বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
বিশ্ব ফুটবলের দুই মেরু লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপ। মাঠের লড়াইয়ে নিজেরা যে সেরা সে স্বীকৃতি ধরে রাখতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। এবার রাশিয়া বিশ্বকাপের আসরে রাউন্ড অব সিক্সটিন ও কোয়ার্টার ফাইনালে গোটা বিশ্বকে ইউরোপ ভালো করেই ম্যাসেজ দিয়েছে যে ফুটবলের রাজত্বে তারাই ছড়ি ঘোরাবে।
লাতিন আমেরিকাকে অনেক পেছনে ঠেলে দিয়েছে ইউরোপ। বিশ্বকাপ আসর শুরুর আগে পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র অনেক অঙ্ক করা হয়েছে। সমর্থক-ভক্ত ও ফুটবল বিশেষজ্ঞরা আগাম অনেক বাণী দিয়েছিলেন। কিন্তু সব হিসাব-নিকেশকে থুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে ইউরোপ। প্রথম রাউন্ড থেকেই চাপা কান্নার শুরু। কোয়ার্টার ফাইনালে লাতিনের দুই দেশ ব্রাজিল ও উরুগুয়ের কফিনে পেরেক ঠুকে দিয়েছে ইউরোপেরই দুই দেশ বেলজিয়াম ও ফ্রান্স।
১৯৩০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৮৪ বছরে বিশ্বকাপের আসর বসেছে ২০ বার। প্রথম আসর বসেছিল লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়েতে। আর চলতি রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে ২০তম আসরের লড়াই হয়েছিল লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ আসরে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেই লাতিন আমেরকিার মাটি থেকে ইউরোপের অন্যতম ফুটবল পরাশক্তি কাপ উড়িয়ে নিয়ে এসেছিল জার্মানিতে। সেই কাপ ইউরোপের হাত থেকে লাতিন আমেরিকায় নিয়ে যেতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তিন চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে।
লাতিন আমেরিকার তিনটি দেশ মিলে বিশ্বকাপ ফুটবলে ৯ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৯৩০ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত ৪০ বছর ট্রফির নাম ছিল জুলেরিমে কাপ। ব্রাজিল ১৯৭০ সালে তৃতীয় বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে চিরদিনের জন্য জুলেরিমে কাপ নিজেদের করে নেয়। সে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে যায় বিশ্বকাপ ট্রফির নাম। নতুন নাম ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ। আর নতুন নাম চালুর পর ১৯৭৪ সালে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয় জার্মানি।
চ্যাম্পিয়নের পরিসংখ্যান বলছে, ব্রাজিল ৫ বার, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে ২ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অর্থাৎ লাতিন আমেরিকার আর কোন দেশ ফুটবলে রাজত্ব করার জন্য উঠে আসতে পারেনি। আর এখানেই লাতিনকে জোড়ালো শটে পেছনে ঠেলে দিয়েছে ইউরোপ। ইতালি ও জার্মানি চার বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ইাউরোপের এই দু’টি দেশের বাইরে আরো তিনটি দেশ শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। একবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও স্পেন।
রাশিয়া বিশ্বকাপের আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে লাতিনের প্রতিনিধিত্বকারী দুই চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ও ব্রাজিল ছিটকে পড়েছে। ফলে বিশ্ব ফুটবলের প্রথম চারটি স্থান এখন ইউরোপের দখলে। দুই চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স কি ফাইনালে মুখোমুখি হবে? নাকি চ্যাম্পিয়নের নামের তালিকায় নতুন করে নাম লেখাবে ইউরোপের দু’টি দেশ বেলজিয়াম নাকি ক্রোয়েশিয়া?
বিশ্ব ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে লাতিন আমেরিকা সিঙ্গেল ডিজিট অর্থাৎ ৯ বার রাজত্ব করেছে। অপরদিক বিশ্ব ফুটবলে ছড়ি ঘোরানোয় লাতিন আমেরিকাকে পেছনে ফেলে ডাবল ডিজিটে পা রেখে অনেক দূর এগিয়ে গেছে ইউরোপ। এবারের কাপ ইউরোপের ঘরেই যে থাকছে সেটি নিশ্চিত হয়ে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। আর এ হিসেব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়নের সংখ্যায় ডাবল ডিজিটে আরেকটু সামনের দিকে এগিয়ে লাতিন আমেরিকাকে তিন ধাপ পিছনে ফেলে ইউরোপের পাশে ১২ সংখ্যাটি অনেক উজ্জল দেখাবে। আগামীতে ইউরোপকে স্পর্শ করা কিংবা টপকাতে লাতিন আমেরিকার কত বছর লাগবে? এ প্রশ্নের জবাব পেতে ফুটবল প্রেমিকদের অপেক্ষায় তো থাকতেই হবে। সেই অপেক্ষার পালা কত যুগ তা কেউই বলতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।