Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবর্জনার শহর ফেনী!

ফেনী থেকে মো: ওমর ফারুক | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ফেনী শহরজুড়ে ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ির কারণে দুর্গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া সড়কের ওপর ময়লা স্তুপ করে রাখায় কোনো কোনো এলাকায় যান চলাচলে তীব্র সমস্যা দেখা দিয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, ফেনী শহর যেন ময়লার ডাস্টবিন। দিন-রাত ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকলেও যেন তা দেখার কেউ নেই। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী আর সুইপাররা নিজ দায়িত্ব পালন করার চেয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা আর বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে। এদিকে ফেনী শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কোনো ডাস্টবিন নেই। ফলে ময়লা-আবর্জনা রাস্তার উপরেই স্তূপ করে রাখা হয়। ২০১৪ সালের উপনির্বাচনে ১৮ মাসের জন্য ফেনী পৌরমেয়র নির্বাচিত হন স্টার লাইন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জাপা নেতা হাজী আলাউদ্দীন। মেয়াদ শেষে জাপা থেকে আ.লীগে যোগ দেন তিনি। তার দ্বিতীয়বার মেয়র হওয়ার মেয়াদ দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও ফেনী পৌর এলাকায় কোনো ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়নি। শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের ওয়াপদা মাঠ, ইবনে হাসমান হাসপাতাল ও এফ রহমান এসি মার্কেট সংলগ্ন এলাকার তিন স্থানে খোলা ডাস্টবিন তথা রাস্তার উপর আবর্জনা ফেলা হয়। ট্রাংক রোডের প্রেসক্লাব সংলগ্ন খাজা আহমদ রাস্তার মাথা, জেবি রোড, বড় মসজিদ সংলগ্ন তাকিয়া রোড, রাজবাড়ি ভূমি অফিস, পূর্ব ও পশ্চিম উকিল পাড়া রোডের মাথা, দাউদপুল ব্রিজের দু’পাশ, খাজা আহমদ লেকে গড়ে ওঠা অবৈধ সবজি দোকানের ময়লা-আবর্জনা সড়কের ওপর ফেলা হয়। কোর্ট বিল্ডিং রোডের সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক শাখার সামনে মুক্তবাজার, পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস রাস্তার মাথা, লতিফ টাওয়ার, ফালাহিয়া মাদরাসা রোড, শান্তি নিকেতন রাস্তার মাথা, খাজুরিয়া রোড ও আদালত সংলগ্ন সড়কে যত্রতত্র আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয় প্রতিদিন।
এদিকে ফেনীর অফিসপাড়া কোর্ট বিল্ডিংয়ের প্রবেশ মুখে পৌরসভার উদ্যোগে মাছের আড়ৎ গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে দিনরাত মাছের গন্ধে পুরো এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এনিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা ত্যক্ত বিরক্ত হলেও পৌরসভার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিয়ে ঝামেলায় জড়াতে চায় না। ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাছের গন্ধে অফিস করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফেনীর সাবেক ডিসি হুমায়ুন কবির খোন্দকার সেসময় বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে পৌরসভাকে মাছের আড়ত সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেও তাতে পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করেনি।
এ বিষয়ে পৌর এলাকার কামাল উদ্দীন, আবদুল কাদের, মো. আলম ও হাসিনা বেগম তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ফেনী শহরের কোথাও মানসম্পন্ন ও পরিবেশবান্ধব ডাস্টবিন না থাকায় ক্ষিপ্ত সাধারণ মানুষ। এদিকে কলেজ শিক্ষার্থী নাদিয়া, নিহা, আফরিন, জামাল ও শাহীন জানায়, শহরজুড়ে ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে মনে হয় ফেনী যেন আবর্জনার ডিপো। এদিকে ফেনী বড় মসজিদের উত্তরে খাজা আহমদ সড়কের সওদাগর পট্টিতে ড্রেনের ময়লা পানির পর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় ম্যানহোল দিয়ে আবর্জনা বের হয়ে দুর্গন্ধে পুরো এলাকা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ১৭ নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর মানিককে এ বিষয়ে বারবার বলেও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। অদৃশ্য কারণে কাউন্সিলর মানিক নীরব রয়েছেন বলে এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা জানান।
ফেনী শহরজুড়ে আবর্জনা ও অনিয়ম বিষয়ে জানতে মেয়র হাজী আলাউদ্দীন বলেন, ডাস্টবিন স্থাপনের জন্য সড়কের পাশের জায়গার মালিকরা জায়গা দিতে রাজি হচ্ছে না। তাই ডাস্টবিন স্থাপন করা যাচ্ছে না। আর সিএনজির অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে শহরজুড়ে ময়লা আবর্জনা সৃষ্টির বিষয়ে, সিএনজির জন্য স্থায়ী স্ট্যান্ড নির্মাণে আলাপ আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রাতে যেসব ময়লা জমা হয় তা সকালে আর সারাদিন যা ফেলা হয় তা বিকালে সুইপাররা পরিস্কার করে। চাহিদা মতো সুইপার না থাকায় পৌর কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও সময়মতো আবর্জনাগুলো অপসারণ করা যায় না বলে স্বীকার করেন।



 

Show all comments
  • এরশাদ ( ksa) ১ আগস্ট, ২০১৮, ৭:৪৯ এএম says : 0
    ঘটনা সত্যি। আল্লাহ যেন রহম করেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবর্জনা

২৪ জানুয়ারি, ২০২২
১ আগস্ট, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ