বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
লাখ টনের বেশি কয়লা আত্মসাতের ইতিহাস সৃষ্টির পর তা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। দেশের একমাত্র কয়লা দিয়ে উৎপাদিত তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার সাথে ময়লা সরবরাহ করা হয়েছে। পাথর, কাঠ, ঘাস মাটি মিশ্রিত এসব কয়লা পরিষ্কার করতে হিমশিম খেতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিকদের। আর এ কারণেই নির্দিষ্ট সময়ের কিছুটা আগে হলেও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
অবশ্য তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা কয়লার সাথে ময়লার পরিমাণ কেমন হবে তা বলতে না পারলেও তারা বলেছে কয়লা’র মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত কয়লা সরবরাহ করেছে বড়পুকুরিয়া কর্তৃপক্ষ। উদ্দেশ্য ছিল কয়লার সাথে ময়লা-আবর্জনা সরবরাহ করে কোন মতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু রাখা। এর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির নতুন ফেজ থেকে কয়লা উত্তোলন হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যেত এবং সবকিছু আগের মতই ধামাচাপা পড়ে যেত।
বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে একের পর এক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। ঠিক এই সময়ে নিজস্ব কয়লা দিয়ে পরিচালিত দেশের অন্যতম এবং একমাত্র তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়াটা কেউ মেনে নিতে পারছে না। প্রাকৃতিক কোন কারণ নয় কেবল কয়লা লুটপাটের কারণেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়েছে তা এখন ধ্রুব সত্য। এ কারণেই ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর বাপুতাবিকে/প্র:প: টেক-০৫/২০১৭/২১৬ স্মারকে তাপ বিদ্যুতের প্রধান প্রকৌশলী আ. হাকিম সরকার বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জানান যে, ২-১১-১৭ তারিখ হতে নির্মাণাধীন বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মে.ও কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩য় ইউনিট সম্প্রসারণ প্রকল্প কয়লা নেয়া শুরু করবে। তাই ১.২ ও ৩ ইউনিটের জন্য প্রতিদিন মোট প্রায় ৫ হাজার ২শ’ মে. টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এ প্রেক্ষিতে কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিবউদ্দিন আহমেদ তাপ বিদ্যুতের প্রধান প্রকৌশলীকে ১০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল ১৬৩৯ স্মারকপত্রে জানান, কয়লাখনির স্টক ইয়ার্ডে আনুমানিক ২.২৮ লক্ষ মে. টন কয়লা মজুদ থাকার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও কেন এমন হলো। ঘটনা যাই ঘটুক না কেন, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বড়পুকুরিয়া কয়লা সরবরাহের যে নিশ্চয়তা দিয়েছিল তা তারা দিতে পারেননি। কয়লা দিতে না পারলে তাপ বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাবে একথা বড়পুকুরিয়া এবং তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র সকল পক্ষ এমন কি বিদ্যুৎ, জ্বালানি বিভাগসহ মন্ত্রণালয় সকলেই জানার কথা। কিন্তু সময় থাকতে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
গত সোমবার বিকেলে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনকালে দেখা গেছে ১ নং কনভেয়ার বেল্টের কাছে বিপুল পরিমাণ পাথর ও আবর্জনার স্তূপ হয়ে আছে। যা কিনা এসেছিল বড়পুকুরিয়া কয়লা থেকে।
এ ব্যাপারে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাকিম সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, কয়লার মজুদ ফুরিয়ে আসার পর অর্থাৎ গত ২২ তারিখের আগে এভাবে পাথর ও ময়লামিশ্রিত কয়লা কনভেয়ার বেল্টে সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখতে প্রকৌশলী ও কর্মীরা পাথর ও আবর্জনা সরিয়ে বয়লারে কয়লা সরবরাহ করতে থাকে। তার মতে গত জুন মাসে কয়লা সঙ্কটের কথা জানানো হলে অভ্যন্তরীণ বৈঠকে রেশনিং পদ্ধতিতে ২৫ জুলাই পর্যন্ত তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু আবর্জনা মিশ্রিত কয়লা দিয়েও তারা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত নির্ধারিত পরিমাণ কয়লা দিতে পারেনি। আর এ কারণেই ২৫ জুলাইয়ের আগে ২২ জুলাই রাত ১০টা ২০ মিনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কি পরিমাণ পাথর ও ময়লা পাওয়া গেছে তার পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে পাথর ও ময়লার কারণে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। কেননা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কাছে কয়লা কিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে।
ময়লা কয়লা দেয়ার বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে কোন ক্ষতিও দাবি করেনি বিদ্যুৎ বিভাগ তথা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। তবে পাথর ও ময়লাযুক্ত কয়লা সরবরাহের উদ্দেশ্য ছিল এক লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন লুটপাটের ঘটনা কোনভাবে চাপা দেয়া। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ ও ২ নং ইউনিট বন্ধ হলেও ৩য় ইউনিট চালু ছিল। এভাবে কিছুদিন যদি তাপ বিদ্যুৎ চালু রাখা সম্ভব হতো তাহলে নতুন ফেজের কয়লা উত্তোলন হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যেতো। আর ইতিহাসের বৃহৎ এই দুর্নীতির বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যেত!
এমডিসহ ৪ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
জালিয়াতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা খোলাবাজারে বিক্রি করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) শীর্ষ চার কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে পাঠানো পৃথক চিঠিতে ওই চার কর্মকর্তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ করা হয়েছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কর্মকর্তারা হলেন- বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির এমডি হাবিব উদ্দিন আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম, খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও ডিজিএম (ভান্ডার) এ কে এম খালেদুল ইসলাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।