বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা পারভেজ সরকারকে (৪০) অপহরণের দীর্ঘ ৮ ঘন্টা পর রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফুট এলাকায় ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে তিনশ’ টাকা মূল্যমানের দুটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই রাখেন। তবে কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে গেছে সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। তার ধারণা, রাজনৈতিক কারণে প্রতিপক্ষের লোকেরা তাকে অপহরণ করে থাকতে পারে।
এদিকে ঘটনার দুই দিন পার হলেও গতকাল পর্যন্ত অপহরণ ঘটনার কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, তারা আশপাশের বাসা থেকে প্রাপ্ত সিসিটিভির ফুটেজগুলো বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের সনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তত্বাবধানে এ তদন্ত কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই অপরাধীদের সনাক্ত ও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
পারভেজ সরকারের ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয় স্বজনসহ অনেক নেতাকর্মী তাকে দেখতে লালমাটিয়ার বাসায় যান। সবাই তার ফিরে আসার খবরে সন্তুষ্ট হলেও আতঙ্ক কাটেনি এখনো। গতকাল বেলা ১২টার দিকে লালমাটিয়ার বাসায় গিয়ে অনেক লোকজনকে তার সঙ্গে আলাপ করতে দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে তাকে খুব আতঙ্কিত দেখা গেছে। অপহরণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা সঙ্গেও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
অপহরণের বর্ণনা দিয়ে পারভেজ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বাসার দিকে ফিরছিলাম। বাড়ির গেটের কাছাকাছি পৌঁছতেই এক লোক গাড়িতে করে এসে আমাকে সালাম দেয়। ঠিক ওই সময় আরেকজন লোক এসে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে দু’জনে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। এরপর কালো একটি মুখোশ পড়িয়ে দেয় এবং মুখে কাপড়ের মতো কিছু চেপে ধরলে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।’
তিনি বলেন, ‘জ্ঞান ফেরার পর গাড়িতে মোট পাঁচ-ছয়জন ব্যক্তিকে দেখতে পাই। তাদের সবার হাতে অস্ত্র ছিল। গাড়িতে থাকাকালীন পুরো সময়টায় আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখে তারা। তবে কোন মারধর করেনি। জ্ঞান ফেরার অল্প সময়ের মধ্যে ইংরেজি ও বাংলায় লেখা তিনশ’ টাকা মূল্যেমানের দুইসেট ফাঁকা স্ট্যাম্প নিয়ে আসে। দুটি স্ট্যাম্পেই আমার স্বাক্ষর করিয়ে নেয় তারা। পুরো ঘটনাই গাড়ির ভেতরে ঘটেছিল। তবে তারা কেন এটা করলো তা বুঝতেছি না। এ ঘটনায় আমি আতঙ্কিত ও শঙ্কিত। পরবর্তীতে গাড়িটি অনেকক্ষণ ধরে বিভিন্ন দিকে ঘুরে-ফিরে আনুমানিক রাত ১০টার দিকে রূপগঞ্জ কাঞ্চন ব্রিজের আগে একটি খোলা জায়গায় আমাকে নামিয়ে দেয়। তারা আমার মোবাইল ফোনসহ সব কিছুই ফেরত দেয়। গাড়ি থেকে নামার পর আমি বাসায় স্ত্রীর কাছে কল করে আমার অবস্থান জানাই এবং আামাকে দ্রæত নিয়ে যেতে বলি। পরে পরিবারের সদস্যরা পূর্বাচলের ৩০০ ফুট এলাকা থেকে গাড়িতে করে আমাকে বাসায় নিয়ে আসে।
কাউকে সন্দেহ করছেন কিনা জানতে চাইলে পারভেজ সরকার বলেন, ‘আমার সাথে কারো ব্যবসায়িক দ্বন্দ¦ নেই। তবে রাজনৈতিক কারণে প্রতিপক্ষের লোকেরা এমনটি করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘তিতাসের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল শিকদারের সঙ্গে আামর বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরে কুমিল্লায় আমার বাড়িতে হামলাও হয়েছিল। তখন আমি সোহেল শিকদারকে আসামি করে মামলা করি। যা বর্তমানে চলমান।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবারের তুলে নেওয়ার ঘটনায় এখনো কাউকে সন্দেহ করছি না। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। তারাই অপরাধীদের খুঁজে বের করবে।’ তবে তাকে উদ্ধারে সহযোগিতার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান।
আগামীতে জাতীয় নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ায় অপহরণ করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পারভেজ সরকার বলেন, ‘আমি আসলে অপহরণের কারণ বুঝতেছি না। কেন আমাকে অপহরণ করা হল সেটিও স্পষ্ট নয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়োন দিলে আমি নির্বাচন করবো।’
এদিকে ঘটনার দুইদিন পার হয়ে গেলেও গতকাল রাত ৭টা পর্যন্ত অপহরণের কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, অপহরণকারীদের কাউকে এখনো সনাক্ত করা যায়নি। তবে তিনি ফিরে এসেছেন সেটি আশার সংবাদ। পুলিশ আশপাশের বিভিন্ন বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। অপহরনকারীরা যে গাড়িটিতে করে তাকে তুলে নিয়ে গেছে সেই গাড়ির নম্বর প্লেটে থাকা নম্বরটি বøক। ওই নম্বরটি এখনও কাউকে দেওয়া হয়নি বলে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছে। ওসি আরও বলেন, জিডির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের তত্ত¡াবধানে বিষয়টির তদন্ত চলছে। বর্তমানে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ চলছে। এছাড়া পারভেজ সরকার স্বাভাবিক হলে বিষয়টি নিয়ে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।