Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাজা পায়নি দোষীরা কান্না থামেনি স্বজনের

প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে : পিনাক-৬ ট্র্যাজেডির ২ বছর হলেও দোষীরা আজো সাজা পায়নি। আর কোনোদিন পাবেও না। আইনের ফাঁকফুঁটো দিয়ে বেরিয়ে যাবে তারা। কারণ দোষীদের অদৃশ্য হাত অনেক বড়। দোষীরা কেউ প্রভাবশালী আবার কেউ প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়। তাই চোখের পানিই এখন স্বজনহারাদের একমাত্র প্রাপ্তি। এদের সান্ত¦না দেবারও কেউ নেই। ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট পদ্মা নদীর মাঝে আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই একটি লঞ্চ। পিনাক-৬ যেন সেদিন সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত হয়ে নেমে এসেছিল মাঝ পদ্মায়। পিনাকের নাম শুনলেই আতঙ্কে কেঁপে ওঠে স্বজনদের বুক। প্রতিবছর এ দিনটি এলেই পদ্মাপাড়ে শোনা যায় স্বজনদের আর্তনাদ।
ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মাওয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় পিনাক-৬। ওভার লোডিংয়ের কারণে পদ্মার মাঝে ডুবে যায় লঞ্চটি। সরকারিভাবে ওই দুর্ঘটনায় ৪৯ জন এবং বেসরকারি হিসেবে ৮৬ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। জীবিত কিছু যাত্রী উদ্ধার হয় বিভিন্ন উপায়ে। নিখোঁজ থাকে ৫৩ জন। যাদের হদিস আজো মেলেনি। এ সময় পদ্মার তীরে স্বজনহারাদের আহাজারি আর বুকফাঁটা আর্তনাদে ম্লান করে দেয় ঈদের আনন্দ। এ দুর্ঘটনায় বহু মূল্যবান ও সম্ভাবনাময় জীবনের সলিল সমাধি ঘটে সেদিন। ওভারলোডিং থামেনি লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের, দৌরাত্ম্য বেড়েছে কয়েকগুণ। আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত রিপোর্ট। ছাড়া পেয়ে গেছে লঞ্চ মালিক। বিচারের প্রত্যাশা যেন অর্থহীন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সে বছর পিনাক ট্র্যাজেটির পর উভয়ঘাট থেকে প্রতিটি লঞ্চ ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী নির্দ্দিষ্ট যাত্রী নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে। এ কাজের সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে তদারকি অব্যাহত রেখেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্থানীয় প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ ও পুলিশ প্রশাসন। নৌ-রুটগুলোতে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। কিন্তু ক‘মাস যেতে না যেতেই লঞ্চ মালিক-শ্রমিকরা আবার ফিরে যায় তাদের পুরনো স্বভাবে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়ে যায়। এখন আর পদ্মা উত্তাল থাকলেও যাত্রী পারাপারে নেই কর্তৃপক্ষের তদারকি। মন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারিও কোনো কাজে আসছে না। এ সিন্ডিকেট এতোই শক্তিশালী যে, তাদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে আছে অনন্তকাল ধরে। তাই মানুষের জীবন তাদের কাছে তুচ্ছ।
মাদারীপুর জেলার শিবচরে স্বজন হারানো কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নীরব-নিস্তব্ধ বাড়ির চারপাশ জুড়ে যেন বিষাদের ছায়া। ঈদ করতে গ্রামে এসেই স্বজনদের হারানো পরিবারের মাঝে ঈদ আর আনন্দ বয়ে আনে না। তাদের কাছে এখন ঈদ মানেই শুধু স্বজন হারানোর কষ্ট। শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের লপ্তেরচরে পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবিতে নিহত মিজানুর হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে বিষাদের ছায়া। বেঁচে থাকা বৃদ্ধ মায়ের ঘোলাটে চোখে শুধু লোনা পানি। ঈদ এলেই বৃদ্ধ মায়ের বুক ব্যথায় ভারী হয়ে ওঠে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া নিহত মিজানের মা রিজিয়া বেগমের সঙ্গে কথা বলতে গেলে বারবার চোখ মোছেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “যে ক‘দিন বেঁচে থাকবো ঈদের আনন্দ আর আসবে না। গত দুই বছর ঠিক এই সময় পুত্র-পরিজনদের সাথে ঈদ কেটেছে। ছিল এক অন্য রকম ভালো লাগার অনুভূতি। ছেলে, ছেলের বউ, নাতি-নাতনিদের নিয়ে সময় কেটেছে আনন্দে। সন্তান হারানো শোকে মিজানের বাবা নুরুল ইসলামও সবাইকে ছেড়ে চলে গেল। নিহত ফরহাদের ১৪ বছর বয়সী বোন প্রিয়া আক্তার বলেন, “সে বছর আমার ভাই-ভাবিসহ ৪ জন লঞ্চ দুর্ঘটনায় মারা যান। আমরা তাদের লাশও পাইনি।” লঞ্চ ডুবিতে শিবচর ও মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায় নিহত এমন আরো বহু পরিবারে রয়েছে স্বজন হারানোর বেদনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাজা পায়নি দোষীরা কান্না থামেনি স্বজনের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ