Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মার্কিন নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক মুসলিম প্রার্থী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০১৮, ১১:২৮ এএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যের গভর্নর পদে প্রাথমিক নির্বাচন গতকাল মঙ্গলবার সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের অন্যতম প্রার্থী আবদুল্লাহ সাইদ যদি এই নির্বাচনে জয় পান, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম গভর্নর হওয়ার পথে আরো একধাপ এগিয়ে যাবেন তিনি।

৩৩ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সাইদ রাজনীতিতে নতুন কিন্তু শক্তিশালী প্রার্থী। তার সামনে করপোরেট জগতের অর্থ ও বিত্তের মালিক হওয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি প্রবীণ সিনেটর ও দেশটির প্রেসিডেন্ট পদের সাবেক প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স ও গত জুন মাসে নিউ ইয়র্কে প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ী ডেমোক্র্যাট নেতা আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-করতেজের সমর্থন পেয়েছেন।

নির্বাচনে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে সাইদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যায়ের সংবাদমাধ্যমগুলোতে গুরুত্ব পেতে শুরু করার পর তাকে বেশ কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। জনমত জরিপগুলো বলছে, রাজ্য সিনেটের সাবেক ডেমোক্র্যাটিক নেতা গ্রেচেন হুইটমার বেশ ভালো ব্যবধানেই এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু ২০১৬ সালের ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রাথমিক ভোটেই হিলারি ক্লিনটনের অবাক করা জয়ের ঘটনা থেকেই সাইদের সমর্থকেরা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশার আলো দেখছেন। তা ছাড়া প্রাথমিক নির্বাচনে যদি সাইদ তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করতে সক্ষম হন, তারপর তার জন্য আরো বড় যুদ্ধ অপেক্ষা করছে। কারণ ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই রাজ্য থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জয় পেয়েছিলেন।

অবশ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান জেটপ্যাক বলছে, বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও যে বিশাল সংখ্যক মুসলিম আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে লড়ছেন, আবদুল্লাহ সাইদ তাদেরই একজন। চলতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয়, রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৯০ জনেরও বেশি মুসলিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বলে জানিয়েছে জেটপ্যাক। তাদের বেশির ভাগই ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর এক বছরে এবারই প্রথম এত মুসলিম প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

নিউ ইয়র্ক টাইমসে ধর্ম, পারিবারিক জীবন ও মার্কিন রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করেন ওয়াজাহাত আলী। তিনি বলেন, ৯/১১ এর পর থেকে মার্কিন সংস্কৃতি থেকে রাজনীতি তথা আমেরিকান জনজীবনের সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হওয়ার ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে জোরালো প্রবণতা দেখা গেছে। মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষমূলক প্রচারণা এবং হামলা বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের জয়ের পর ইসলামভীতি ও মুসলিমবিদ্বেষ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও মার্কিন রাজনীতিতে মুসলমানদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বাড়ছে। ২০১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের ওপর ৩০০টি বিদ্বেষমূলক হামলা করা হয়েছে এবং এই হামলার সংখ্যা ২০১৬ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি বলে এক প্রামাণ্যচিত্রে উল্লেখ করেছে ‘দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস’ নামক একটি সংস্থা। পাশাপাশি ‘সাউদার্ন পোভার্টি ল সেন্টার’ নামক একটি সংস্থা বলছে যে, ২০১৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পরিমাণে মুসলিমবিদ্বেষী সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে।

ওয়াজাহাত আলী বলেন,‘যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমান, অভিবাসী ও বিভিন্ন বর্ণের মানুষের জন্য ট্রাম্পের নির্বাচন ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। বর্তমান এই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা একটি প্রশংসনীয় ব্যাপার এবং তা হতে হবে আমেরিকান মূল্যবোধকে ধারণ করেই।’ অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন নিয়ে মার্কিন সিনেটে প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারে আশাবাদী দেদরা আবাউদ। ট্রাম্পের নির্বাচনের পর রাজনীতিতে যুক্ত হতে যারা উৎসাহিত হয়েছিলেন, তিনি তাদেরই একজন। পেশায় আইনজীবী এবং নাগরিক অধিকার কর্মী দেদরা আবাউদ বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নে আগে মুসলমান আমেরিকানরা অন্য অভিবাসী গ্রুপগুলোর মতোই ছিল। কিন্তু ৯/১১-এর পর, ইসলামভীতি ছড়িয়ে দেয়ার কারণে অনেকে রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। ৪৫ বছর বয়সী এই নারী রাজনীতিক আরো বলেন, বর্তমানে ট্রাম্পের অধীনে মুসলিমদের অবস্থা ১১ সেপ্টেম্বর হামলার ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম আমেরিকানরা যে তীব্র সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছিলেন তার থেকেও ভয়াবহ।

উল্লেখ্য, মাথায় হিজাব পরার কারণে তিনি অনলাইনে ও প্রকাশ্যে বিদ্বেষমূলক হয়রানির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন বলে জানান আবাউদ। অবশ্য সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই বেশ কয়েকজন মুসলিম নারী প্রার্থী এই ধরনের বৈষম্যমূলক হামলা ও আচরণের শিকার হয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
আল-জাজিরা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ