Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

এবার মেঘালয়ে বাঙালিদের ওপর নির্যাতন ও হুমকি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

আসামের নাগরিকত্ব ইস্যুতে (এনআরসি) প্রতিবেশী রাজ্য মেঘালয়েও বাংলাভাষীরা নির্যাতন ও হুমকির মুখে পড়েছেন। চলছে আন্তঃরাজ্য বাঙালি নিগ্রহ। এ অবস্থায় বাঙালির দেশ কোনটা , জানতে চান বাঙালিরা। নাগরিকপঞ্জির খসড়া প্রকাশের পর থেকেই বাঙালিদের চিহ্নিত করে হেনস্তা করা হচ্ছে আসাম-মেঘালয় সীমান্তে। বুধবার সকাল ১০ টা থেকে সম্প‚র্ণ অবৈধ ভাবে আবার এনআরসির নথি পরীক্ষা শুরু করে খাসি ছাত্ররা । খবর বরাক বুলেটিন।
সোমবারে এনআরসির খসড়া প্রকাশের পর মঙ্গলবার সকাল থেকে অভাবনীয় হয়রানি নেমে এসেছে মেঘালয়গামী বরাকবাসীর উপরে। আসাম মেঘালয় সীমান্তের রাতাছড়ায় আচমকা জাতীয় সড়কের উপরে গৌহাটি মুখী যানবাহনের গতি রোধ করতে শুরু করে ছাত্র সংস্থা খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এবং নর্থ ইস্ট স্ট‚ডেন্টস ইউনিয়ন।
স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা যুগাশঙ্খ বুধবার জানায়, এনআরসিকে কেন্দ্র করে মেঘালয়ে বাংলাভাষীরা নির্যাতিত হচ্ছেন। বিভিন্ন সড়কে তাদেরকে আলাদা করে ফেলছে খাসি স¤প্রদায়ের লোকজন। রাস্তায় রাস্তায় চেকপয়েন্ট বসিয়েছে খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (কেএসইউ)। এসব চেকপয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে তারা যাত্রীদের নামতে বাধ্য করছে।
এরপর তাদের ভিতর থেকে বাংলাভাষীদের আলাদা করা হচ্ছে। দ্য নর্থইস্ট টুডে’র রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনটি জেলায় এমন চেকপয়েন্ট বসিয়েছে কেএসইউ। বুধবার তারা সেখানে কমপক্ষে এক হাজার ‘অবৈধ অভিবাসীকে’ চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে পাহাম্মাওলেইনের চেকপয়েন্টে চিহ্নিত করা হয়েছে কমপক্ষে ২শ’ ‘অভিবাসীকে’। তাদেরকে আসামে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে আসামে প্রকাশিত এনআরসিতে রাতে ৪০ লক্ষাধিক অনুপ্রবেশকারী শনাক্ত হয়েছে, ফলে যাদের নাম এনআরসিতে নেই তারা অনুপ্রবেশকারী এবং এদের মেঘালয় ঢুকতে দেওয়া হবে না। মঙ্গলবার অফিস খুলে সারা দিন ধরে রাতাছড়ায় ‘কেএসইউ ইনফিলট্রেশন ক্যাম্প’ নাম দিয়ে তারা তল্লাশি চালিয়ে যায়। মেঘালয় পুলিশ কখনো ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আবার কখনো তাদের সহায়তা ও করে।
এদিকে বৃস্পতিবার শিলচরে আটকে দেওয়া হয় তৃণম‚লের প্রতিনিধি দলকে। শিলচর বিমানবন্দরের বাইরেই বেরোতে দেওয়া হয়নি তৃণম‚লের প্রতিনিধি দলকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিমান থেকে নামার পরে বিমানবন্দরের ভিতরেই সুখেন্দুশেখর রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, ফিরহাদ হাকিমদের পথ আটকায় আসামের পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করেন তারা। বাধা সরিয়ে জোর করে বিমানবন্দরের প্রস্থান পথের দিকে দৌড়নোর চেষ্টা করলেন কয়েকজন। তাতে পুলিশের সঙ্গে জোরদার ধস্তাধস্তি হল সাংসদ-বিধায়কদের। অসমের পুলিশ শিলচর বিমানবন্দরে বাংলা থেকে যাওয়া প্রতিনিধি দলকে মেরেছে বলেও অভিযোগ তৃণম‚লের। তবে সুখেন্দু-কাকলিরা হাল ছাড়েননি। শিলচর বিমানবন্দরে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। প্রয়োজনে সারা রাত বিমানবন্দরেই বসে থাকবেন, এমনও জানান তারা।
তৃণম‚লের প্রতিনিধি দল পৌঁছনোর আগে থেকেই শিলচরে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। তৃণম‚লের সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে প্রশাসনের আলাপ আলোচনা চলছে। তবে, এখনও স্পষ্ট নয় তাঁদের শিলচর থেকেই ফিরে আসতে হবে না কি, আসামে ঢোকার অনুমতি তাঁরা পাবেন। সাংসদ ও বিধায়ক মিলিয়ে এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন আট জন।
তৃণম‚ল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার অভিযোগ করেন, ‘এখানে সম্প‚র্ণ অবৈধ কার্যকলাপ চলছে। আমরা সবাই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, কেউ সাংসদ, কেউ মন্ত্রী, কেউ বিধায়ক। কিন্তু আমাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের অনেকের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সম্প‚র্ণ অবৈধ ভাবে আমাদের আটকানো হচ্ছে। কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। সারা রাত এখানেই আটকে থাকব কি না জানি না। এখানে এসে মনে হচ্ছে দেশে জরুরি অবস্থা চলছে।’
মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি হুমকি: অরুণ জেটলি
ক্রমবর্ধমান মুসলিম জনসংখ্যাকে সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছেন ভারতের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেছেন, আসামে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩.৯ গুণ। এর ফলে তারা আসামকে বাংলাদেশের সঙ্গে একীভ‚ত করার দাবি তুলতে পারেন। এতে বলা হয়, আসামে বহুল বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিষয়ক এনআরসি ইস্যুতে এর পক্ষে বুধবার কথা বলেন অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, আসাম রাজ্যে হিন্দু জনসংখ্যার চেয়ে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি অনেক বেশি।
অরুণ জেটলি ভারত সরকারের সবচেয়ে সিনিয়র মন্ত্রীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একটি বøগে লিখেছেন, ১৯৬১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরে আসামে সংখ্যাগুরু জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২.৪ গুণ। অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের (মুসলিম) সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩.৯ গুন। এর ফলে জনসংখ্যাতত্তে¡ বড় ধরনের একটি প্রভাব পড়েছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সমালোচনা করেন। বলেন, নাগরিকত্ব নির্ধারণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। অভিবাসীদের দ্বারা জনসংখ্যা তত্ত¡ যে পরিবর্তন ঘটছে তার থেকে দ‚রে নেই তিনিও। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস।
সাবেক প্রেসিডেন্টের পরিবারের সদস্যরা তালিকা থেকে বাদ
ভারতের আসাম রাজ্যের জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) চ‚ড়ান্ত খসড়ায় বাদ পড়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ফখরুদ্দিন আলি আহমেদের পরিবারের সদস্যরাও। সোমবার ওই তালিকা প্রকাশ হওয়ার একদিন পর এ বিষয়টি তুলে ধরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
মঙ্গলবার দিল্লিতে ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স অব ইন্ডিয়া অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে মমতা বলেন, আসামের এনআরসি-তে সাবেক প্রেসিডেন্ট ফখরুদ্দিন আলি আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নাম না থাকায় আমি অবাক হয়েছি। আমি আর কী বলতে পারি? ওই তালিকায় অনেকেরই নাম নেই।
ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ ১৯৭৪-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ভারতের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। উল্লেখ্য, অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়ায় এ তালিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। ফখরুদ্দিনের ভাই একরামুদ্দিনের ছেলে জিয়াউদ্দিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, কল্পনা করুন আমি ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্টের ভাতিজা। অথচ আমার নামটিই নেই এই তালিকায়। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ভারতের স্বাধীনতা যোদ্ধা বাহাদুর গাওনবুরাহ’র ‘ গ্রেট-গ্রান্ডসন’ প্রফেসর ওমর সাদুদ্দিন আহমেদের নাম নেই ওই তালিকায়। ১৮৫৭ সালে জোড়হাটে যখন সিপাহি বিদ্রোহ হয় তখন তাতে অংশ নিয়েছিলেন বাহাদুর গাওনবুরাহ। তাকে গ্রেপ্তার করে আন্দামানের সেলুলার জেলে রাখা হয়েছিল। তালিকায় নাম নেই আসাম পুলিশের সাব ইন্সপেক্সর শাহ আলম ভুইয়ার। তিনি মুখ্যমন্ত্রী সনোয়ালের সঙ্গে সা¤প্রতিক সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নাম তালিকায় না থাকায় হতাশ হয়েছেন শাহ আলম। তিনি ৩০ বছর ধরে পুলিশে চাকরি করছেন। তার বড়ভাই চান্দু ভুইয়া ভারতের সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। তৃতীয় ভাই শিলু আসাম পুলিশের একজন কমান্ডো। আর সবচেয়ে ছোটজন মুকুট হলেন বিএসএফের জওয়ান। শাহ আলমের ছেলে বাবুল ভুইয়াও বিএসএফের জওয়ান।



 

Show all comments
  • মোঃ নুরুল ইসলাম ৩ আগস্ট, ২০১৮, ৪:৩৯ পিএম says : 0
    ভারতে বাংলা ভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠি বৃদ্ধিতে যদি ভারতের সার্বভৌমত্ব হুঁমকীর সম্মূখীন হয় বিশেষ করে বিশেষ করে আসাম তবে ভারতীয় তামাম খাসিয়াগোষ্ঠিরা সারা বিশ্বের প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য প্রধাণ ভাবে দায়ী কারণ সে তারা প্রকৃতির তামাম জীবজন্তু প্রাণী ও নিরীহ হিংস্র পোঁকা মাঁকড় খেঁক্ষো কিংবা তাদের বংশ বিস্তার নষ্টকারী????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাঙালি

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ