Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খাদিজার বাবার কান্না দেখে কাঁদলেন ডাক্তার-নার্সরা

প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:০৬ পিএম, ৬ অক্টোবর, ২০১৬

ছাত্রলীগ নেতা চাপাতি বদরুলের হামলায় গুরুতর আহত খাদিজা আক্তার নার্গিস আশঙ্কামুক্ত নয়, আরো ২৪ ঘণ্টা পর জানা যাবে বলছেন চিকিৎসকরা
স্টাফ রিপোর্টার : হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের সাদা বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে খাদিজা। তাকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা মাসুক মিয়া। হাসপাতালের ছয় তলায় আইসিইউতে মেয়েকে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি। মাথা ও শরীরে সাদা ব্যান্ডেজ বাঁধা মেয়ের এই নিথর দশা কেমন করে সইবেন বাবা। বিরতিহীনভাবে কাঁদতে থাকেন তিনি। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক আর নার্সরা। কিন্তু তারা সামাল দেবেন কি, তাদের চোখেও পানি আসে বাবার হাহাকারে। একমাত্র আদরের মেয়ের শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে বাবা মাসুক মিয়া প্রায় ২০ মিনিট কাঁদলেন। তার চোখের পানি আর আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতালের শীতল কক্ষটি। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত চিকিৎসক ও নার্সরা। স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-আইসিইউ) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে শুয়ে আছে মেয়ে খাদিজা আক্তার নার্গিস। গতকাল সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে দেখতে এসেছেন তার সৌদী প্রবাসী বাবা মাসুক মিয়া। রাতে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন। ভোরে পৌঁছান স্কয়ার হাসপাতালে। তারপরই  এমন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
এ সময় মাসুক মিয়ার সঙ্গে ছিলেন খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস ও মামা আব্দুল বাছিদ। হাসপাতালের আইসিইউর সামনে চাচা আব্দুল কুদ্দুস ও বাবা মাসুক মিয়ার সঙ্গে কথা হয় সাংবাদিকদের।
এসময় চিকিৎসকরা জানান, ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের হামলায় গুরুতর আহত খাদিজা এখনো আশঙ্কামুক্ত নন। আরো ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এর আগে ৭২ ঘণ্টার কথা বলা হয়েছিল। এ ৭২ ঘণ্টা গতকাল বিকালে শেষ হয়েছে।
এ ঘটনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বদরুলের বিচার চেয়েছেন খাদিজা আক্তার নার্গিসের বাবা মাসুক মিয়া। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি বলেন, আর কোনও বদরুলের হাতে যেন কোনও নারী নির্যাতিত না হয়।
মাসুক মিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার একমাত্র মেয়ে খাদিজাকে দেখতে যান। এ সময় তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ডাক্তাররা জানিয়েছেন অপারেশনর পর খাদিজার বাঁচার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। এখন সেটি বেড়ে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। হার্টবিট ঠিকমত চলছে, কৃত্রিম অক্সিজেন সে নিতে পারছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলে ও আল্লাহ সহায় থাকলে ডাক্তাররা তার বেঁচে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সন্তান জন্ম দেয়া, তাকে লালন-পালন করা কত কষ্টের। এসব কষ্টকে আরো বিষাদময় করে তোলে সন্ত্রাসীদের হামলা। আমি চাই আমার মেয়ের মতো কেউ যেন এমন ঘটনার শিকার না হয়।
এদিকে, চীন থেকে দেশে এসেছেন নার্গিসের ভাই শামীম আহমেদ। তিনি জানান, অপারেশনের পর নার্গিসের অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো। তবে ৭২ ঘণ্টা পার না হলে সার্বিক অবস্থা বোঝা যাবে না।
বদরুল সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার জীবনের বেশিরভাগ সময় প্রবাসে কাটিয়েছি। শুধু সন্তানদের মানুষ করব সেটাই ভেবেছি। বদরুল আমার বাড়িতে লজিং ছিল সেটা আমি এই ঘটনার পর জানতে পেরেছি। আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করায় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন আমার ভাই আব্দুল কুদ্দুস। এখন তো দেখছি আমার বাড়িতে বিষাক্ত সাপ হয়ে ঢুকেছিল।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিচারের আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। আশা করি তা বাস্তবায়ন হবে।
সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে মাসুক মিয়া বলেন, সাংবাদিকদের জন্য আজ গোটা জাতি আমার মেয়ের নির্মম ঘটনা সম্পর্কে জেনেছে। সবাই দোয়া করছেন, বিচারের দাবি জানিয়েছেন। আল্লাহ যেন আমার মেয়েকে সুস্থ করে দেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (৩ অক্টোবর) শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম সিলেট এমসি  কলেজের পুকুর পাড়ে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। প্রথমে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) ভোরে তাকে ঢাকায় আনা হয়। এদিন দুপুরে স্কয়ার হাসপাতালে  অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। বৃহস্পতিবার ৭২ ঘণ্টা শেষ হবে।
খাদিজার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে চাচা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত। চিকিৎসকরা বলেছেন আরও দুই দিন পর পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে পারবেন তারা। তবে খাদিজার মামা আব্দুল বাছিদ বলেন, খাদিজার অবস্থা উন্নতির দিকে। চিকিৎসকরা বলেছেন আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত।
সিলেটের জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সি এম তোফায়েল সামি খাদিজাকে দেখে এসে সাংবাদিকদের বলেন, খাদিজার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, খাদিজার  অবস্থা ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
এদিকে চিনে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যয়নরত খাদিজার ভাই শাহীন আহমেদও দেশে এসে পৌঁছেছেন। তিনি এখন আছেন একমাত্র বোনের পাশে।
এ ঘটনার পর বদরুলকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয় স্থানীয় লোকজন। খাদিজার চাচার মামলায় বদরুলকে সিলেটের একটি আদালতে তোলার পর বুধবার তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বদরুল বলেছেন, তাকে পাত্তা না দেয়ায় খাদিজাকে কুপিয়েছেন তিনি।
সারা দেশে আলোড়ন তোলা এ ঘটনার দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে পার পাবে না বদরুল।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বদরুলের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, এ বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ হাতেই আছে। দ্রুতই চার্জশিট দিয়ে বিচার শুরু করার আহ্বান জানান তিনি।



 

Show all comments
  • Liton ৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:১৪ পিএম says : 1
    এই লোকটা প্রবাসে কতনা কস্ট করে মেয়েরে লেখা পড়া করায়।তা প্রবাসী ছারা কেউ বুজবেনা।বাবারা কতই না কস্ট চেপে রাখে। সন্তান যখন ফোনে বলে বাবা তুমি কবে আসবা।তুৃমি একটু ও আদর করনা আমায়। তুমি একটু ও ভালবাস না আমায়।তখন বাবা আর বাবা থাকেনা কাঠপোড়া কয়লা হয়ে যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Kaabir ৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:১৫ পিএম says : 0
    ছাত্র রাজনী‌তি নিষিদ্ধ করার দরকার এখনই । না হয় ক্ষমতার অপব্যবহার ক‌রে আমা‌দের যুব সমাজ পু‌রো ধ্বংস হ‌য়ে যা‌বে তাই সবাই‌কে জোরদ‌ার আন্দোলন কর‌তে হ‌বে । " ছাত্র রাজনী‌তি নি‌ষিদ্ধ হোক "!!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাদিজার বাবার কান্না দেখে কাঁদলেন ডাক্তার-নার্সরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ