Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালদ্বীপের বিরোধী ঐক্যে ফাটল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে হারিয়ে দিতে মালদ্বীপের বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে বহু প্রতীক্ষিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল জুনের শেষ দিকে। আইনগত প্রতিবন্ধকতা থাকায় সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ নির্বাচনে তার প্রার্থিতা প্রত্যহার করে নেন। তার স্থানে জয়েন্ট অপজিশন প্রার্থী হিসেবে মালদিভিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এমডিপি) সিনিয়র পার্লামেন্ট সদস্য ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিকে প্রার্থী করা হয়।
এই বিরোধী ঐক্যে এই সমঝোতাও হয়, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তথা রানিং-মেট নির্ধারণ করবে জসিম ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন অপর প্রধান বিরোধী দল জমহুরি পার্টি। কিন্তু জুলাইতে এসে জয়েন্ট অপজিশনের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়। জোটের বৃহত্তম দল এমডিপির অনুমোদিত অভিন্ন ইস্তেহার নিয়ে মতানৈক্য দেখা যায়। জসিম ইব্রাহিমের সর্বকনিষ্ঠ স্ত্রী আইসাথ নাহুলাকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন নিয়েও দেখা দেয় মতভেদ। ওই পদের জন্য আগ্রহী আরো অনেকে।
ইসলামপন্থী আদালত পার্টি (এপি) জানিয়েছে, ১০০ ভাগ মুসলমানের দেশে রানিং মেট হিসেবে একজন নারীকে গ্রহণ করা ‘চরম কঠিন’ কাজ হবে। সলি নিজেও তার রানিং মেট হিসেবে কোনো নারীকে মনোনীত করার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন। ফলে মনে হচ্ছে, রক্ষণশীলদের ভয়ে তারা আপত্তি জানাচ্ছেন।
এমডিপিতেও সলিকে প্রার্থী করা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। কারণ সলিকে এক শর্তে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন নাশিদ। তা হলো, শেষ মুহূর্তেও যদি নাশিদের ওপর থাকা বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়, তবে সলিকে তার অনুকূলে পদত্যাগ করতে হবে। নাশিদের এই শর্ত দেওয়ার কারণ, সলি পদত্যাগ করবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়।
মনে রাখা দরকার, ২০০৮ সালে মালদ্বীপের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ দিয়ে নাশিদ তার গ্রুপের অন্যান্য দলকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারী মামুন আবদুল গাইয়ুমকে পরাজিত করার পর তিনি নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু গাইয়ুমকে পরাজিত করার পর নাশিদ ওই প্রতিশ্রুতির কথা অবলীলায় ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দেড় বছর পর নতুন নির্বাচন হবে। কিন্তু ওই প্রতিশ্রুতি কোনো দিনই রক্ষা করা হয়নি।
সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে নাশিদের ১৩ বছরের কারাদন্ড হওয়ায় তিনি এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। তিনি মেডিক্যাল প্যারোলে কারাগার থেকে বের হয়ে যুক্তরাজ্যে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবে তিনি আশা করছেন, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে দেবেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ভারত যদি চাপ সৃষ্টি করে, তবে তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহার সম্ভব। ভারত ইতোমধ্যেই বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ইয়ামিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আবার নাশিদ বিধিনিষেধ থেকে মুক্তি পেয়ে যান, তবে সলির প্রচারণা ম্লান হয়ে যাবে।
এদিকে বুধবার এমডিপির খসড়া ইস্তেহারে জমুহুরি পার্টি নাখোশ হয়েছে বলেই মনে হয়েছে। এতে থাকা ১১টি প্রতিশ্রুতির সাথে অনেকেই একমত হতে পারছে না। আবার জসিমের স্ত্রীকে রানিং মেট করা না হলেও জটিলতা আছে। এই বিজনেজ টাইকুনই বিরোধী শিবিরের প্রধান অর্থ যোগানদাতা। স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে, বিরোধী দলগুলোর মধ্যে আলোচনার অভাব রয়েছে।
বিরোধী শিবির যখন নেতৃত্ব ইস্যুতে বিভেদে জর্জরিত, তখন প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন প্রগ্রেসিভ পার্টি অব মালদিভস (পিপিএম) জানিয়ে দিয়েছে, ইয়ামিনই তাদের প্রার্থী। ইয়ামিন অ্যাটল থেকে অ্যাটলে প্রচারণার কাজ করে চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নানা অবকাঠামো উদ্বোধন করছেন। তিনি আগস্টের মধ্যে মালে ও হালহামালের মধ্যকার সেতু নির্মাণকাজ শেষ করতে বলেছেন। তিনি সব স্থানেই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার কথাও বলছেন ইয়ামিন। ১০০ ভাগ মুসলিম দেশ মালদ্বীপে অ-মুসলিম কোনো প্রথা কায়েম করা ঠিক নয় বলেও জানাচ্ছেন তিনি।
এদিকে পার্লামেন্ট বয়কট করে আসছে মালদ্বীপের বিরোধী দলগুলো। তারা ইয়ামিনের সবকিছু গুঁড়িয়ে দেওয়ার নীতির প্রতিবাদ করতে এই পন্থাই বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এতে করে পার্লামেন্ট দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর তা দুর্বল হয়ে পড়া মানে মালদ্বীপের একটি প্রতিষ্ঠানই দুর্বল হয়ে পড়া।



 

Show all comments
  • কামরুল ৯ জুলাই, ২০১৮, ৪:২৪ এএম says : 0
    দেশের উন্নতির জন্য ঐক্য খুব জরুরী
    Total Reply(0) Reply
  • MD.MONIR HOSSEN = ROWMARI - SHOULMARI ৯ জুলাই, ২০১৮, ৪:৩০ পিএম says : 0
    ঐক্য খুব জরুরী
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালদ্বীপ

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ