Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদ কমছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০১৮, ১:৩২ এএম

রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোর সম্পদ কমেছে বিগত ২৪ বছরে ২৮ শতাংশ। ১৯৯৩ সালে ব্যাংক খাতের মোট সম্পদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ সম্পদের শেয়ার ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের। দীর্ঘ ২৪ বছর পরে ২০১৭ সালে এসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদ শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ২৭ শতাংশে। বাকি ৭৩ শতাংশ সম্পদ বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের দখলে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ওপর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ঋণের নামে এসব ব্যাংক থেকে টাকা লুট করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করছেন তারা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা বলছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি গ্রাহক নয়, বড় গ্রাহকদের কাছেই যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের বড় অংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের প্রায় অর্ধেকই দেয়া হয় বড় গ্রাহককে। কিন্তু সময়মতো টাকা ফেরত না আসায় বড় এসব ঋণ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় ব্যাংকগুলো। বড় গ্রাহকদের নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দুশ্চিন্তার কথা স্বীকার করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্টরাও। যদিও বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংকেও বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ কমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোর। তবে ২০১০ সালের পর থেকে এ খাতের ব্যাংকগুলোর সম্পদ শেয়ার স্থিতিশীল ছিল।
তথ্যমতে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বর্তমানে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদ শেয়ার সবচেয়ে বেশি, যা প্রায় ৭৪ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে শ্রীলঙ্কা। ব্যাংক খাতে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদ শেয়ার ৫৯ শতাংশ। এছাড়া ভুটান, মালদ্বীপ এবং ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদ শেয়ার ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদ শেয়ার অনেক কম। তবে বাংলাদেশের চেয়ে কম সম্পদ রয়েছে নেপাল ও পাকিস্তানে। এছাড়া সাব-সাহারান আফ্রিকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদও বাংলাদেশের চেয়ে কম।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ২৪ বছরে ব্যাংক খাতে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। একসময় রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলো একতরফাভাবে ব্যবসা করেছে। তবে বর্তমানে নতুন নতুন অনেক বেসরকারি ব্যাংক এসেছে। এসব ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবসায় ভাগ বসিয়েছে।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, একসময় সব আমানত ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। তখন এত বেসরকারি ব্যাংক ছিল না। তবে এখন নতুন নতুন অনেক বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদ শেয়ার কমেছে।
তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি এবং বিদেশি মিলিয়ে মোট ৫৭টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক। ৯টি বিদেশি ব্যাংক এবং বাকিগুলো বেসরকারি খাতের ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংক খাতে প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। যার অধিকাংশই বেসরকারি ব্যাংকের। এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকের চেয়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো দ্রæতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশিই রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ছয় ব্যাংকের। চলতি বছরের মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ সময় ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে, বেসরকারি খাতের ৪০টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ছয় শতাংশ। এ সময়ে মোট ঋণের স্থিতি ছয় লাখ ২১ হাজার ২৯০ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের নভেম্বরে আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাবসহ খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতির বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ। বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বশেষ অবস্থা জানতে ওই সময় অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল। এসব বৈঠক শেষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আইএমএফ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ