পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীজুড়ে ময়লা আবর্জনা। যত্রতত্র ময়লায় ভাগাড়। জনসচেতনতার অভাব আর দায়িত্ববানদের অবহেলা ও কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনায় গোটা রাজধানীই যেন ময়লা-আবর্জনার বৃহৎ ভাগাড়। রাস্তাঘাট, অলিগলি, আবাসিক, বাণিজ্যিক এলাকা সর্বত্রই ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি। ড্রেন-নর্দমার নোংরা তরল ময়লা-পানি ঢুকে পড়ছে বাড়িঘরেও। চারদিকের উৎকট গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে থাকছে। প্রতিটি বাড়ির ফাঁকে, খোলা জায়গায়, গলিপথে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। যে কারণে নগরবাসীকে নাকে মুখে রুমাল চেপে চলাফেরা করতে হয়। নানা ধরনের ময়লা-আবর্জনার উৎকট গন্ধ নাগরিক জীবনকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেললেও এর বিন্দুমাত্রও টের পান না নগর কর্তারা।
রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। তারা জানান, ঘনবসতির এ শহরে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে দুই কর্পোরেশনই। অভিযোগের পর অভিযোগ, বর্জ্য অপসারনে কর্পোরেশনের উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য দেখেছেন না সেবাগ্রহী নগরবাসী।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির কোথায়ও এখন আগের মত আর ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে না। আমাদের পরিচ্ছন্নকর্মীদের নির্দেশ দেয়া আছে, তারা যেন সকাল ৬টার মধ্যেই রাস্তা-ঘাট ও জনসমাগমের স্থানের ময়লার ডাস্টবিন থেকে ময়লা অপসারন করে নেয়। রাতের মধ্যেই যেন ট্রাকে করে এই ময়লা ঢাকার বাইরে নির্ধারিত স্থানে নিরাপদে নিয়ে ফেলতে পারে। তিনি বলেন, এর ব্যতিক্রম যেন না ঘটে সে জন্য পরিচ্ছন্নকর্মীদেরকে কাজে যথা সময়ে হাজির করতে আমরা নানা কার্যকর পদক্ষেণ গ্রহণ করেছি। ডিএসসিসিতে এখন ময়লা আবর্জনা নিয়ে আর কোন সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয় না।
সরেজমিন দুই সিটির বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে স্থাপিত ডাস্টবিনের ছড়াছড়ি। রাজধানীর গুলিস্তান থেকে তাঁতীবাজার যেতে নাজিরাবাজার মোড়ে ওভারব্রিজের নিচে রাখা হয়েছে বড় বড় কয়েকটি ময়লার কনটেইনার। এসব কনটেইনার উপচে পড়ছে ময়লা-আবর্জনা। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে ফুট ওভারব্রিজটি হয়ে পড়েছে কার্যত পরিত্যক্ত। এ ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির ময়লার খোলা কনটেইনার ডাস্টবিন বসানো হয়েছে বাবুবাজার ব্রিজ, রায়সাহেব বাজার থেকে ধোলাইখালের মাঝামাঝি, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের প্রবেশপথে, দয়াগঞ্জ মোড়, দয়াগঞ্জ বাজার, জুরাইন রেলগেট, শনির আখড়া, আজিমপুর, বাসাবো, বেইলী রোড, রামপুরা, বাংলামোটর, নিউ মার্কেট, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজার, নাখালপাড়া, মহাখালী, বনানী, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকায়। আবার এসব কনটেইনার ময়লায় ভরপুর থাকায় পাশেই আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে দিনের পর দিন। ফলে রাজধানীর বাতাসে ময়লার উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।
দেখা গেছে, যত্রতত্র রেখে দেওয়া ডাস্টবিনের কারণে রাস্তার বেশির ভাগ স্থান সংকুচিত হয়ে এসেছে। যতটুকু বাকি থাকে, তা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এতে এসব স্থানে যানজট লেগেই থাকে। এই কনটেইনারগুলোর কারণে দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা। রাতের বেলায় ময়লা অপসারণের কথা থাকলেও দিনের যখন তখন ময়লা অপসারনণ করতে দেখা যায়। ফলে পথচারীদের নাক চেপে চলাফেরা করতে হয়। অথচ সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম অনুসারে প্রতিদিনের আবর্জনা রাত ১২টার পর থেকে ভোরের মধ্যে অপসারণ করার কথা। একদিকে প্রধান সড়কের পাশের এই ডাস্টবিনগুলো সৃষ্টি করছে যানজট, অন্যদিকে অসহনীয় যানজটে মানুষের যখন নাকাল অবস্থা, তখন এসব ডাস্টবিনের দুর্গন্ধে দুর্ভোগ চরমে ওঠে সাধারণ মানুষের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সংগৃহীত বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব। আহরিত বর্জ্য যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিণত হতে পারে মূল্যবান সম্পদে। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ডাম্পিং ব্যবস্থারের অভাবে বর্জ্য আজ বোঝায় পরিণত। গৃহস্থালী বর্জ্যর পাশাপাশি রয়েছে হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্যও। রাজধানীর গৃহস্থালী বর্জ্য থেকে হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্য আলাদা করা হয় না। এগুলো ফেলা হয় ডাস্টবিন, রাস্তাঘাটসহ যেখানে সেখানে।
নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার স্থান না থাকায় বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে ময়লাবাহী ভ্যানগাড়ি চালকরা ময়লা সংগ্রহ করে তা প্রধান সড়কের পাশে, কিছু আবাসিক এলাকায় বাড়িঘরের পাশে, বাসস্ট্যান্ডে, বাজারে, হাসপাতালে এমনকি স্কুলের সামনের খালি জায়গাতেও ফেলা হচ্ছে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। দীর্ঘদিনের এই সমস্য থেকে ঢাকাবাসীকে রক্ষা করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে দুই সিটির সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এর কারণ হিসেবে ময়লা ফেলার জায়গা জটিলতা ও জনবল স্বল্পতাকে দায়ী করা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এম এ রাজাক বলেন, ঢাকা শহরে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের বসবাস। এখানে মেইন রোড, লেইন, বাইলেন যেকোনো রাস্তা বলেন সবখানে দোকান, মুদি দোকান, হকার চা বিক্রেতা ফল বিক্রেতা কাচা বাজার রয়েছে। তারা সারাদিন ধরে রাস্তায় ময়লা ফেলতে থাকে। বাসা বাড়ি থেকেও ফেলা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের লোকজন সকালে একবার ময়লা পরিষ্কার করে। তারপরেই সারাদিন যে যেমন ময়লা ফেলে যাচ্ছে। এভাবে কতটা পরিষ্কার রাখা যায়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যেখানে-সেখানে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ফলে পুরো শহরই ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, গৃহস্থালি বর্জ্যরে পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল বর্জ্যও একই সঙ্গে ফেলা হচ্ছে। এগুলো সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে মিশে সংক্রামক ও ক্ষতিকর বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে ছড়িয়ে পড়ছে হেপাটাইটিস ‘বি’, হেপাটাইটিস ‘সি’, য²া, ডিপথেরিয়ার মতো রোগ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।