Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রোহিঙ্গাশূন্য রাখাইনে বিশ্ববিদ্যালয়

‘এক সপ্তাহ আগেই রোহিঙ্গাদের ছুরি-চাকু কেড়ে নিয়ে নিরস্ত্র করা হয়’

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:১৭ এএম, ২১ জুলাই, ২০১৮

 মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক বিধ্বস্ত রাখাইনে বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পরিকল্পনা করেছে প্রদেশটির সরকার। স্থানীয় জনগণের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন নি পু’র নেতৃত্বে রাখাইনে দেশটির ইউনিভার্সিটি অব ডিসটেন্স এডুকেশনের একটি শাখা চালু করা হচ্ছে বলে দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য ইরাবতি খবর দিয়েছে। খবরে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য বুধবার পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন; যাদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর। ২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকানিদের সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার পর সংখ্যালঘু এই মুসলিমদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে চলতি বছরের শেষের দিকে রাখাইনে ইউনিভার্সিটি অব ডিসটেন্স এডুকেশনের শাখা চালুর সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর আরোপিত এই শিক্ষা নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে বলে প্রদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মংডু শহরের শিক্ষা বিভাগের প্রধান ইউ খিন অং বলেন, রাখাইনের এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি বিষয় মিয়ানমার লিটারেচার এবং ইতিহাসে ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি দেয়া হবে। ইংরেজি এবং বিজ্ঞানে ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ নেই। গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) বিরুদ্ধে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। রাখাইন সীমান্তে এক ডজনের বেশি পুলিশি নিরাপত্তা তল্লাশি চৌকিতে আরসার হামলায় হতাহতের ঘটনার পর অভিযান শুরু হয়। অভিযানে এখন পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম রাখাইন ছেড়ে প্রতিবেশি দেশে পালিয়েছে। রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের গণ-পলায়ন ও তাদের বাড়ি-ঘর ধ্বংসের ঘটনায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। চলতি বছরের শুরুর দিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল রাখাইন সফর শেষে এই অভিযোগ আনে। দ্য ইরাবতি বলছে, গত বছরের ওই সহিংসতা শুরুর পর রাখাইনে বাণিজ্য, শিক্ষা ও পর্যটন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ওই অঞ্চলে বন্ধ হয়ে যাওয়া মৌলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আবারো খুলে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে মানবাধিকার সংগঠন ফরটিফাই রাইটস জানিয়েছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পক্ষে লড়াই করা সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এর হামলার আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কাঠামোবদ্ধ ও পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। দুই শতাধিক রোহিঙ্গা, ত্রাণকর্মী ও সেনাকর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তারা জানায়, অভিযানের এক সপ্তাহে আগেই রোহিঙ্গাদের বাড়ি থেকে ছুরি-চাকু কেড়ে নিয়ে নিরস্ত্র করে দেওয়া হয়েছিলো তাদের। অন্যান্য স্থানীয়দের ‘পুলিশ’ বানানোর নাম করে তুলে দেওয়া হয়ে তরবারি। দেওয়া হয় প্রশিক্ষণও। নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর গত বছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরোলো করে মিয়ানমার। নিপীড়নের মুখে পালিয়ে যায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা। পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন জাতিগোষ্ঠীর পরিচয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের বয়ানে উঠে আসতে থাকে রাখাইনে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংসতার চিত্র। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছে। একে নিধনযজ্ঞ বলেছে যুক্তরাষ্ট্রও। ফরটিফাই রাইটসের করা ওই ১৬২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়ে ‘দে গেভ দেম লং সোর্ডস।’ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। টাইম, ইরাবতি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাখাইন

১৮ অক্টোবর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ