Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধলাইয়ের বুকে পড়ে আছে সম্পদের স্তূপ

সিলেটে পাথরের কান্না ৩

ফয়সাল আমীন: | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারী সিলেটের ভোলাগঞ্জ। স্থানীয় ধলাই নদী নির্ভর এ কোয়ারীর ব্যস্ততা থেমে গেছে। ধলাইর বুকে এখন পাথরের পাহাড়। সেই সাথে জমে থাকা বালুর বিস্তীর্ণ বিশাল মাঠ। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর পানি প্রবাহ। বিলুপ্ত হচ্ছে জীব বৈচিত্র। প্রতিবছর বর্ষাকালে পাহাড়ী ঢলে পাথর নামে এ নদীতে। ভারতে মেঘালয় রাজ্যের ডোবা নদীর তীব্র স্রোতের টানে ধলাইতে নামে পাথরের স্তূপ। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর নদী থেকে আহরণ করা হয় পাথর।

স্থানীয় মানুষের জীবন জীবিকা, সমৃদ্ধি, অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সবই পাথর ঘিরে। ধলাই নদীর তলদেশেও রয়েছে পাথরের বিপুল মজুদ। এই পাথর দিয়ে পঞ্চাশ বছর চালানো যাবে সে হিসেব ধরে ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সময়ে সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে প্রকল্প। ব্রিটিশ রোপওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।

প্রকল্পের আওতায় সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক পর্যন্ত সোয়া ১১ মাইল দীর্ঘ রোপওয়ের জন্য নির্মাণ করা হয় ১২০টি টাওয়ার এক্সক্যাভেশন প্ল্যান্ট। এর মধ্যে রয়েছে চারটি সাব স্টেশন। দুই প্রান্তে ডিজেল চালিত দুটি ইলেকট্রিক পাওয়ার হাউস, ভোলাগঞ্জে রেলওয়ে কলোনী, স্কুল, মসজিদ, রেস্ট হাউস নির্মাণ প্রকল্পের আওতাভ‚ক্ত ছিল। এক্সক্যাভেশন প্ল্যান্টের সাহায্যে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাথর উত্তোলন করা হলেও এ পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে বর্তমানে। পরবর্তীতে পাথর উত্তোলনে বোমা মেশিন ব্যবহার করে একটি পাথর খেকো চক্র। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মধ্যদিয়ে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে।

পরিবেশের বিপর্যয় রোধে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছানাকান্দি ও লোভাছড়ার পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর দায়ের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে সব ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত। এরপর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে আন্দোলন করে আসছেন পাথর ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পাথরের স্ত‚প নদীর কেবল তলদেশ নয় উপরিভাগে এখন পাথরের সমারোহ। অর্থের বিচারের হাজার হাজার কোটি টাকার পাথরে সম্পদ নদীজুড়ে। স্থানীয় অধিবাসী মোবারক হোসেন বলেন, নদীর তলদেশ পর্যন্ত প্রায় ১০০ ফুট গভীরে রয়েছে পাথরের অবস্থান। এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে পাথর উত্তোলন না করায়। এছাড়া রয়েছে নদীতে বালুর ব্যাপকতা। নৌ চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় নদীর মাঝ দিয়ে বালু সরিয়ে নৌ চলাচলের পথ রাখা হচ্ছে।

স্থানীয় ৫ নম্বর উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের কালাইবাগ এলাকার ওয়ার্ড সদস্য জয়নাল আহমদ বলেন, নদীতে পানি প্রবাহ নেই, বালু ও পাথরে কারণে সেই ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পাথরের পাহাড় এখন নদীর বুকে। সেই পাথর সুষ্ঠুভাবে উত্তোলন করা হলে পাহাড়ী ঢলে পুনরায় পাথর এসে জড়ো হতো। কিন্তু তাও এখন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। পাথর সম্পদ থাকার পরও স্থানীয় কর্মজীবি মানুষ বেকার। আর্থিক টানাপোড়নে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে তাদের জীবনে।

ভারতীয় ডোবা নদীর সাথে ধলাই নদীর সংযোগ পথে পাথরের কারণে পানি প্রবাহ নেই বললেই চলে। সেই এলাকার পাথর উত্তোলন সম্ভব হলে, সম্পদের পাশাপাশি বিশাল আর্থিকভাবে লাভবান হতো দেশ ও জাতি। তিনি বলেন, পাথর উত্তোলনে মেশিন ব্যবহার যেমন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তেমনি পাথরে ভরে যাওয়ায় বহুবিধ ক্ষতির মুখে নদীর পরিবেশসহ সামাজিক অর্থনীতিক ব্যবস্থা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করে পাথর উত্তোলন জরুরি। কারণ ধলাই নদীতে বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো পাথর সম্পদের অনন্যতা। সেই সম্পদ ব্যবহারে উপকৃত হবে দেশ। তবে কোনভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে নয় সুষ্ঠু তদারিকর মাধ্যমে এ সম্পদ কাজে লাগাতে হবে। এর মধ্যদিয়ে নদীর নিজস্ব চরিত্র অক্ষুন্ন থাকবে তেমনি ভাবে সম্পদের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।



 

Show all comments
  • মাজহারুল ইসলাম ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩০ এএম says : 0
    পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করে পাথর উত্তোলন জরুরি।
    Total Reply(1) Reply
  • সোলায়মান ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩২ এএম says : 0
    পাথর সম্পদ থাকার পরও স্থানীয় কর্মজীবি মানুষ বেকার।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩৪ এএম says : 0
    গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় তুলে ধরায় ইনকিলাবকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • সবুজ ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩৪ এএম says : 0
    এই মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুর রহমান ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩৫ এএম says : 0
    সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে অতিসত্তর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • রোমান ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩৬ এএম says : 0
    পাথর উত্তোলন সম্ভব হলে, সম্পদের পাশাপাশি বিশাল আর্থিকভাবে লাভবান হতো দেশ ও জাতি।
    Total Reply(0) Reply
  • Jack+Ali ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৬ পিএম says : 0
    Our government don't care of people and also they don't care about our Beloved Sacred Mother Land. They only know how to loot our hard earned tax payers money and sending all the money to foreign countries, how to stay in power by hook and crook [by any means necessary] not only that they killed so many people, thousands of people disappeared and they never come back to their family and are committing many more crime which we were to list it will be a book.
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ সফাত ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৩০ পিএম says : 0
    সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী অন্যথায় পাথর আমদানি সিন্ডিকেট গ্রুপের কাছে পেয়াজের মত মানুষ জিম্মি হয়ে পড়বে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিলেটে পাথরের কান্না
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ