Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রবাসীর কান্না দেশে ফেরার আর্তনাদ

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

বাবা মা বুক ভরা আশা ও স্বপ্ন নিয়ে রিপনকে বিদেশে পাঠিয়ে ছিল। স্বপন ছিল ছেলে রিপন বিদেশ থেকে টাকা পাঠালে তাদের পরিবারে সুখ নামের অচিন পাখিটি ফিরে আসবে, আর দুঃখ দুর্দশা থাকবে না। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বড়গাছি গ্রামের ইনুস আলীর ছেলে রিপন। ইনুস আলী তার ছেলেকে কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার সোবারাম পুর গ্রামের মৃত আবু মিয়ার ছেলে ফরিদ উদ্দিন ও তার ছেলে জসিম এবং একই জেলার বুড়িচং থানার পারুড়া গ্রামের মাসুম ও তার ভাই মাহাবুবের মাধ্যমে ৪ লক্ষ টাকা দিয়ে ফ্রি ভিসার নামে ওমানে পাঠায়। এ বছর ফেব্রæয়ারী মাসে রিপন ওমানে যায়। ওমানে গিয়ে রিপন জানতে পারে তাকে ফ্রি ভিসায় পাঠনো হয়নি। কোম্পনীর ভিসায় তাকে পাঠানো হয়েছে। ওমানে গিয়ে রিপনের কাছ থেকে পাসপোট ও ভিসা নিয়ে নিয়েছে মাহাবুব। মাহাবুবের বাড়ী বাংলাদেশে হলেও সে ওমানে থাকে। মাহাবুব রিপনকে দিয়ে ওমানে এক কোম্পানিতে কাজ করায়। ওমানে রিপনের প্রায় ৬ মাস কাজ করা হলেও তাকে কোন বেতন ভাতা দেয় না। বেতন চাইলে তাকে মারধর করে। ওমানে রিপন কে একটি ঘরে রাখা হয় এবং তাকে দিয়ে কাজ করানো হয়। ঠিকমত খাবারও দেয়না তাকে। অসহায় রিপন দেশে ফেরার জন্য কাকুতি মিনতি করলেও তাকে দেশে ফিরে আসতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে বহু স্বপ্ন দেখা রিপনের পিতা রিপনকে বিদেশে পাঠানোর সময় এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, নিজের বাড়ী ভিটা বন্ধক রেখে ৪ লাখ টাকা জোগাড় করে দালালদের দিয়ে ছিল। এমনকি প্লেন ভাড়া ২০ হাজার টাকাও রিপনের বাবাকে দিতে হয়ে ছিল। রিপন বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে না পারেনি। রিপনের পিতা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় চরম বিপাকে পড়ছে। এনজিও কর্মীরা তাকে চাপ দিচ্ছে। হারাতে বসেছে শেষ সম্বল বসত বাড়ীর ভিটে টুকু। এদিকে রিপনের পিতা পরিবার পরিজন নিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে। তারা ঈদের আনন্দ কি বুঝতে পারেনি। অন্য দিকে ওমানে রিপন ভোগ করছে অমানুষিক যন্ত্রনা। রিপন তার বাবা ও মায়ের কাছে ফোনে প্রতিদিন দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আর্তনাদ করছে। অসহায় বাবা মা কিছুই করতে পারছে না। দালারদের সাথে যোগাযোগ করে ছেলেকে দেশে পেরত চাইলে দালাররা তাদেরকে উল্টিয়ে বিভিন্ ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। নিরুপায় বাবা মা হোমনা থানার ৪ নং চান্দের চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বাসারের কাছে গত মাসে গিয়ে দালালদের বিরুদ্ধে বিচার প্রার্থনা করিলে চেয়ারম্যান দালারদের ডেকে বিচার করে দেয়। বিচারে চেয়ারম্যান দালাল ফরিদ ও জসিমকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে রিপনের পিতাকে দেওয়ার জন্য বলে। কিন্তু দালালরা এক টাকাও দেয়নি। দালালরা চেয়ারম্যানের বিচারকে কিছুই মনে করছে না। রিপনের বাবা মাকে গালি গালাজ করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহাবুব ওমানে থাকে এবং তার ভাই মাসুম, জসিম ও ফরিদ বাংলাদেশে থেকে মানুষ বিদেশে পাঠানোর দালালি করছে। তারা বাংলাদেশ জুড়ে বিছিয়ে রেখেছে মানুষ পাচারের জাল। শুধু রিপন না তাদের খপ্পরে পরে আরো অনেকে ওমানে গিয়ে একই যন্ত্রনায় ভুগছে।
রিপনের বাবা ও মায়ের আর্তনাদ তাদের ছেলেকে দেশে ফিরে পেয়ে দালালদের বিচার হওয়া। আর যেন কোন বাবা মার সন্তান ওই দালালদের খপ্পরে তাদের মত সর্ব শেষ না হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কান্না

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ