Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দলিত রাঁধুনির খাবার রান্না নিয়ে তুলকালাম

তামিলনাড়ুর স্কুল

টাইমস অব ইন্ডিয়া | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:১৯ এএম, ২১ জুলাই, ২০১৮

ভারতের তামিলনাড়ৃতে একটি সরকারী স্কুলে দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত এক রাঁধুনির স্কুলের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার রান্নাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। স্কুলের অ-দলিত শিক্ষার্থীদের বাবা-মারা দলিত রাঁধুনির খাবার রান্নার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে স্কুলের কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন। ফলে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। কিন্তু দলিতদের পাল্টা প্রতিবাদের মুখে ঐ দলিত নারীকে স্কুলে পুনর্বহাল করা হয়েছে। অবিনাশি তালুকের থিরুমালাইগুন্ডেনপালায়ামের অরুনথাথিয়ার গোষ্ঠির ঐ রাঁধুনি (নাম প্রকাশ করা হয়নি) ২০০৬ সালে দুপুরের খাবার কর্মসূচির চাকুরিতে যোগদান করেন। ৩০ জুন ১৯ জন দুপুরের খাবার তৈরির রাঁধুনি চাকুরি থেকে অবসর নেয়ায় রাজস্ব বিভাগ ঐ রাঁধুনিসহ বহু রাঁধুনিকে বদলির আদেশ দেয়।
রাঁধুনি বলেন, আমার অনুরোধে কর্তৃপক্ষ আমার নিজের গ্রামের দু’টি স্কুলের একটিতে বদলি করতে রাজি হয়। কর্তৃপক্ষগত সপ্তাহে মৌখিক নির্দেশ দেয় যে আমি থিরুমালাইগুন্ডেনপালায়ামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ করতে পারি। আমি সেখানে যাই। কিন্তু গুন্ডেররা আমাকে ঐ স্কুলে কাজ না করার জন্য হুমকি দেয়। তাই আমি কাজে যোগ দেইনি।
১৬ জুলাই কর্তৃপক্ষ আমার অনুরোধে গ্রামের হাইস্কুলে কাজ করার জন্য আমাকে অস্থায়ী বদলির আদেশ দেয়। আমি পরদিন কাজে যোগ দিলে গুন্ডের গোষ্ঠির বহু লোক আমাকে দুপুরের খাবার রান্না করতে দেয়নি।
৭৫ জন শিক্ষার্থী সম্বলিত ঐ স্কুলের হেডমিস্ট্রেস এম শশিকলা বলেন, স্কুলের ২৯ জন শিক্ষার্থীর মা-বাবাসহ অনেক লোক তার অন্যত্র বদলির দাবি জানান। তারা আমাকে বলেন, তাদের সন্তানরা তার রান্না খাবার খাবে, এ জন্য তারা অস্বস্তি বোধ করছেন। তারা আমার কাছে তাদের সন্তানদের ছুটি চান। তারা আমার অনুরোধে ছুটির দরখাস্ত দিয়ে তাদের সন্তানদের বাড়ি নিয়ে যান।
বৃহস্পতিবার সকালে সেই একই লোকেরা আমাদের স্কুল খুলতে বাধা দেন এবং ঐ রাঁধুনিকে কাজ না করতে দেয়ার জন্য বলেন। তাই আমরা বিষয়টি অবিনাশি ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বিডিও) ভি মিনাক্ষীকে অবহিত করি।
বিডিও বলেন, পিতামাতাদের আপত্তির প্রেক্ষিতে আমি ১৮ জুলাই থিরুমালাইগুন্ডেনপালায়াম সরকারী হাইস্কুলে কাজ করার তার ডেপুটেশন আদেশ বাতিল করি ও ওচামপালায়াম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করি যেখানে সে আগে কাজ করত।
কিন্তু ১৯ জুলাই দলিতরা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ অবস্থায় তিরুপুরের সাব কালেক্টর শ্রাবন কুমার হস্তক্ষেপ করেন এবং ঐ দলিত রাঁধুনিকে ঐ স্কুলেই কাজ করার নির্দেশ দেন। তাকে কাজ করতে বাধা দেয়ার জন্য গুন্ডের গোষ্ঠির ৭৫ জন পুরুষ ও নারীর বিরুদ্ধে এফআইআর নিবন্ধন করা হয়েছে।
ঐ রাঁধুনির স্বামী টি সি পালানিসামি বলেন, গুন্ডেরসদের দ্বারা তার হয়রানির ঘটনা এই প্রথম নয়। ২০০৬ সালে সে যখন কাজে যোগ দেয় তখন তাকে কানধাইপালায়াম, ভাইয়াপুরিগুন্ডেনপুদুর ও আমাদের গ্রাম থিরুমালাইগুন্ডেনপালায়াম-এও কাজ করতে দেয়া হয়নি যেহেতু সে অরুণথাথিয়ার গোষ্ঠির মহিলা। তাদের গ্রামে গুন্ডের পরিবারের সংখ্যা ৩২০, আর অরুণথাথিয়ার পরিবারের সংখ্যা ৭০। তাদের গ্রামে এ জাতিভেদ ভিত্তিক নিপীড়ন সাধারণ ব্যাপার।
রাঁধুনি জানান, আমি ওচামপালায়াম স্কুলে যোগ দেই। সেখানে কোনো বাধা আসেনি। আমাকে রোজ ১৬ কি মি পথ যেতে হত, ব্যয় হত ৩০ রুপি। আমার বেতন সাড়ে ৬ হাজার রুপির একটা বড় অংশ খরচ হয়ে যেত। আমি আমার গ্রামে বদলি হতে চাইছিলাম। কিন্তু আমি বর্ণভেদ প্রথার শিকার হই। উল্লেখ্য, রাঁধুনির সন্তানও ঐ স্কুলে পড়ে।
যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে গুন্ডের গোষ্ঠির এক সদস্য বলেন, আমরা শুধু স্কুলে ঐ রাঁধুনির রান্নার বিরুদ্ধে। আমরা দলিত সম্প্রদায়ের একজনকেও মেনে নিতে রাজি যদি সে অন্য স্থানের হয়।
ইতিমধ্যে তফসিলি জাতি বিষয়ক জাতীয় কমিশন তিরুপুর কালেক্টর ও পুলিশ সুপারকে ঐ রাঁধুনির নিপীড়নের সম্মুখীন হওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য তলব করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ