Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুলানি সাম্রাজ্যের প্রতিরক্ষা ব্যূহ কানো প্রাচীর

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের প্রাচীন শহর কানো। তৎকালীন ফুলানি সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা এ শহরটি সেসময় সমগ্র নাইজেরিয়ার মধ্যে বেশ সমৃদ্ধ ছিল। ফলে মানুষের সমাগম এখানে লেগেই থাকতো। বর্তমানেও যে এর জৌলুস খুব কমে গেছে, তেমনটি নয়, কারণ উত্তর আফ্রিকার মধ্যে এখনো এ শহরটি জনসংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয়। কিন্তু এখানে ব্রিটিশরা পা ফেলার আগে থেকে হাজার বছর ধরে একটা জিনিস এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তবে বর্তমানে এটা তেমন সবল নয়, বেশ জীর্ণ; ভালো করে বললে নিশ্চিহ্নের পথে। যেটা আফ্রিকা বিশেষ করে নাইজেরিয়ার ইতিহাসের অন্যতম অংশ। যার নাম কানো প্রতিরক্ষা প্রাচীর। ২৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ প্রতিরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। এ প্রাচীরের উচ্চতা ৩.৫ মিটার এবং এর প্রস্থ ১.৫ মিটার। সমগ্র এলাকা ঘিরে রাখা এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বাইরে আসা যাওয়ার জন্য মোট ১৩টি প্রবেশ পথ ছিল। যেখানে সবসময় পাহারায় থাকতো স্বশস্ত্র বাহিনীও। মূলত কানো জনগোষ্ঠীকে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচাতে এ প্রতিরক্ষা বুহ্য নির্মাণ করা হয়। পশ্চিম আফ্রিকার সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক এ স্তম্ভটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১০৯৫ সাল থেকে ১১৩৪ সালের দিকে। কানো রাজবংশের তৃতীয় রাজা সার্কি গিজিমাসু এ প্রতিরক্ষা প্রাচীরের নির্মাণ শুরু করেন। তবে তিনি এর কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। ১৪ শতকের মাঝামাঝিতে এর অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন রাজা জামনাগাওয়া। তবে এ প্রচীরের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ১৬ শতকের দিকে এটা আরো স¤প্রসারণ করা হয়। তৎকালীন সময়ে এখানে প্রায় ৫০,০০০ হাজার মানুষ বসবাস করত। আফ্রিকায় একসময় এটা ইসলাম শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। ব্যবসাবাণিজ্যেরও দিক থেকেও ছিল উত্তর আফ্রিকার মূলাধার। মরুভূমি থাকলেও এখানে সেসময় পানির পর্যাপ্ত যোগান ছিল, একইসঙ্গে উন্নত লোহাও ছিল প্রচুর। এ সবকিছুর আয়োজন ছিল কেবল এখানকার জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে রাখা। তবে কানো জনগোষ্ঠীর জন্য সেসময় এখন কেবলই স্মৃতি। চীনের মহাপ্রাচীরের চেয়ে কোনো অংশেই কম ছিল না এ কানো প্রাচীর। তবে এটা কোনো কংক্রিট দিয়ে নির্মাণ করা হয়নি। এটা কেবল বাদামী রংয়ের কাদা দিয়ে নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে এটা কোনো কার্পণ্য করেনি। তবে শঙ্কার কথা হল, হাজার বছরের পুরনো এ কানো প্রাচীর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, প্রকৃতিক দুর্যোগ আর অবহেলার কারণে আজ নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে। বার্লিন প্রাচীরের মত কেবল স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে আকড়ে ধরে আছে এ প্রাচীরের কিছু প্রবেশ পথ। আর বাকি প্রাচীরের ধ্বংসাবেশেষ। কানো গোষ্ঠীর ৩৪ বছর বয়সী যুবক আব্বাস ইউসাউ। তিনি এ প্রাচীর রক্ষার জন্য নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত তার মত অন্যান্য যুবকদের নিয়ে মানুষকে এ প্রাচীর ধ্বংস না করা কিংবা রক্ষার জন্য সচেতনও করে আসছেন। তিনি বলেন, এ প্রাচীর আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের নিরাপত্তার জন্যই এটা এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। যখন মানুষ কানোর কথা চিন্তা করে তখন তাদের মনে এই প্রাচীরের কথাও চলে আসে। এটা আমাদের প্রতীক। আমাদের ঐতিহাসিক এ কীর্তি রক্ষা করা প্রয়োজন। আমরা এটাকে ধ্বংস করা কিংবা ধ্বংসাবশেষ হতে দিতে পারি না। ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রতিরক্ষা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ