বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
‘বিদায়’ বলা জীবনের কঠিনতম কাজগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু বাস্তবতাকে মেনে জীবনে অনেকবারই আমাদের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। কখনো প্রিয় মানুষকে, আবার কখনো প্রিয় স্থানকে বলতে হয় ‘গুডবাই’। ব্যাপারটা যে কষ্টের সেটা আবারো টের পেলাম বিশ্বকাপের শেষ মুহূর্তে এসে।
অনেকটা অল্প দেখাতেই প্রেমে পড়ার মত ব্যাপার। এতটুকু সময়েই প্রেমে পড়ে যেতে হলো রাশিয়ার। এখানকার মানুষ, নয়নাভিরাম সব জায়গা, সব সবকিছুই যেন অমোঘ এক বাধনে বেধে ফেলেছে। যা ছেড়ে যাওয়া কষ্টের। মস্কো ছেড়ে যাওয়ার কথা মনে হতেই তাই একবুক হাহাকার নিজেকে গ্রাস করল। সেটাকে আরো উস্কে দিল বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে সেচ্ছাসেবকদের বিশাল গ্লভসে লেখা ‘গুডবাই লুজনিকি’ সম্ভাষণে।
সেন্ট পিটার্সবার্গ, কালিনিনগ্রাদ, মস্কো, লুজনিকি,সামারা, সোচি, কাজান, নিজনি নভোগরোদ, রস্তভ-অন-ডন, ভলগোগ্রাদ, সারানাস্ক এবং একাতারিনবার্গ। বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর আয়োজক প্রতিটা শহরই কি সুন্দর, নয়নাভিরাম। চোখ ধাধানো সব সুযোগ সুবিধা, ঝকঝকে রাস্তা ঘাট, ট্রেন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, সবকিছুই ছিল অবাক করার মত। এখানকার পুলিশ বা জনগন ইংলিশ বোঝে না ঠিকই, কিন্তু আপনাকে সহযোগিতা করার, গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টায় কমতি নেই তারদের মধ্যে।
এখানকারা সেচ্ছাসেবকরাও ছিল অসাধারন। অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েগুলোর মুখে সবসময় হাসি লেগেই ছিল। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটা মানুষই স্ব স্ব অবস্থানে থেকে সহায়তা করেছেন বিশ্বকাপের আয়োজনকে সফল করতে। তার ফলও পেয়েছে রাশিয়া। যে কারণে বিশ্ববাসীও মেনে নিয়েছে যে, এযাবৎকালের সেরা বিশ্বকাপ আয়োজন ছিল এটিই।
ফাইনাল ম্যাচের পর লুজনিকি স্টেডিয়ামের বাইরে ফরাসিদের উদযাপনে বাড়াবাড়ি নজরে পড়ল না। আসলে ফরাসি সমর্থকদের উপস্থিতিই ছিল কম। এর প্রধাণ কারণ স্বাগতিক রাশিয়া তো বটেই অন্যান্য দেশের সমর্থকরাও ফাইনালে সমর্থন করেছে ক্রোয়েশিয়াকে। ম্যাচ শেষে বৃষ্টি হওয়াকে রাশিয়ানরা দেখছে আশির্বাদ হিসেবে। তাদের মতে, সফল বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে রাশিয়া। এজন্যই ম্যাচ শেষে সৃষ্টিকর্তা খুশি হয়ে বৃষ্টি বর্ষণ করেছে। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর থেকেই স্টেডিয়ামের বাইরে থেকে শুরু করে প্রতিটা ট্রেন-বাস স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা সেচ্ছাসেবকের হাতে ছিল ‘গুডবাই লুজনিকি’ লেখা বিশাল বড় গ্লাভস।
গতকাল থেকেই রাশিয়া ছাড়তে শুরু করেছে বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রায় ২৫ লক্ষ ফুটবল অনুরাগী। যে কারণে প্রতিটা ট্রেন স্টেশন থেকে শুরু করে বিমানবন্দরে প্রচুর ভীড়। এর আগে এত মানুষ এক সাথে আসেনি রাশিয়ায়। অধিকাংশেরই এটি ছিল প্রথম রাশিয়া ভ্রমণ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ সম্পর্কে এতদিন তাদের যে ধারণা ছিল তা পুরোপুরি পাল্টে গেছে এখানে এসে। এ বিষয়ে কথা হলো এক ইংলিশ সাংবাদিকের সঙ্গে। নাম টনি। বয়স কতই বা, আনুমানিক ৪৫ হবে। জানালেন রাশিয়া সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার কথা, ‘এবারই প্রথম রাশিয়া এসেছি আমি। দেশটি সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল নেতিবাচক। কিন্তু এখানে এসে আমার সেই ধারণা পাল্টে গেছে। সত্যিই আমি এখানে এসে অবিভূত হয়েছি। অনেক ক্ষেত্রেই রাশিয়া ইউরোপের অন্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে।’
টনির মত একই অভিমত অন্যদেরও। আসলে এই রাশিয়া এমন যা চর্মচক্ষে না দেখলে অবিশ্বাস্যই মনে হবে। বিশ্বকাপের আবেশ নিয়ে দেশে ফিরলেও রাশিয়ার প্রতি যে প্রেমের আবহ তৈরি হয়েছে তা সত্যিই আমোচনীয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।