Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাগের খেসারত দিচ্ছে লাখো কোটি টাকা

জাপানে নাগরিক অধিকার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

জাপানের রাজধানী টোকিওর নারিতা বিমানবন্দর। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৭শ’ বিমান ওঠা-নামা করে। তবে, এই বিমানবন্দরের রানওয়ের মাঝখানে বিষফোঁড়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে ছোট একটি বাড়ি। বাড়িতে কেউ বসবাস করে না। এই জমিটুকুর কারণে সমান্তরালে নামতে পারছে না বিমান। বাড়িটি না থাকলে প্রতিদিন ওঠা-নামা করতে পারতো ১২০০ থেকে ১৫০০ বিমান।
এর ফলে প্রতিবছর দেশটির লোকসান গুনতে হচ্ছে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা। তারপরেও সে বাড়িতে সরকারকে দিতে হচ্ছে বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন ইত্যাদি সেবা। ১৯৬৬ সাল থেকে সরকার আবদার করে চললেও মন গলেনি বাড়ির মালিকের। বাড়ির স্থানটুকু না দেয়ার কারণ- সরকার তার কাছে অনুমতি না নিয়েই বিমান বন্দরের জন্য স্থানটুকু নির্ধারণ করেছে। এই রাগেই কেটে গেল এতগুলো বছর। কিন্তু কাগজে সই না করায় বাড়ি অক্ষতই রয়েছে সেই জাপানি নাগরিকের।
২০১৫ সাল। টোকিওর মেয়র ইয়োইচি মাসুজো টোকিও অলিম্পিক ২০২০’র প্রস্তুতির জন্য গিয়েছিলেন একটি বিজনেস ট্রিপে। সেই যাত্রায়, ভুলক্রমে নিজের জন্য কেনা সামান্য কিছু জিনিসের মূল্য সরকারি খাতায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এই নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় জাপান জুড়ে। অর্থের অঙ্ক সামান্য হলেও করের টাকার প্রতি অবহেলা মেনে নিতে নারাজ জনগণ। জনগণ টেলিভিশনে প্রশ্ন তুলছে, যে মেয়র সরকারি অর্থ নিয়ে অবহেলা করে, তার কাছে টোকিও মেট্রোপলিটন কতটুকু নিরাপদ? এই ঘটনার কারণে মেয়রকে জনসম্মুখে চাইতে হয়েছিল ক্ষমা। তিনি টেলিভিশনে বলেন, ‘ক্ষমা করার দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা আমাকে ক্ষমা করুণ। এই ভুল আর হবে না।’
জাপানের পাহাড়ের পাদদেশে শহর ফুকুওয়া। এই শহরের ব্যস্ত বিমানবন্দরটিতে প্রতি তিন মিনিটে একটি করে বিমান ওঠা-নামা করে। শহরের কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে আর্জি জানালেন, বিমানের ওঠা-নামার কম্পনের কারণে এক্সপেরিমেন্ট করতে সমস্যা হয়। আলোচনা শুরু করলেন সমস্যা সমাধানের। বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তর না কি বিমানবন্দর? সরকার তাদের বেঁধে দেয়া ১০ বছর সময়ের মাঝে সরিয়ে ফেললেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ২০০৬ সালে শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে স্থাপিত হলো নতুন ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের জন্য দেয়া হলো শাটল ট্রেন এবং উন্নত রাস্তা। কোনো অবরোধ হলো না, আন্দোলনে নামতে হলো না শিক্ষার্থীদের। শুধুমাত্র সরকারের সদিচ্ছার কারণে শান্তিপূর্ণভাবে পূরণ হলো শিক্ষার্থীদের চাওয়া।
যাহোক, নারিতা বিমানবন্দরের রানওয়ের মধ্যে ওই বাড়ির জন্য এত ক্ষতি স্বীকার করছে সরকার, কিন্তু তা বলে জোর করে বাড়িটি ধ্বংস করে নি বা জাপানের কোনো আদালত ঐ বাড়িটি ভাঙারও নির্দেশ দিতে যায়নি। জাপান সরকার সে দেশের নাগরিক অধিকারের প্রতি এমনই শ্রদ্ধাশীল।



 

Show all comments
  • জলিল ১২ আগস্ট, ২০১৮, ৩:৩৮ এএম says : 2
    এ ধরনের রাগ ভালো না
    Total Reply(0) Reply
  • parvez ১২ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৪৫ পিএম says : 0
    এদেশের জমি অধিগ্রহণ কর্তৃপক্ষ হলে কি হত ?
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Shawkat ali ১৩ আগস্ট, ২০১৮, ২:২৩ পিএম says : 0
    Japanies puple rite is expected whole world.Anather any country is not possible. Bangladeshi puple dos't realise it.
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ শরীফুজ্জামান ১৩ আগস্ট, ২০১৮, ৪:৫৬ পিএম says : 0
    এ সব দেশ থেকে আমাদেরও কিছু শিখা উচিৎ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাপান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ