বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
ফ্রান্সের সাবেক তারকা ফুটবলার থিয়ের অঁরিই এখন দেশটির শত্রæ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। কারণ রাশিয়া বিশ্বকাপে অঁরি’র দেশ ফ্রান্স দাপটের সঙ্গে খেললেও তিনি নেই দলের ডাগআউটে বা কোন পরিকল্পনায়। অঁরি বর্তমানে বেলজিয়ামের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। রবার্তো মার্টিনেজ বেলজিয়ামের প্রধান কোচ হলেও অঁরিই দলটির সব পরিকল্পনার দোসর। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে আজ যে দু’টি দেশ খেলছে তার একটি হচ্ছে অঁরি’র জন্মভূমি আর অন্যটি চাকুরীর আবাস। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতেই তাকে নিজ দেশের বিরুদ্ধে যেতে হচ্ছে।
১৯৯৮ সালে প্যারিসের পার্ক ডি প্রিন্সেসে যখন জিদান-দেশ্যমরা বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটা উঁচু করে তুলে ধরেছিলেন, থিয়ের অঁরির বয়স ছিল তখন মাত্র ২০ বছর। ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। যদিও ওই বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের সেরা একাদশে থাকার সুযোগ হয়নি সদ্য কৈশোর পেরুনো তরুণ ফুটবলারটির। সাইড বেঞ্চে বসেই তাকে দেখতে হয়েছে তার পূর্বসূরীরা কিভাবে রোনালদো-দুঙ্গা’র দলকে হারিয়েছিল। ২০০৬ সালে সেই অঁরি জুটি বেধেছিলেন জিনেদিন জিদানের সঙ্গে। এবার তিনি পূর্ণাঙ্গ একজন ফুটবলার। যার পায়ের কারুকাজে ফুল ফোটে সবুজ ঘাসে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনালের হয়ে একের পর এক গোলের বন্যা বইয়ে দেন তিনি। নিজের নজরকাড়া পারফরমেন্সে ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে তুলে আনেন আসরের ফাইনালে। ওই আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের হয়ে ব্রাজিলের বিপক্ষে জয়সূচক একমাত্র গোলটিই করেছিলেন থিয়েরি অঁরি। তখন ফারাসিরা ভেবেছিলো ফাইনালে ইতালিকে হারিয়ে জিদান-অঁরির হাত ধরেই তারা বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলবে। কিন্তু ফাইনালে টাইব্রেকারে শট নেয়ার সুযোগ পাননি অঁরি। তার আগেই তাকে মাঠ থেকে তুলে নেন কোচ রেমন্ড ডমেনেখ। কারণ, পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলেন তিনি। ফ্রান্সও হেরে যায় ইতালির কাছে। এর ঠিক একযুগ পর আবারও বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের হাতছানি অঁরির সামনে। তবে এবার নিজ দেশের হয়ে নয়, বেলজিয়ামের হয়ে। খেলোয়াড় নয়, কোচ হিসেবে। এমনকি প্রধান কোচও নয়, সহকারী কোচ হিসেবে। আর মাত্র দু’টি বাধা পেরুতে পারলেই দুই দশক পর আরও একবার বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিতে চুমু খেতে পারবেন ফ্রান্সের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। তিনি যে এখন বেলজিয়ামের সহকারী কোচ! সামনেই সেমিফাইনাল, এরপর ফাইনাল- স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার দুরত্ব তো মাত্র আর দু’টি ধাপ! কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণের আগে যে বড় এক সমস্যায় পড়ে গেলেন অঁরি! কি করবেন এবার তিনি? রাশিয়া বিশ্বকাপের শিরোপা হাতে তুলে নেয়ার ঠিক আগের ম্যাচে যে নিজ দেশের বিরুদ্ধেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হচ্ছে তাকে! যে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছেন। যে দেশের হয়ে খেলেছেন আরো একটি বিশ্বকাপের ফাইনাল, সেই নিজ দেশ ফ্রান্সের বিপক্ষেই কি না রণপরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে অঁরিকে। সবাই মানেন এবার বেলজিয়ামের এতদুর পথচলার পেছনে অন্যতম অবদান নেপথ্যে থাকা এই সহকারী কোচের। রবার্তো মার্টিনেজ হয়তো বেলজিয়ামের প্রধান কোচ। তার ট্যাকটিক্সের ওপর ভিত্তি করেই সাফল্যের গৌরবগাঁথা রচনা করছে বেলজিয়ানরা; কিন্তু নেপথ্যে থাকা অঁরির অবদান তো কোনো অংশেই কম নয়। বেলজিয়াম তারকা রোমেলু লুকাকু যে এবার বিশ্বকাপের মঞ্চে এসে নিজেকে এত সুন্দর করে মেলে ধরেছেন, তার পেছনের কারিগরও কিন্তু এই অঁরি। কিংবা ইডেন হ্যাজার্ড যে নীরবে-নিবৃতে বেলজিয়ামের সাফল্যের সৌধ নির্মাণ করে চলেছেন, তার নেপথ্যের নায়কও কিন্তু অঁরিই। তিনি ছোট ছোট কিছু পরিকল্পনা সাজিয়ে দিচ্ছেন। যা প্রতিপক্ষের শক্ত দেয়ালের ছিদ্র বের করে কাজে লাগানোর কৌশল শেখাচ্ছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে যেমন তিতের শীশাঢালা প্রাচীরের মত রক্ষণ দেয়ালের কিভাবে ফাঁক বের করতে হয়, সেটা নির্ধারণ করেছিলেন অঁরি। কিভাবে ডানপ্রান্তে প্লেসিং ফুটবল খেলে ব্রাজিল রক্ষণভাগকে দুর্বল করে তোলা যায়, ফ্যাগনার, মার্সেলো কিংবা মিরান্দাকে অন্যদিকে ব্যস্ত রেখে কিভাবে থিয়াগো সিলভাকে একা করে ফেলা যায়, তার সব কৌশল নির্ধারণ করেছিলেন অঁরিই। সেমিতে ফ্রান্সের বিপক্ষে তেমনই কৌশল নির্ধারণ করতে হচ্ছে অঁরিকে। নিজ দেশকে কিভাবে হারাতে হবে, কিভাবে অন্য একটি দেশের হাতে তুলে দিতে হবে বিশ্বকাপ শিরোপা, সে পরিকল্পনাই এখন করতে হচ্ছে সাবেক এই ফরাসি তারকাকে। ফ্রান্সের এই দলটিকে তিনি খুব ভালোভাবেই চেনেন, জানেন। নিজ দেশের ফুটবলারদের খুব কাছ থেকে দেখা ও জানার সুযোগ হয়েছে অঁরির। সুতরাং, তাদের দুর্বলতা বের করা কোনো ব্যাপারই না অঁরির জন্য।
ফ্রান্সের সবচেয়ে নামী দৈনিক লেকিপ পত্রিকায় ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের মধ্যকার সেমিফাইনালকে বলা হচ্ছে দিদিয়ের দেশ্যম বনাম থিয়েরি অঁরির লড়াই। সেখানে কিন্তু বলা হচ্ছে না যে, অঁরির ‘বস’ রবার্তো মার্টিনেজ। বরং উঠে আসছে ইডেন হ্যাজার্ডের ‘ফ্রান্স কানেকশন’। তিনি ছোটোবেলায় বেলজিয়াম সীমান্তের ফরাসি শহরে ভাইয়ের সঙ্গে ট্রেনিং করতে যেতেন। তার বাবার নাম থিয়েরি। প্রিয় ফুটবলার জিদান। বাবার নাম থিয়েরি হলেও এখন বেলজিয়াম দলে হ্যাজার্ডের বাবার চেয়েও বড় ভুমিকায় অঁরি। যার অন্য নাম ‘কিং অঁরি’। নামটা আর্সেনালে সোনার সময়ে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দেয়া। কিন্তু এই কিং’ই যে ধরনের বিপদে পড়েছেন, শেষ কোন বিশ্বকাপে এত বড় তারকা এমন বিপদে পড়েছিলেন কিনা জানা নেই। এক দিকে মাতৃভূমির টান। অন্য দিকে পেশার। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কোনটার জয় হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।