Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পর্কে নতুনত্ব আনবে চীন-নেপাল রেলওয়ে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি গত মাসে বেইজিং সফর করেছেন। নেপালের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য চীনা বিনিয়োগ নিশ্চিত করতেই এই সফরে গিয়েছিলেন তিনি। তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সাথে বৈঠক করেছেন। তারা নেপালের উন্নয়ন প্রচেষ্টার জন্য সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে ২.৪ বিলিয়ন ডলারের আটটি সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সংযোগ, অবকাঠামো এবং জ্বালানি প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘ট্রান্স হিমালয়ান মাল্টিডাইমেনশনাল কানেকটিভিটি নেটওয়ার্ক’। এর একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো চীনের প্রবেশমুখ কেরুং ও নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর মধ্যে রেললাইন স্থাপন।
২০১৬ সালের মার্চে ওলি যখন প্রথমবার বেইজিং সফরে যান, তখন হিমালয় অঞ্চল দিয়ে রেললাইন স্থাপনের ব্যাপারে প্রথম চুক্তি হয়েছিল। পাঁচ বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ভারতীয় অবরোধের কারণে নেপাল চীনের মুখাপেক্ষি হয়েছিল। চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে নেপালের যে গৌরবময় অতীত রয়েছে, সেটি পুণরুদ্ধার করতে পারে এই রেলওয়ে। কিন্তু এর অর্থনৈতিক দিকের চেয়েও কৌশলগত দিকের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বেশি।
চীন-কাঠমান্ডু রেলওয়ে স্থাপিত হলে নেপালের বাণিজ্যের আরও প্রসার ঘটবে এবং ভারতের উপর থেকে তাদের নির্ভরতা কমবে। এতে নয়াদিল্লীর সাথে বাণিজ্যের প্রশ্নে দর কষাকষির সুযোগ বাড়বে কাঠমান্ডুর। চীন অন্যদিকে এর মাধ্যমে উত্তর ভারতে ৪০০ মিলিয়ন মানুষের বিশাল বাজারে সহজে প্রবেশের সুযোগ পাবে। তবে, দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চল দিয়ে রেলওয়ে স্থাপনের খরচ, অর্থায়নের পদ্ধতি এবং প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতার বিষয়গুলো নেপালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে জনপ্রতি দৈনির আয়ের পরিমাণ দেড় ডলারেরও নিচে। বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্টে এ বিষয়গুলোর বিস্তারিত উঠে আসবে।
নেপাল সরকারের কর্মকর্তারা এমনভাবে কথা বলছেন, যাতে মনে হচ্ছে বছর দুয়েকের মধ্যেই এটা নির্মিত হবে। তবে এর সাফল্যের জন্য কাঠমান্ডুর আকাক্সক্ষার সাথে সাথে বেইজিংয়ের সদিচ্ছার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
নেপালে ভারতের বিনিয়োগ প্রকল্প নিয়ে সমালোচনার বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। কারণ অধিকাংশ প্রকল্পেই দশকের পর দশক ধরে বিলম্বিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক বিষয় হলো, বেশ কিছু চীনা প্রকল্পও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে নেপালসহ আরও কিছু জায়গায় ট্র্যাক রেকর্ডের কারণে এই প্রশ্ন উঠছে।
প্রধানমন্ত্রী ওলি রেল চুক্তিকে তাদের অন্যতম প্রধান অর্জন হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছেন। তাছাড়া জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী অবকাঠামো চাহিদা মেটাতে সরকার ব্যর্থ হওয়ায় এই প্রকল্পের সাথে মানুষের আবেগও জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে মৌলিক অবকাঠামোর প্রয়োজনীতার সাথে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক ও ব্রিজের মেরামত এবং ধসে পড়া বাড়িগুলোর পুনর্নিমাণ করা, যেগুলো ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে ধসে গেছে।
চীনের কাছে ঋণ নিয়ে ফাঁদে আটকা পড়ার আশঙ্কাটি নেপালেও রয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় এক সংবাদপত্রকে ওলি এটা স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে, ঋণের ফাঁদের বিষয়টি একটি ‘ভারতীয় ধারণা’ যেখানে ভারত-চীন প্রতিদ্ব›িদ্বতার বিষয়টি উঠে এসেছে।
শ্রীলংকার কৌশলগত হামবানতোতা বন্দরটি নির্মাণের পর সেটির ঋণ পরিশোধে সমস্যা হওয়ায় বন্দরটি চীনা কোম্পানির হাতে তুলে দেয় কলম্বো। চীনা ঋণের ফাঁদের উদাহরণ হিসেবে এটিকে সব জায়গায় ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া নেপালে চীনা ফার্মগুলোর মধ্যে দরদামের পার্থক্য রয়েছে। দরপত্রে জেতার পর ফার্মগুলো শীর্ষ রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের প্রকল্পের খরচ কমানোর জন্য প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। ৩০ মেগাওয়াট শ্যামেলিয়া পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছে। চীনের গেঝুবা গ্রুপ এটি তৈরি করেছে। অতিস¤প্রতি পোখারার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণ ব্যয়ও দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এটা ছিল ১৪০ মিলিয়ন ডলার। ফলে নেপালে চীনের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুন্ন হয়েছে।
চীনা নেতৃত্বের সহায়তায় নেপালের বামপন্থী রাজনীতিবিদরা ২০১২ সাল থেকেই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীন-ভারত-নেপাল ত্রিদেশীয় সহযোগিতার কথা বলে আসছে। এখন চীনারাও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। বেইজিংয়ে এপ্রিলে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গয়ালির সাথে বৈঠকের সময় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই চীন-ভারত-নেপাল অর্থনৈতিক করিডোরের কথা বলেছিলেন।
প্রস্তাবিত ট্রান্স-হিমালায়ন পরিবহন নেটওয়ার্কটি ত্রিদেশীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে সাহায্য করবে। ভারত দক্ষিণ এশিয়াকে তার প্রভাববলয়ের অংশ মনে করে এবং তারা এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোন সাড়া দেয়নি। উল্টা এটাকে তারা এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখছে। তবে, ভারতের সহায়তা ছাড়াও নেপাল ও চীন তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে পারে। বেইজিংয়ের নজর যে মুহূর্তে উত্তর ভারতের বাজারের উপর, নয়াদিল্লী তখন নেপালের বাজারে তাদের আধিপত্য হারানোর ভয়ে শঙ্কিত। নেপালের জিডিপি ২৬ বিলিয়ন ডলারেরও কম। ২০১৭ সালে নেপালের সাথে ভারতের বাণিজ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেলওয়ে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ