চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
তিন
আর বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে ছোট আয়তনের একটি দেশ হয়েও প্রাণবৈচিত্র্য এবং ভিন্ন রকম প্রতিবেশ ও জটিল বাস্তুসংস্থানে ভরপুর এক অনন্য পরিসর। কিন্তু দিন দিন দেশের এই বৈচিত্র্যময় প্রাণ ও পরিসর নিশ্চিহ্ন হয়ে এক সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি করছে।
পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে পাহাড়ের ভূমিকা: আল্লাহপাক পৃথিবীতে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য পাহাড়কে সৃষ্টি করেছেন। সমগ্র সৃষ্টিজগতের কল্যাণের জন্য আল্লাহপাক পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছেন। ভূমিকম্প, ভূমিধস কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যাতে মানুষকে নিয়ে এ পৃথিবীর নড়াচড়া করতে না পারে অথবা সে জন্য আল্লাহপাক পাহাড়সমূহকে পেরেকের মত গেড়ে দিয়েছেন বলে এরশাদ করেছেন। “এবং তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয়।” (সূরা আন নহল : ১৫) অন্যত্র বলা হয়েছে, “তিনিই স্থাপন করেছেন ভূপৃষ্ঠে অটল পর্বতমালা এবং তাতে রেখেছেন প্রভূত কল্যাণ।” (সূরা হা-মীম-আস্ সাজদা : ১০) অন্য আয়াতে আছে, “আর পাহাড়গুলোকে পেরেকের মত গেড়ে দিয়েছি।” (সূরা নাবা : ৭) আরো এরশাদ হয়েছে, “আর পাহাড়কে শক্ত করে দাঁড় করানো হয়েছে।” (সূরা গাশিয়া : ১৯) প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত পরিবেশ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের উপর অনেক বড় নেয়ামত ও অনুগ্রহ। অথচ কিছু অসৎলোক পাহাড় কেটে, নদীনালা ভরাট করে, গাছপালা উজাড় করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিনাশ সাধন করছে। আল্লাহ বলেন, তোমরা আমার সৃষ্টির মাঝে কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন করো না। সত্যি কথা বলতে, দুনিয়াজুড়ে আজ যে জ্বরা, রোগ-শোক, বন্যা, ঝড়-তুফান ও সুনামির মতো বিপর্যয় ও ভয়ানক অশান্তিকর ঘটনাগুলো ঘটছে, তা আমাদের নিজেদেরই কৃতকর্মের ফসল। মহান আল্লাহপাক বলেন, ‘জলে-স্থলে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তা মানুষের কৃতকর্মের ফসল। (সূরা রুম : ৪১) মহান সৃষ্টিকর্তা পাহাড় সম্পর্কে এসব বর্ণনার মাধ্যমে পাহাড়ের গুরুত্ব নিশ্চিত করেছেন। অথচ আমরা মানুষ আমাদের দায়িত্ব ভুলে সাময়িক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে পাহাড় কেটে পরিবেশের ক্ষতি সাধন করছি।
নিজের আশে পাশে পরিষ্কার রাখতে ইসলামের নির্দেশনা: সুন্দর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক পরিবেশ গঠনে খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য। মানুষের প্রতি নবী স. বলেছেন, ঈমানের ৭৩টি শাখা, তন্মধ্যে সর্বোত্তমটি হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আর সর্বনিম্নটি হলো, রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক বস্তু দূরীভূত করা।
ইসলামে রুচিশীল পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতার কদর রয়েছে। রুচিশীলতা ও সৌন্দর্য ইসলামের সহজাত ও প্রকৃতিগত বিষয়। ঘরবাড়ি, দরজা-জানালা, বিদ্যালয়, রাস্তাঘাট, শ্রেণীকক্ষ, বাড়ির আঙিনা এসব অপরিষ্কার থাকলে মানুষের জীবন খুবই দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে এগুলো সুন্দর, পরিচ্ছন্ন থাকলে কাজ করতে, চলতে-ফিরতে মনে সাচ্ছন্দ্যবোধ আসে এবং কাজ করে আনন্দ পাওয়া যায়। নামাজসহ বিভিন্ন শারীরিক ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য দেহ ও পোশাকের মতো পরিবেশও পবিত্র থাকা অন্যতম শর্ত। অবাধে শিল্পকারখানা নির্মাণ, ডাস্টবিন ও রাস্তার পাশের নোংরা আবর্জনার স্তূপ পরিবেশ দূষণ করছে। বায়ু ও পানি যেসব কারণে দূষিত হয়, সেগুলো প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টি হওয়া চাই।
পানি সংরক্ষণে রাসূল (স.)-এর নির্দেশনা : পানি মানুষ এবং জীব-জগতে বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় অবলম্বন। পানি ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। পানি দূষিত হলে মাটি, বায়ু ও খাদ্যও দূষিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে পৃথিবীর ৬০ ভাগ পানিই দূষিত। ফলে রোগ-শোক, জরা-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ ও পশু-পাখি। পানি দূষণের মূল কারণ হলো- নর্দমার ময়লা, কারখানার বর্জ্য পদার্থ, মানুষ ও পশু-পাখির মলমূত্র, কীটনাশকের মিশ্রণ প্রভৃতি। তাই আজ বিশ্বব্যাপী এ পানিকে বিশুদ্ধ রাখার জন্য জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। সুপেয় পানির অভাব এখন মানুষকে রীতিমত উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা ধারণা করছে, চলমান শতাব্দীতে দুনিয়ায় যদি বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহ হয় তাহলে তা হবে বিশুদ্ধ পানির জন্য লড়াই। ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত “রাসূল (সা.) একদা সাদ ইবনে আবি ওয়াক্বাস (রা.) এর পাশদিয়ে গমন করছিলেন এমতাবস্থায় যে সাদ (রা.) অযু করছিলেন, অতপর রাসূল (সা.) বলেন এ কী অপচয় ! অতপর সাদ (রা.) বলেন অযুর মধ্যেও কি অপচয় হয়? রাসূল (সা.) বলেন হ্যাঁ যদিও প্রবাহিত নদীর পানিতে অযু কর ।’’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৯ ও মুসনাদে আহমদ: ৬৭৬৮) পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে অপচয় রোধ করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে ব্যাপারে ইসলাম হাজার বছর পূর্বেই আলোকপাত করেছে, এ হাদীসটি তার উজ্জ্বল প্রমাণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।