বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
১২ জুলাইয়ের সকালটা ক্রোয়েশিয়ানদের জন্যে আর দশটা সকালের মত ছিল না। আগের রাতটা তাদের কেটেছে উৎসব আর উদ্দীপনার দোলাচলে। এ এমন এক রাত যা আগে কখনো তাদের জীবনে আসেনি। লাল-সাদা রঙের ফোয়ারায় ভিজেছে পুরো দেশ। নাচে-গানে মাতাল হয়েছে চার মিলিয়নের ক্রোয়েশিয়াবাসী। এই আনন্দ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মত ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নেয়ার।
ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই রাজধানী জাগরেবের প্রধান স্কয়ারে ঘটে ১০ সহ¯্রধীক মানুষের সমাগম। বাদলের বিষন্ন ধারাও তাদের ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। বিশাল স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে দেশের নায়কদের। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। কোন শক্তি আছে তাদের ঘরে আটকে রাখার। প্রায় দুই হাজার মাইল দুর থেকে মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে মড্রিচ-রাকিটিচদের সঙ্গে ব্যান্ডের তালে জাতীয়সংগীতে গলা মিলিয়েছেন ভক্ত-সমর্থকরা। গায়ে লাল-সাদা চেক পোষাক, হাতে মাতৃভূমির পতাকা। লাল-সাদা রঙের তুলির আচড় পড়েছে শরীরেও। উৎসবকে পূর্ণতায় রূপ দিতে আয়োজনের কোন কমতি রাখা হয়নি।
শুধু সেন্ট্রাল স্কয়ার নয়, কফি হাউস, বার, রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে সবখানেই টিভির সামনে ভীড়। কিন্তু ম্যাচ শুরু না হতেই পুরো ক্রোয়েশিয়া জুড়েই যেন নেমে আসে শুনশান নীরবতা। এই নীরবতার কারণ ইংলিশ ডিফেন্ডার কিরান ট্রিপিয়ারের ফ্রি কিক। যে স্পটকিকে পিছিয়ে পড়ে ক্রোয়েশিয়া। নীরবতা ভাঙে দ্বিতীয়ার্ধে ইভান পারিসিচের কল্যাণে। আর তা বাধনহারা উল্লাসে রূপ নেয় মারিও মানজুকিচের অতিরিক্ত সময়ের গোলে। মুহূর্তেই সেই উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশজুড়ে।
জাগরেবের রাস্তা-ঘাটে প্রতিটা যানবাহনেই পতপত পরছে দেশের পতাকা, দম ফেলার সময় মিলছিল না গাড়ির হর্নের। শহরময় নাচা-গানা উৎসব। নক আউট পর্বের তিন ম্যাচেই পিছিয়ে পড়ে তারপর জয়, যেমনটি আগে কখনো ঘটেনি বিশ্বকাপে। উৎসবের মাত্রাটা তাই একটু বেশি। দেশটির ৪১ বছর বয়সী ইভান কিচারিনেরও বিশ্বাস ছিল তার দল পারবে, ‘এমন আশাই আমরা করেছিলাম, কারণ আমাদের দলের উপর আমাদের বিশ্বাস আছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাইনালে যাওয়ার অনুভূতি অন্য কোন কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায় না।’
একই রাতে মস্কো শহরটাও যেন রূপ নেয় এক টুকরো জাগরেবে। সকাল থেকেই লুজনিকি স্টেডিয়াম চত্বর ছিল দুই দলের সমর্থকদের উৎসবে মুখর। দিন শেষে তা বজায় রাখতে পারে ক্রোয়েশিয়াই। ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামের বাইরে উচ্ছ¡াসিত ক্রোয়েশিয়ান সমর্থকরা। জার্মানিতে বাসকারী ক্রোয়েশিয়ান সিনিসা পাভাক নিজের উচ্ছ¡াস প্রকাশে করলেন এভাবে, ‘আমরা পরিকল্পনা করে ফেলেছিলাম চলে যাওয়ার, কিন্তু এখনে আমরা সোমবার পর্যন্ত থাকছি।’ রোববারের ফাইনালে যদি ক্রোয়েশিয়া ফ্রান্সকে হারিয়ে দেয় তাহলে? এমন প্রশ্নের জবাবে সিনিসার মেয়েবন্ধুর জবাব, ‘অবশ্যই আমরা তাদের হারাতে পারব।’
সিনিসাদের মত পাঁচ সহ¯্রাধিক ক্রোয়েশিয়ান দর্শক উপস্থিত ছিলেন লুজনিকি স্টেডিয়ামে। সঙ্গে স্বাগতিক রাশিয়ার সমর্থন পাওয়ায় তাদের উৎযাপন পায় নতুন মাত্রা। ম্যাচ শেষে তারা উল্লাস করেছে পুরো মস্কো শহর জুড়ে। তাদেরই একজন এরিক আমসালেম। ৪৮ বছর বয়সী মুখে এঁকেছেন ক্রোয়েশিয়ার পতাকা। দেশের এই ঐতিহাসিক দিনে উচ্ছ¡াসিত আমসালেম, ‘এটা ছোট্ট একটা দেশ। আপনারা দেখেছেন কি ঘটে গেছে। দীর্ঘ দিন পর এমন অনুভূতি পেলাম আমরা।’
এমন ঐতিহাসিক দিনে ক্রোয়েশিয়ানদের উদযাপনে একটু বাড়াবাড়ি থাকতেই পারে। কিন্তু উগ্র কিছু ইংলিশ সমর্থক তা মেনে নিতে পারেনি। স্টেডিয়ামের বাইরে ক্রোয়িশিয়ানদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। সঙ্গে সঙ্গে তা সামাল দেন দায়ীত্বরত রাশিয়ান পুলিশ। ১৫ জনের মত ইংলিশ সমর্থককে আটক করা হয়। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
১৯৯০ সালে যুগো¯েøাভিয়া থেকে জন্ম নেয় নতুন দেশ ক্রোয়েশিয়া। স্বাধীনতার গল্পটা তাদের জন্য সুখকর ছিল না। সার্বিয়ান মিলিটারিদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন বর্তমান দলের প্রাণভামেরা লুকা মড্রিচের দাদা। মারিও মানজুকিচের ছোটবেলা কেটেছে জার্মানিতে উদ্বাস্তু হিসেবে। নবীন দেশটির জীবনে প্রথম বড় উৎসবের সুযোগ আসে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে। প্রথমবারের মত বিশ্বমঞ্চে সুযোগ পেয়েই শেষ চারে জায়গা করে নিয়ে ফুটবল রোমান্টিকদের মন কেড়েছিল দলটি। ২০ বছর অপেক্ষার পর তাদের সামনে এসেছে আরো বড় উৎসবের ক্ষণ। কিন্তু এখানেই থামতে চান না মড্রিচ-রাকিটিচ-সুবাসিচরা। উৎসবকে পূর্ণতা দিতে দেশবাসিকে তারা উপহার দিতে চান আরো একটি নতুন সকাল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।