চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
আসছে কোরবানী। ব্যস্ত সবে পশু কিনা নিয়ে উত্তম উৎকৃষ্ট মানের সুন্দর পশু ক্রয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ঈদুল আজহার নামাজের পর পশু জবেহ করে থাকি। জবেহ ব্যতিত ইসলামে পশুর গোশত খাওয়াকে নিষেধ করেছে। কোরবানিতে আমরা অনেকেই পশু কোরবানী করি। কতিপয় রগ কাটা,প্রানীর প্রান বের করে দেয়া,রক্ত প্রবাহিত করা হল জব হের আভিধানিক অর্থ আর ইলমুল ফিকহের পরিভাষায় আল্লাহর নাম নিয়ে পশুর চারটি রগ কেটে দেয়াকে জবেহ বলে। জবাইয়ের ক্ষেত্রে চারটি রগ তথা কন্ঠনালী,খাদ্যনালী, ও দুই পাশের শাহরগদ্বয় রগ কাটতে হবে। তবে তিনটি রগ কর্তিত হলেও জবেহ শুদ্ধ হবে। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনের জন্য জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যস্ত পর্যন্ত এই তিন দিন নির্দিষ্ট পশু জবেহ করতে হয় আর এটাই আল্লাহ তায়ালার বিশেষ এক নির্দেশ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘তোমরা তোমার প্রতিপালকে উদ্দেশ্য পশু জবেহ কর।’ (সূরা কাওসার-২)
ঈদুল আজহার নামাজের পর থেকে শুরু করে কোরনানী করার জন্য প্রত্যেক সামার্থ্যবান ব্যাক্তিরা আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য ঈদের নামাজের পূর্বেই পশু ক্রয় করে থাকে। কোরবানী করার জন্য কোন ধরনের পশু জবেহ করতে হবে সে বিষয়ে ইসলামে রয়েছে সুন্দর নির্দেশনা। তাই কোরবানি করার জন্য নির্দিষ্ট পশু ক্রয় করে জবেহ করতে হবে আর আল্লাহ তায়ালা পশু জবেহ করার জন্য নির্দিষ্ট পশু নির্ধারন করে দিয়েছেন। সূরা আনআমের ১৪৩ ও ১৪৪ নং আয়াতে কোরবানী পশু মোট আট ধরনের কথা উল্লেখ রয়েছে, তাহল ভেড়া বা দুম্বা, ছাগল, গরু ও উট এই প্রত্যেকের নর ও মাদী হিসেবে আট প্রকার। এই নির্দিষ্ট পশু দ্বারা কোরবানী করতে হবে কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘আমি প্রত্যেক স¤প্রদায়ের জন্য কোরবানি নিয়ম করে দিয়েছি যে সকল চতুস্পদ জন্তু দিয়েছেন সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারন করে।’(সূরা হজ্জ-৩৪)
জবেহ যখন হারাম হয়: হালাল প্রানী ভক্ষনের জন্য ইসলাম জবাইকে আবশ্যক করেছে। জবাইয়ের মাধ্যমে হালাল প্রানী ভক্ষন করা ইসলামে বৈধ করেছে। তবে শরীয়ত নির্ধারিত পন্থায় এ জবাই করলে তা হালাল হবে। ত্র“টিপূর্ন জবাইয়ের কারনে জবাই হারাম হয়ে যায়। জবেহর সময় কতিপয় কাজ করলে জবেহকৃত পশুর গোশত ভক্ষন করা হারাম হয়ে যায়। ১.জবাইযের সময় প্রানীকে আল্লাহর নামে জবাই না করে গাইরুল্লাহর নামে জবেহ করলে সে জবাইকৃত পশু ভক্ষন করা হারাম, ২.ইচ্ছাকৃত ভাবে তাসমিয়া তথা বিসমিল্লা বর্জন করলে ৩.কোন মুশরিক কাফের,অগ্নিপূজক ধর্মত্যাগী জবাই করলে তা হারাম হবে,৪.নহরের মাধ্যমে জবাইযোগ্য প্রানীর রক্ত প্রবাহিত না করলে তা হারাম হবে, ৫. জবাইয়ের সময় আল্লাহর নামের সাথে অন্য কোন নাম তথা শিরক করলে ঐ জবাইকৃত পশুর গোশত হারাম।
জবাইয়ের মাকরুহ কার্যাবলী: জবেহ করার সময় নিম্ম বর্ণিত কাজ করা মাকরুহ -১.প্রানীকে মাটিতে শোয়ায়ে ছুরিতে ধার দেওয়া, ২.প্রানীকে ঘারের পিছনের দিকে দিয়ে জবাই করা, ৩.এমন কঠোর ভাবে জবেহ করা যাতে ছুরি হাড়ের মজ্জা পর্যন্ত পৌছে যায়, ৪.জবাইয়ের পর প্রান বায়ু বের হওয়ার পূবেই চামড়া ছড়ানো, ৬.প্রানীকে পায়ে ধরে টেনে হেচরে জবাইয়ের স্থানে নেওয়া, ৭.কিবলা ব্যতিত অন্য মুখি হয়ে জবাই করা, ৮.প্রানীকে অহেতুক কষ্ট দেওয়া ,৯.জবাই কালে দেহ থেকে মস্ত ছিন্ন করা,১০.ভোতা অস্ত্র দ্বরা জবাই করা।
জবাইয়ের মুস্তাহাব কার্যাবলি: জবাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু মুস্তাহাব কাজ রয়েছে সগুলো হল-১ তীক্ষè ধারালো ছুরি দ্বরা জবাই করা যাতে পশুর কষ্ট কম হয়, ২.জবাইয়ের সময় প্রানীর প্রতি ইহসান বা দয়া প্রদর্শন করা,৩.জবাইকারী কিবলামুকী হওয়া,৪.জবাই কার্য ভালোভাবে সম্পন্ন করা, ৫.গরু, বকরি,মহিষ, দুম্বা প্রভৃতি প্রানীকে শরীয়ত নির্ধারিত রগ কেটে জবাই করা।
জবেহের দোয়া: কোরবানী পশু জবেহ দেওয়ার সময় দোয়া পড়া উত্তম। হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) বর্নিত, “রাসুল (স:) একটি সুন্দর শিং ওয়ালা সাদা কালো দুম্বা কোরিবানী করলেন তখন এই দোয়া পাঠ করলেন, ইন্নি ওয়াজ জাহতু ওয়াজ হিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতি ও নুসুকি ওয়া মাহ ইয়ায়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারীকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওলাকা তারপর বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে জবেহ সম্পর্ন করলেন”।(আবু দাউদ শরীফ)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।