পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভরা বর্ষাকাল। অথচ এখন দেশজুড়ে চলছে খরার দহন। বৈশাখ জ্যৈষ্ঠের মতোই কড়া রোদের তেজে অসহনীয় ভ্যাপসা গরম। আকাশতলে শীতল মেঘের বিচরণ নেই। আছে সাদা মেঘ আর হঠাৎ ছিঁটেফোঁটা বৃষ্টির লুকোচুরি। দুই সপ্তাহেরও বেশিদিন ধরে দেশে নেই ন্যুনতম স্বাভাবিক হারে বৃষ্টিপাত। গত সপ্তাহ পর্যন্ত ভারতে অতিবর্ষণে উজানের ঢলে উত্তর জনপদ ও সিলেটের নদ-নদীগুলো বিপদসীমা অতিক্রম করে। আষাঢ় পার হয়ে শ্রাবণ মাসের শুরু আগামীকাল। সামনের আরও কয়েকদিন শ্রাবণের আকাশভাঙা মুষলধারে বর্ষণের সম্ভাবনা দেখছে না আবহাওয়া বিভাগ।
বর্ষার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে বৃষ্টিহীন বিশুষ্ক আবহাওয়ায় গরমের দাপট বাড়িয়ে তুলছে। তাপমাত্রার পারদ ওঠে গেছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও ওপরে। ষড়ঋতুর রূপ বৈশিষ্ট্য বদলে যাচ্ছে ক্রমেই। বছরজুড়ে অনাবৃষ্টিতে মরুময়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশের উত্তর জনপদ তথা রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ। পাহাড়ি অঞ্চলে বেড়েছে অতিবৃষ্টি ও ভূমিধসের প্রকোপ। ঢাকার তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতে ব্যাপক হেরফের ঘটছে। গত জুন মাসে দেশে গড় বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেশী হলেও অঞ্চলওয়ারি হিসাবে ঢাকা বিভাগে ২৫.৫ ও রাজশাহী বিভাগে ৩৭.৩ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টি ঝরে ২৮.২ শতাংশ বেশী। আবহাওয়া-জলবায়ুর এহেন ওলট-পালট এবং বিপরীতমুখী আচরণে বাড়ছে দুর্যোগ। সেই সাথে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগও।
আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকগণ বাংলাদেশের আবহাওয়া প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে মর্মে সা¤প্রতিক এক গবেষণায় সতর্ক করেছেন। তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান গতিতে চলতে থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের বিরাট অংশই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানেও একই পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটবে। এমআইটির গবেষক দলনেতা অধ্যাপক এলফাতিহ এলতাহির বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা ব্যাপক সংখ্যক মানুষের ওপর প্রভাব পড়ছে।
পরিবর্তন যে ধারায় চলছে তা অব্যাহত থাকলে মারাত্মক তাপদাহ পরিস্থিতি সৃষ্টির ঝুঁকি থাকবে। ভবিষ্যতে সর্বাপেক্ষা মারাত্মক ঝুঁকি হচ্ছে, তাপদাহ ঘনীভূত হতে থাকায় গঙ্গা-পদ্মা ও সিন্ধু নদ-নদী অববাহিকায় অবস্থিত ঘনবসতিপূর্ণ কৃষিপ্রধান অঞ্চলগুলোতে ১৫০ কোটি অধিবাসী ঝুঁকিতে পড়বেন। তাদের নিজেদের অঞ্চলে বসবাস অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে তাপদাহ ও বাতাসের উচ্চ আর্দ্রতার মারাত্মক মিশ্রণে ক্রমেই অরক্ষিত হয়ে উঠছে মানুষের জীবনধারণ। ফল-ফসল, কৃষি-খামারে আবাদ ও উৎপাদনে এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। কৃষিজ উৎপাদন ব্যাহত এবং উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
খরতাপে যেন মরুর আগুনের হলকা বয়ে যায়। অসহনীয় গরমকাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। অথচ শীতকালের দেখা মিলছে অল্প কিছুদিন। শরৎ, হেমন্ত ও বসন্ত ঋতু অতীতের মতো তেমন আর অনুভূতি জাগায় না। আলাদা করে চেনাও যায়না।
বছরের দীর্ঘ সময়ই আবহাওয়ায় গুমোট ভাব বিরাজ করছে। নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মারাত্মক ভাঙনে বিলীন হচ্ছে সমুদ্র উপকূলভাগ ও নদ-নদীর বিস্তীর্ণ অববাহিকা। বৈরী জলবায়ুর শিকার গৃহস্থ অসংখ্য মানুষ হারাচ্ছে মাথাগোঁজার ঠাঁই, চাষবাসের জমি। যাদের বলা হয় ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু’। ‘মোরা’ ‘সিডর’ ‘নার্গিস’ ‘আইলা’, ‘কোমেন’র মতো ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস, টর্নেডো, বজ্রপাত-বজ্রঝড় ও ভূমিধসের প্রকোপ বাড়ছে। দেশের ২১টি সমুদ্র উপকূলীয় জেলায় কমপক্ষে ২ কোটি বাসিন্দা বসবাসের আশ্রয় ও চাষের ভূমি হারিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে অগণিত মানুষ উপকূলে আশ্রয় হারিয়ে শহর-নগরে ঠাই নিয়েছে।
জলবায়ুর ওলট-পালটে পানিতে আর্সেনিক ও লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি আর্দ্র ও উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে মৌসুমী ভাইরাসজনিত রোগ-ব্যাধি যেমন- সর্দিকাশি, প্রদাহজনিত জ্বর, বাতজ্বর, ফ্লু, পেটের পীড়া, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া ও বিভিন্ন ট্রপিক্যাল রোগ-ব্যাধি। মানুষের রোগ-বালাই প্রতিরোধক ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। গাছপালা, জীববৈচিত্র্য, প্রাণিকুল হারিয়ে ফেলছে বেঁচে থাকার অবলম্বন।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় বলা হয়, সমগ্র বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে চলতি শতকের মধ্যে দেশের তাপমাত্রা গড়ে দেড় থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বিসিএএস-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে ব্যাপক তারতম্য বা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত ৩০ বছরে চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টিপাত ক্রমেই বেড়ে গেছে। আবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের হার স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে এসেছে। সেখানে শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিপাতের হার স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক নিচে। এতে করে পানি ও মাটিতে লবণাক্ততার মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং লোনার আগ্রাসন হচ্ছে আরও বিস্তৃত। কমে আসছে বোরো-আমনসহ ফসল আবাদ ও উৎপাদন। জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। যা জনজীবনে নানামুখী প্রভাব-প্রতিক্রিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।