পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি গø্যাকসো স্মিথক্লেইন (জিএসকে) বাংলাদেশ লিমিটেড তার ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনিট বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অফ কমিউনিকেশনস রুমানা আহমেদ। জিএসকে’র পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক পর্যালোচনা শেষে গø্যাকসো স্মিথক্লেইন-এর পরিচালনা পর্ষদ ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনিট সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠানটির ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। তবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কনজ্যুমার হেলথকেয়ার কার্যক্রম যথারীতি বহাল থাকবে। বর্তমানে জিএসকে উৎপাদিত সবগুলো ওষুধেরই জেনেরিক বিকল্প সহজলভ্য হয়েছে এবং মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে গেছে। তাই চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনীয় সব ওষুধই সহজে পাওয়া যাবে এবং ইউনিসেফ এবং ভ্যাক্সিন অ্যালায়েন্স গ্যাভির সহায়তায় পাওয়া জিএসকে’র টিকা বাংলাদেশে পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটির সাথে সরকারের ১২ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। এদিকে গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি তার উৎপাদন কমিয়ে আনতে থাকে এবং গত ২২ জুলাই পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে।
একটি বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া দেশের অর্থনীতি এবং সুনামের জন্য কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এমনিতেই দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি খুবই মন্দাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ব্যবসায়িক পরিবেশ স্থিতিশীল না হওয়া এবং উপযুক্ত সহায়তা না পাওয়ার আশঙ্কায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করতে দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব থাকে। এ প্রেক্ষিতে, সুপ্রতিষ্ঠিত এবং একটি স্বনামধন্য বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার বিষয়টি বিদেশি বিনিয়োগে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর আগেও বেশ কয়েকটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিদেশি কোম্পানি ব্যবসা বন্ধ করে চলে গেছে। এ ধারাবাহিকতায় জিএসকে-এর মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা উদ্বেগজনক। ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি ফার্মাসিউটিক্যালস ও পুষ্টিকর খাদ্যসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন উৎপাদন করে দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে। মানসম্পন্ন পণ্যের কারণে এর সুনামও দেশজুড়ে রয়েছে। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বাজারে পাওয়া না গেলে মানসম্পন্ন ওষুধসহ অন্যান্য পণ্যের অভাবে ভোক্তারা বিপাকে পড়বে। ওষুধশিল্পে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হবে। এ শূন্যতা পূরণ করা সহজ হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, কী কারণে হঠাৎ করেই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করতে হচ্ছে? দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশীয় একটি স্বার্থান্বেষী গ্রæপ বিদেশি পরিচালক (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। লাভজনক এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে দেশ থেকে তার ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার জন্য দেশি-বিদেশি নানা মহল কিছুদিন থেকে তৎপর হয়ে ওঠে। আমাদের কথা হচ্ছে, একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান যার উৎপাদিত মানসম্পন্ন পণ্য ভোক্তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে, তা বন্ধের এই ষড়যন্ত্র কেন? যারাই এর সাথে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের উচিত ব্যবসায়িক সুস্থ্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আরেকটি মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। যে প্রতিষ্ঠান বিশ্বজুড়ে খ্যাত তা বন্ধ করে দেয়ার মতো অপকর্ম না করে দেশের অর্থনীতি ও মর্যাদার স্বার্থে এ থেকে বিরত থাকা উচিত। অন্যদিকে জিএসকে’র উচিত হবে, বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখা। ব্যবসায় কখনো তেজীভাব কখনো মন্দাভাব থাকা স্বাভাবিক। তাই বলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া সমীচিন নয়।
জিএসকে’র ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া বা বন্ধ করে দেয়ার মতো পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই দেশের অর্থনীতিতে একটা বড় ধরনের আঘাত। আমরা বিগত বছরগুলোতে দেখেছি, নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। গার্মেন্টস শিল্পের কথা যদি ধরা হয়, এ খাতে কয়েক হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং লাখ লাখ কর্মজীবী বেকার হয়েছে। এমনও দেখা গেছে, অত্যাধুনিক শিল্পকারখানা গড়ে তুলে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগের অভাবে চালু করতে পারছে না। উল্টো মাসে ব্যাংককে কোটি কোটি টাকা সুদ দিতে হচ্ছে। বলা বাহুল্য, একটি শিল্পকারখানাও যদি বন্ধ হয়, তবে যেখানে কর্মরত ব্যক্তিদের আয়-রোজগারহীন হয়ে পড়তে হয়। এর চাপ দেশের অর্থনীতিতে পড়ে। অন্যদিকে একটি বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে অর্থনীতিতে তার প্রভাব কতটা বড় হয়ে দেখা দেয়, তা বোধ করি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। জিএসকে’র মতো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের অর্থনীতি তো বটেই মানসম্পন্ন ওষুধ, ভেকসিন ও খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেবে। প্রতিষ্ঠানটি যতই বলুক, তার ওষুধের জেনরিক বিকল্প হয়েছে, তারপরও সেই বিকল্প কতটা মানসম্পন্ন তা নিয়ে ক্রেতা-ভোক্তার মধ্যে দ্বিধা-সংশয় থাকতে পারে। তাই প্রতিষ্ঠানটি যে কারণই দেখাক না কেন, তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলতে হবে, ঘোষিত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।