Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুশি মার্টিনেজ, সাউথগেটও

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৮, ১১:০১ পিএম

পাড় ফুটবল ভক্তদেরও এই ম্যাচ নিয়ে তেমন আগ্রহ থাকে না। বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচটা এমন যা খেলতে চায় না কোন দলও। কিন্তু সেমিফাইনালের নির্মম ভাগ্য দুটি দলকে অনাকাঙ্খিত এই ম্যাচের সামনে দাড় করায়। ফাইনালের উত্তাপের আড়ালে থাকা সেই ম্যাচে দারুণ ফুটবল উপহার দিয়েছেন হ্যাজার্ড-ডি ব্রæইনারা। ইংল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপের ব্রোঞ্জ অর্জন করেছে বেলজিয়াম। বিজয়ী দলের হয়ে দুই অর্ধে একটি করে গোল করেন থমাস মুনিয়ের ও এডেন হ্যাজার্ড। বিশ্বকাপে এটিই বেলজিয়ামের সর্বোচ্চ অর্জন।
১৯৮৬ বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল বেলজিয়ামকে। ডি ব্রæইনা-হ্যাজার্ড-লুকাকুদের নিয়ে গড়া সোনালী প্রজন্মের হাত ধরে আসল বিশ্বকাপের সেরা অর্জন। আসর জুড়ে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দেওয়া বেলজিয়ামের এটি প্রাপ্য বলে মনে করেন দলটিক কোচ রবার্তো মার্টিনেজ, ‘আমরা প্রকৃত লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম এবং এটাই তাই যা খেলোয়াড়দের প্রাপ্য ছিল।’ স্বপ্নে না ভেসে বাস্তবতাকে মেনে নিচ্ছেন ৪৫ বছর বয়সী, ‘আমরা ট্রফিই জিততে চেয়েছিলাম। বিশেষ করে ব্রাজিলকে হারিয়ে যখন আমরা সেমিফাইনালে উঠলাম, তখন থেকে নজর ছিল বিশ্বকাপ জয়ের দিকে। কিন্তু আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। পিছনে ফিরে তাকালে দেখবেন এই ছেলেরা বেলজিয়ামের হয়ে ইতিহাস রচনা করেছে।’ ‘তৃতীয় স্থান লাভ করতে পেরেই আমি খুশি। তিন দিন আগে ফ্রান্সের কাছে পরাজয়ের হতাশার পর এই ম্যাচটি ছিল কঠিন।’
অর্ধশতাব্দী পর ইংলিশদের সামনেও ছিল একই সুযোগ। ঘরের মাঠে ১৯৬৬ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ১৯৯০ বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ইতালির কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় ইংল্যান্ড। কেইন-আলি-লিঙ্গার্ডদের সামনে সুযোগ ছিল ৫২ বছরের সেরা অর্জনকে ছিনিয়ে নেয়ার। কিন্তু সেন্ট পিটার্সবার্গে রেড ডেভিলদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি গ্যারেথ সাউথগেটের দল। চতুর্থ স্থান নিয়েই তাই সন্তুষ্ট থাকতে হলো ইংলিশদের। গ্রæপ পর্বেও মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম। সেবার ইংলিশদের ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হয় রবার্তো মার্টিনেজের দল।
ইংলিশ কোচ অবশ্য এতেই খুশি, ‘আমরা যে পর্যায়ের সে সম্পর্কে আমরা অবগত। ইতোমধ্যে আমরা অনেক পুরস্কার পেয়েছি যা ভালো ছিল, বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে ভালোই বলতে হবে। আমরা নিজেদের ছোট করছি না। আমরা আমাদের স্বপ্নের পরিধি সম্পর্কে জানি। আমরা ক্লাব ফুটবলে নেই যে চেকের বই হাতে নিয়ে নতুন খেলোয়াড় কিনে নেব। আমাদের শেখাটা অব্যহত রাখতে হবে ও উন্নতি করতে হবে।’ ৪৭ বছর বয়সী বলেন, ‘সেমিফাইনালে পৌঁছাতে পারাটা ছিল দারুণ, এটা দলকে বিশ্বাস ও প্রেরণাদায়ি ছিল।’ ‘ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে উন্নতির অনেক জায়গা রয়েছে। তবে এটা দারণি একটা অভিজ্ঞতা ছিল, আমরা এটা মনে রাখব ও এ থেকে শিখব।’
সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে গতকাল প্রথমার্ধে খুঁজেই পাওয়া যায়নি ইংলিশদের। পক্ষান্তরে শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণে ইংলিশ রক্ষণকে তটস্থ করে রাখে বেলজিয়াম। তেমনি এক আক্রমণে পাঁচজনের পা ঘুরে ওয়েস্ট ব্রæম মিডফিল্ডার নাচের ক্যাডলির ক্রস খুব কাছ থেকে জালে পাঠিয়ে দলকে এগিয়ে নেন মুনিয়ের। আসরে বেলজিয়ামের দশম খেলোয়াড় হিসেবে গোল করলেন মুনিয়ের। বিশ্বকাপের এক আসরে যা সর্বেঅচ্চ গোলের রেকর্ড। সমসংখ্যক গোল করে এই রেকর্ডের অংশিদার ফ্রান্স (১৯৮২) ও ইতালি (২০০৬)। ৩ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের মাথায় করা গোলটি বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের দ্রæততমও। ইনজুরির কারণে সেমিফাইনালে ফ্রান্স ম্যাচে ছিলেন না পিএসজি ডিফেন্ডার। ডি বক্সে লুকাকু-হ্যাজার্ডরা আরেকটু নিখুঁত হলে প্রথমার্ধেই ব্যবধানটা আরো বাড়াতে পারত।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলার গতি বাড়িয়েও জাল আবিষ্কার করতে পারেনি ইংল্যান্ড। সবচেয়ে সহজ সুযোগ আসে ম্যাচের ৬৯তম মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে রাশফোর্ডের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে দ্রæতবেগে ডি বক্সে ঢোকেন এরিক দিয়ের। গোলরক্ষক কোর্তোয়র হাতের সামনে থেকে চিপ শটে জালের দিকে বলও ঠেলে দিয়েছিলেন দিয়ের। কিন্তু গোল লাইনের খুব কাছ থেকে বল ক্লিয়ার করে দলকে বিপদমুক্ত করেন বেলজিয়ামের টটেনহ্যাম ডিফেন্ডার টবি আল্ডারওয়ার্ল্ড।
বাকি সময়টা কাটে আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে। ৮০তম মিনিটে দুর্দান্তভাবে ডি ব্রæইনাকে বঞ্চিত করেন ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড কিন্তু দুই মিনিট পর হ্যাজার্ডকে আর আটকাতে পারেননি। ডি ব্রæইনার পাস ধরে পোস্টের কাছ থেকে দলের জয় নিশ্চিত করেন চেলসি মিডফিল্ডার।
দু’দলের লড়াইয়ের আড়ালে ছিল সর্বোচ্চ গোলের প্রতিযোগিতাও। যে দৌড়ে এগিয়ে থেকেই ম্যাচ শেষ করেন কেইন। ৬ গোল ইংলিশ স্ট্রাইকারের, দুটি কম লুকাকুর। পুরষ্কারটা উঠতে পারত লুকাকুর হাতেও কিন্তু গোলের অনেকগুলো সুযোগ এদিন হাতছাড়া করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড স্ট্রাইকার। ফাইনালে এমবাপে-গ্রিজম্যানরা (উভয়ের গোল ৩টি করে) অতি দানবীয় কিছু না করলে গোল্ডেন বুট তাই কেইনের হাতেই উঠছে বলা যায়। প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে অংশ নিতে এসেই সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পথে কেইন। ইংলিশদের হয়ে এই রেকর্ড আছে কেবল একজনের। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে এই কীর্তি গড়েছিলেন গ্যারি লিনেকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বকাপ

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ