সির জন্য সমান সুযোগ অবারিত করতে চান। মহাথির মোহাম্মদের এই অভিপ্রায় ও বক্তব্য উৎসাহজনক ও আশাব্যঞ্জক।
এটা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার এভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকারের কোনো দায় নেই। পূর্বতন সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি খুঁজতে গিয়েই ধরা পড়ে, এ ক্ষেত্রে ব্যাপক মাত্রায় অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। আর এর সাথে জড়িত আছে বাংলাদেশের ১০টি এজেন্সি, যারা একচেটিয়াভাবে শ্রমিক প্রেরণ করে আসছিল। মূলত তারা যে অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনা করছিল, সেটাই শ্রমবাজারটি বন্ধের কারণ। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশী বংশোদ্ভ‚ত একজন মালয়েশীয় নাগরিক সেখানকার রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলাসহ প্রভাবশালীদের নিয়ে সিনারফ্ল্যাকস নামে একটি কোম্পানি গঠন করেন। এই কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার দায়িত্ব পাওয়ার পর শুধু এখানকার নির্দিষ্ট ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক সংগ্রহ করত। এই ১০টি এজেন্সির মালিকদের মধ্যে বায়রার সাবেক নেতৃবৃন্দ যেমন আছেন তেমনি আছেন সরকারের মন্ত্রী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন। অভিযোগ রয়েছে, মালয়েশিয়ায় নিয়োগ পেতে সেখানে একজন শ্রমিকের মাত্র ৪০ হাজার টাকা লাগার কথা, সেখানে এজেন্সিগুলো চার লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। এভাবে গত দেড় বছরে এজেন্সিগুলো অন্যায্যভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই অন্যায় ও লুণ্ঠনের কথা সরকারের অজানা থাকার কথা নয়। অথচ সরকার এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কেন নেয়নি, তা বিশদ ব্যাখ্যার অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। এই যে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আপাতত বন্ধ হয়ে গেল, শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে বিপর্যয় নেমে এলো, এর দায়দায়িত্ব সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। এটা সরকারের একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। নির্বাচনের বছরে এরকম ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া সরকারের ওপর পড়বে না, এমন দাবি করা যায় না। প্রশ্ন হলো, যাদের কারণে এই অযাচিত দুর্ঘট ঘটলো, সেই এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কি এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না? তারা কি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে? যদি তাদের ধরা সম্ভব হয়, জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায় তাহলে একটা অনুসরণীয় নজির স্থাপিত হতে পারে। সরকার কি এ ব্যাপারে যথাযথ সদিচ্ছা প্রদর্শন করবে?
আমরা মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী মহাথির মোহাম্মদের মনোভাব ও বক্তব্যকে নেতিবাচকভাবে দেখতে চাইনা। উল্লেখ করা যেতে পারে, যে পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো হতো তা একটি ব্যতিক্রমী পদ্ধতি। মালয়েশিয়া যে ১৫টি দেশ থেকে প্রধানত শ্রমিক আমদানি করে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের সঙ্গে এ ধরনের সিন্ডিকেটেড পদ্ধতি চালু ছিল না। দেখা গেছে, এই পদ্ধতিতে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। সুতরাং বর্তমান সরকার এই পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করতেই পারে এবং যথারীতি সেটাই করেছে। শ্রমিক আমদানি-রফতানিতে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা যদি এর লক্ষ্য হয়, তবে বাংলাদেশের জন্য তা ভালো। মহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশের সকল এজেন্সির জন্য ব্যবসা খুলে দেয়ার যে কথা বলেছেন, তাতে আশাবাদী হওয়ার সঙ্গত কারণ রয়েছে। মহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে শ্রমিক আমদানির বিষয়ে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও একজন সাবেক মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমাদের ধারণা, এতে সুপথ বেরিয়ে আসবে, ন্যায়সঙ্গত অংশীদারিত্বভিত্তিক একটি সম্পর্ক দু’দেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের উচিত জরুরি ভিত্তিতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা এবং মালয়েশিয়া যে উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে তা থেকে সর্বোচ্চ সুফল আদায়ের চেষ্টা করা। আমরা আশা করি, বন্ধুপ্রতিম মালয়েশিয়া আরো অধিক সংখ্যায় বাংলাদেশী শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে স্বল্পতম সময়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা নেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।